নিকি জিওভানীর কবিতা
নিকি জিওভানী আমেরিকার সমসাময়িক কবিদের মধ্যে অগ্রগণ্য। জন্ম তার টেনেসির নক্সভিলে ১৯৪৩ সালের ৭ জুনে। বেড়ে ওঠে ওহাইও রাজ্যের সিনসিনাটিতে। তরুণ বয়সে তিনি নাগরিক ও কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার আদায়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তিনি দেখেন মার্টিন লুথার কিং এর মৃত্যু। এ ছাড়া ম্যালকম এক্স, রবার্ট কেনেডি প্রমুখদের হত্যাকাণ্ড তার ভেতর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
এ সময় ১৯৬৮ তে ইষধপশ ঋববষরহম, ইষধপশ ঞধষশ ও ইষধপশ ঔঁফমবসবহঃ তার দুটো কাব্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ২৭ এর উপর। তিনি লিখেছেন শিশু কিশোরদের জন্য। তিনি তার আত্মজীবনীতে বলেছেন, কবি হতে আমি চাইনি। তবে সব কিছুকে গভীরভাবে দেখতে শিখেছি। এই গভীরভাবে দেখা মানেই কবি হয়ে ওঠা। তিনি খুব ভাল বক্তা। শিক্ষকতা করেছেন তিনি দীর্ঘদিন। ক্রিয়েটিভ রাইটিং তার বিষয়।
ভার্জিনিয়া টেকে যে নৃশংস হত্যাকা- ঘটায় ২০০৭ এ সে ছিল তার ছাত্র। নিকি তার ভাবসাব খারাপ দেখে অভিযোগ করেছিলেন। তখন পর্যন্ত সে এমন কিছু ঘটায়নি যার জন্য পুলিশ তাকে আটক করতে পারে। তিনি বিশ্বে ঘটে যাওয়া সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার।
তিনি তিনবার লাভ করেন ঘঅঅঈচ ইমেজ এওয়ার্ড এবং প্রথম পান জড়ংধ চধৎশং ডড়সধহ ড়ভ ঈড়ঁৎধমব এওয়ার্ড, তিনি পেয়েছেন ধহফ যড়ষফং ঃযব খধহমংঃড়হ ঐঁমযবং পদক কবিতায় অসাধারণ অবদান রাখার জন্য।
‘মায়েরা’ কবিতায় বলেছেন, মায়েদের যেন দ্বায় শুধু কষ্ট বুকে চেপে হাসতে জানা। এই কবিতায় মাকে তুলে ধরার জন্য স্যামসন মীথের কথা এনেছেন। স্যামসন বাইবেলের একটা চরিত্র। তাকে পাঠানো হয়ে শক্তিমত্তা দিয়ে নির্যাতিত ইহুদী জাতিগোষ্ঠীকে উদ্ধারের জন্য। এই স্যামসনের ছিল আজানুলম্বিত চুল।
মায়েরা
সেই শেষবার যখন মাকে দেখতে আমি বাড়িতে
আমরা চুমু খেয়েছিলাম
কিছু সুখ-দুঃখের স্মৃতিচারণ হয়েছিল
তারপর একটা উষ্ণ ও স্বস্তির নীরবতা টেনে আমাদের চারপাশে
পড়ছিলাম নিজেদের পছন্দের বই।
মনে পড়ে সেই প্রথমবার
আমি মগ্ন হয়ে দেখলাম তাকে
বার্নস এভিনিউয়ের তিন রুমের এপার্টমেন্টে আমাদের বাস
মা সব সময় বসে থাকতো অন্ধকার করে রাখা ঘরে
আমি ঠিক জানি না কীভাবে আমি জেনেছি
ঐ রাতে যে ঘটনা ঘটেছিল
এটা হতে পারে হয়ত এ কারণে যে আমি সব সময় রাতের মানুষ
অথবা হয়ত আমি ভিজিয়েছিলাম বিছানা
মা বসেছিল চেয়ারে
ঘরটা নেয়ে উঠেছিল জোছনার আলোয়,
ভেসে গিয়েছিল বাড়িওয়ালাদের ভাড়া দেয়া বাড়ির জানলার কাঁচ দিয়ে
যেখানে শিশুরা কতকিছু লাগিয়ে রাখতে ভালবাসে
হয়ত সিগারেট হাতে ধরা ছিল তার হয়তো না
চুল ছিল তার হাঁটু পর্যন্ত লম্বা আর ঘন কালো
তাকে দেখে আমার ভেতরে স্যামসন মীথ আরও দৃঢ়মূল হয়েছিল
আমার নিশ্চিত মনে পড়ে আমি যে হেলান দিয়েছিলাম দরজার পাশে
আমি মনে মনে ভাবছিলাম: কী অপরূপা, অনন্যা রমণী!
খুব আকুল হয়ে অপেক্ষা করে সে
হয়তো বাবার জন্য কখন ফিরবে ঘরে রাতের কাজ সেরে
অথবা একটা স্বপ্নের জন্য যেখানে ফিরে আসার কথা ছিল।
‘এখানে আসো’ মা বললো ‘একটা কবিতা শেখাই তোমাকে:
আমি চেয়ে দেখি চাঁদ
চাঁদ চেয়ে দেখে আমাকে
স্রষ্টা মঙ্গল করুক চাঁদের
স্রষ্টা মঙ্গল করুক আমার’
এই কবিতাটা আমার ছেলেকে শিখিয়েছিলাম
সে আবৃত্তি করে শুনিয়েছিল তার সন্তানের মাকে।
বলে রাখি এটা শিখে রাখা যেন আমাদের জন্য খুবই জরুরী
যেন আনন্দ ধারণ করতে পারি যেন আমরা কষ্ট বয়ে চলতে পারি স্বচ্ছন্দে।