ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মারিয়ার নতুন জামা

ফজিলা খাতুন

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ৩০ মার্চ ২০২৩

মারিয়ার নতুন জামা

ব্যস্ত রাস্তা আর জনাকীর্ণ গলির মাঝে যেখানে কোলাহল কখনো কমে না

ব্যস্ত রাস্তা আর জনাকীর্ণ গলির মাঝে যেখানে কোলাহল কখনো কমে না, অনেক ময়লা জমে আছে ঠিক তার পাশেই মারিয়াদের ছোট একটা টিনের ঘর। 
প্রতিদিন সকালে ওদের রুটিন হলো উস্কো খুস্কো চুল, গায়ে ময়লা একটা জামা, পায়ে সেলাই করা সেন্ডেল এক হাতে একটা বই আর অন্য হাতে একটা পাউরুটি বা বিস্কিট খেতে খেতে মক্তবে যাওয়া, আর ওর মা অন্যের বাসায় কাজে যায়, অন্যের বাসায় সারাদিন কাজ করে রাতে মারিয়ার জন্য খাবার নিয়ে বাড়িতে আসে সেই খাবার মা ও মেয়ে দুজনে ভাগ করে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে এভাবে চলতে থাকে তাদের সংসার।
রমজান মাস চলতেছে মাত্র কয়েকদিন পরে ঈদ এর মধ্যে মারিয়া বায়না ধরেছে নতুন জামার, নতুন জামা কিনে না দিলে ও বাড়িতে থাকবে না মারিয়ার মা বলল মানুষের বাসায় কাজ করে ভাত খাই তোকে কিভাবে নতুন জামা কিনে দিবো, এই বলে কাজে চলে গেছে। তবুও মায়ের মন বাসায় কাজ করছে আর ভাবছে কোনোদিন বাপ মরা মেয়েটাকে ঈদে একটা নতুন জামা দিতে পারিনি। বাসার আপাকে বলে দেখি। কাজ শেষে বাসার আপার সামনে গিয়ে বলল আপা আমার মেয়েটাকে কোনোদিন ঈদে একটা নতুন জামা কিনে দিতে পারিনি।
তাই আমার মেয়েটা বায়না ধরেছে এবার ঈদে নতুন জামা নিবে, গরিব মানুষ আপনার বাসায় কাজ করে ভাত খাই জামা কিনে দেওয়ার মতো টাকা নেই, আপনি যদি আমার মেয়েটাকে একটা নতুন জামা কিনে দিতেন আমার মেয়েটা অনেক খুশি হতো। আল্লাহ আপনার সওয়াব দেবে।
এই কথা বলে মারিয়ার মা কাজ থেকে ফিরে রাতে শুয়ে পড়ল রাতে হঠাৎ প্রচণ্ড জ্বর গা থরথর করে কাঁপছে সকালে আর কাজে যেতে পারেনি, সারাদিন জ্বরে বিছানায় শুয়ে আছে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাওয়ার মতো কেউ নেই, কারণ মারিয়ার জন্মের পর তার বাবা রোড অ্যাকসিডেন্টে মারা যায়। একমাত্র মারিয়াকে নিয়ে কষ্টে দিন পার করছে।
এদিকে সারাদিন চলে গেল পেটে ভাত জোটেনি রাতে প্রচণ্ড খিদায় মারিয়া কান্নাকাটি শুরু করেছে ঘরে কোনো খাবার নেই, এভাবে না খেয়ে রাত কাটিয়ে গেল, ক্ষুধার জ্বালা আর সহ্য হয় না তাই সকাল হতে না হতেই মাকে না বলেই অবুঝ মারিয়া বাইরে বের হয়, এত সকালে কোনো মানুষ বা দোকান খোলা নেই, পেটের ক্ষুধা নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একটা হোটেলের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে খাবারের দিকে তাকিয়ে রইল।
কাউকে কিছু বলতে পারছে না এভাবে না খেয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল মারিয়া। ওর কান্নার আওয়াজ শুনে হোটেল থেকে এক ভদ্রলোক বেরিয়ে এলো মারিয়ার হাত ধরে বলল কি হয়েছে তোমরা কাঁদছো কেন? তখন মারিয়া বললÑ আমি কালকে থেকে কিছু খাইনি, ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করল তোমার বাবা কি করে, মারিয়া বলল আমার বাবা নেই, মা অনেক অসুস্থ এই কথা শুনে ভদ্রলোকের মায়া হলো মারিয়ার হাতে কিছু খাবার দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিল।

বিকেল বেলায় হঠাৎ শরীফ সাহেব ও তার স্ত্রী মারিয়াদের বাড়িতে হাজির সঙ্গে মারিয়ার জন্য নতুন জামা, মারিয়ার মায়ের জন্য ওষুধ, কাপড় ও ঈদের সব বাজার নিয়ে, শরীফ সাহেবের স্ত্রী বলল তুমি কাজে যেতে পারোনি আমি খবর নিয়ে দেখেছি তুমি অসুস্থ তাই তোমাকে দেখতে এলাম। বাসার আপাকে দেখে মারিয়ার মা বলল এসবের কি দরকার ছিল আপা, শরীফ সাহেব বলল এটা তো আমাদের দায়িত্ব। মারিয়া ঈদের জামা পেয়ে অনেক খুশি।
আমাদের বাড়ির আশপাশে এমন অনেক মানুষ আছে, আসুন আমরা তাদের পাশে দাঁড়াই, তাদের দুঃখ কষ্ট ভাগাভাগি করি।

×