ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অণু গল্প ॥ নাটের গুরু

নুশরাত রুমু

প্রকাশিত: ২১:৩৬, ২ মার্চ ২০২৩

অণু গল্প ॥ নাটের গুরু

দরজা খোলার শব্দ হলেও শিলা উঠল না

দরজা খোলার শব্দ হলেও শিলা উঠল না। জানে এ সময় জামি আসবে। সে সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছে মোবাইল নিয়ে। জামি ওকে কি যেন বলল, শিলা ফোন নিয়ে মশগুল তাই শুনতে পায়নি। কিছুক্ষণ পর আচমকা মোবাইলটা হাত থেকে কেড়ে নিল জামি। দড়াম করে রাখল টেবিলে।
তোমার  একটা সংসার আছে এটা কেন ভুলে যাও?
না আমি ভুলিনি। তোমার মতো রোবটের সংসারে আছি এটা ভোলা অনেক কঠিন। এভাবে কেউ হাত থেকে কিছু নেয়?
অন্যকিছু নয় শুধু মোবাইলটাই এভাবে নিতে হয়। কতক্ষণ হলো এসেছি। কথা বলছি তুমি শুনতেই পাচ্ছ না। আরে তুমি কি বলবে  আমি জানি। টেবিলে সব রেডি। 
ঝগড়া দিয়েই বিকেলটা শুরু হয় ওদের।  জামি একটা প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করে। সারাদিন অফিসেই ব্যস্ত। বাড়ি ফিরলেও অফিসের একগাদা কাজ নিয়ে আসে। সারাদিন একা একা শিলার সময় কাটে না। তাই মোবাইল ফোন চালানো শুরু করল। মনের অজান্তে কবিতা লেখা শুরু করেছে সে। মোবাইলে বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে জানতে পারল পত্রিকায় লেখা পাঠানো যায়। হঠাৎ একদিন পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশ হতেই নেশার মতো হয়ে গেল তার। পত্রিকার মেইলে লেখা পাঠিয়ে সেটা ছাপা হলো কিনা তার অপেক্ষায় দিন কাটে।

পত্রিকায় লেখা অনেক লেখকের সঙ্গে পরিচয় হলো।  শিলা দেখল এ এক বিশাল রাজ্য। এসবের দুনিয়ায় এসে তার সময় কিভাবে চলে যায় সে টেরই পায় না। তবে উল্টো ব্যাপারও আছে। আজ ম্যাসেন্জারে একজন লেখক একটা পত্রিকার মেইল এড্রেস চাইল তার কাছে। শিলা ওর আইডিতে ঘুরে এসে বুঝল সে প্রচুর গল্প লেখে। সে ভাবল লেখকের কাছে লেখা বিষয়ক হেল্প চাইবে। কিন্তু লেখক মশাই বড় ব্যস্ত, নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে আর ম্যাসেন্জারে এলো না। এমনকি শিলা যে তাকে মেইল এড্রেস দিল তার বিনিময়ে সামান্য ধন্যবাদটুকু দেওয়ারও সময় নেই তার।

বুঝল ভার্চুয়াল জগৎ এমনই। শিলার মনে হলো তার সংসারে মন দেওয়া উচিত। জামি একা একা খাবার খাচ্ছে। শিলা গিয়ে তার পাশে বসল। হা করে খেতে চাইল। জামি পাত্তা দিল না। প্লেটের দিকে তাকিয়ে নীরবে খেতে লাগল। জামির এই উদাসীনতায় শিলাকে ভার্চুয়াল জগতে ঠেলে দিয়েছে। শিলার যে একটা মন আছে জামি তার দাম দেয় না। এত পড়াশোনা করেও চাকরি করার অনুমতি সে পায়নি। অভিমান আর অভিযোগেও কোনো লাভ হয়নি। তাই সে এখন রুটিন বাঁধা কাজ আর মোবাইল নিয়েই পড়ে থাকে। ওদিকে মহাবিরক্তিতে খেতে বসে জামি ভাবল, আর সে তার প্রতি অবহেলা সহ্য করবে না। ইদানীং রাতেও শিলা মোবাইল হাতে বসে থাকে।

জামি সারাদিন কাজ করে ফেরে, কোথায় তার যতœ নেবে তা না তিনি লেখক হওয়ার বাসনায় আছেন। পাশে বসে শিলা ওকে আরেক পিস মাছ দিতে চাইল। খাওয়া শেষ তুমি এখন এলে মাছ দিতে, রেগে গিয়ে খাওয়া ছেড়ে উঠে গেল জামি। দ্রুত বেডরুমে গিয়ে চিৎকার করে শিলার মোবাইলটা খুঁজতে লাগল। কোথায় সেই নাটের গুরু!  আজ তাকে ভেঙে তবেই সে শান্তি পাবে। শিলা কিচেনের বারান্দায় গিয়ে হাসছে। মেজাজ দেখে শিলা আগেই মোবাইলটা চালের ড্রামে লুকিয়ে ফেলেছে। ঠিক করল ওর সামনে আর ফোন চালাবে না। সংসারে একটু শান্তি ফিরুক। মনে মনে বলল তুমি চলো পাতায় পাতায় আর আমি চলি শিরায় শিরায়।

×