ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিন্দু বিসর্গের দ্বন্দ্ব

প্রকাশিত: ২১:০৪, ২০ আগস্ট ২০২১

বিন্দু বিসর্গের দ্বন্দ্ব

বাল্যবিধবা পিসিমাই জিতেনের সংসারে আসল কর্ত্রী। সকালের জলখাবার, দুপুরের রান্না, রাতের আয়োজন সব ক্ষেত্রেই পিসিমার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। জিতেনের মা, স্ত্রী, ছেলেমেয়ে ও ছোট ভাই; পিসিমার কর্তৃত্বপরায়ণতা নিয়ে কারোরই কোন দ্বিমত নেই। পিসিমা ছাড়া এ বাড়িতে কেউ কিছু বোঝেন না। এ নিয়ে প্রতিবেশীদের মধ্যেও মাঝেমধ্যে হিংসে হয়। জিতেনদের বাড়ির পুরনো মাটির ঘরেই পিসিমার বসবাস এবং পিসিমা যখন বাল্যবিধবা হয়ে এ বাড়িতে আসেন, তখন আশি ভরি স্বর্ণ-রুপার গহনা সঙ্গে নিয়ে আসেন। আজ পিসিমা বয়োবৃদ্ধ। বাড়ির কাজকর্ম তেমন করতে পারেন না। এখন তার কর্তৃত্বপরায়ণতায় ভাটা পড়েছে কিছুটা-একদিন জিতেন বলল, পিসিমা, তুমি তো অনেকদিন আমাদের সঙ্গে থাকলে। পিসিমা কিছু না বুঝেই বললেন, এ কথা কেন জিতেন? আমার ছেলেমেয়েরা বড় হচ্ছে। তাই খরচও বাড়ছে। বুঝতেই তো পারছ...। এই হচ্ছে কাঞ্চন রানী দত্তের গল্প। তার গল্পের বইয়ের নাম-‘বিন্দু বিসর্গের দ্বন্দ্ব’। পিসিমাই গল্পের মূল চরিত্র। শুধু বয়স হওয়ার জন্যই যে আজ এ বাড়ির মানুষ পিসিমাকে দেখতে পারে না, বিষয়টা তা নয়; এখানে আরেকটা গল্প আছে। যাকে বলে গল্পের ভেতরে গল্প। আর তা হলো-ওই যে বললাম, পিসিমা এ বাড়িতে আসার সময় প্রায় আশি ভরি স্বর্ণ ও রুপার গহনা নিয়ে এসেছিলেন। যা তার থাকার ঘরের মেঝেতে মাটির হাঁড়িতে ভরে পুঁতে রাখা হয়েছিল। যা শুধু জিতেনই জানতেন। একদিন বাড়িতে ডাকাত পড়েছে বলে, জিতেন তার পিসিমার ঘর থেকে সমস্ত গহনা নিয়ে নেয়। জিতেন মুখোশ পরা থাকলেও পিসিমা তাকে চিনতে ভুল করেননি। ডাকাত বাড়ির কারও কোন ক্ষতি করেনি, শুধু পিসিমার ঘর সম্পূর্ণ এলোমেলো। তার গায়ে অল্পকিছু আঘাতের চিহ্নও ছিল। তবুও পিসিমা জিতেনকে বললেন, জিতেন, তোর শরীরে অনেক লেগেছে, তাই না? জিতেন বলল, পিসিমা, শরীর থেকে মনে বেশি লেগেছে। এই হচ্ছে গল্প-একাদশী তিথি। কাঞ্চন রানীর মুন্সীয়ানা। কাঞ্চন রানী দত্তের আরেকটিগল্প- ‘বিন্দু বিসর্গের দ্বন্দ্ব’। এখানে বাবা মেয়ে, মানে মিথিলার কোনো মতামত ছাড়াই তাকে বড়বাড়ি, দালান দেখে বিয়ে দেন। কিন্তু মিথিলার ছিল সজীবের সঙ্গে গভীর প্রেম। মিথিলা সজীবকে বলল, আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। সজীব মিথিলাকে ঘর বাঁধার উদ্দেশ্যেই ঘর ছাড়তে বলেছিল। কিন্তু মিথিলা তার বাবর সম্মানের দিকে চেয়ে সজীবকে ফিরিয়ে দিয়ে সে চলে গেল বড়বাড়ি-দোতলার বউ হয়ে। সজীবও এসআইয়ের চাকরি নিয়ে চলে গেলে অন্য শহরে। কিন্তু বিয়ের ক’দিন পরই মিথিলা দেখল, তার স্বামী প্রতি রাতে দেরি করে বাড়ি ফেরে। মিথিলা বাধা দিলে, স্বামী বলে, তোমার সমস্য হলে- তুমি গিয়ে তোমার বাপের বাড়ি থাকো। এদিকে জামাইষষ্ঠির সময় হয়ে এলো। মিথিলা তার মাকে চিঠি লিখলো, মা, তোমার জামাই বাবুকে জামাইষষ্ঠিতে চিঠি দিয়ে দাওয়াত দিতে হবে। নইলে সে আসবে না। চিঠি পেয়ে মা তাড়াতাড়ি জামাই বাবুকে টিফি লিখলেন, আসতে বললেন জামাইষষ্ঠিতে। সময় ঘনিয়ে এসেছে। সবাই সাড়ম্বরে জামাইকে বরণ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। পাড়া-প্রতিবেশী সবাইকে দাওয়াত দেয়া হলো। কিন্তু জামাইষষ্ঠির দিনে জামাই আর আসছেন না। হঠাৎ থানা থেকে এসআই সজীবের কাছে ফোন এলো, একজন ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। আপনি দ্রুত থানায় আসুন। থানায় এসে আনাসিকে দেখে সজীবের চক্ষু চড়কগাছ। কাকে দেখল সে? আসামির বাড়ির লোকে খবর দেয়া হয়েছে? সজীবের তীব্র কণ্ঠস্বর। জি স্যার। এমন সময় খোলা চুলে, শাড়ির আঁচল মাটিতে গড়াতে গড়াতে থানায় ছুটে এলো মিথিলা। সজীবের চোখে কোখ রাখার সাহস তার হলো না। নিজেকে আজ ভীষণ নিকৃষ্ট মনে হলো মিথিলার।...এই হলো কাঞ্চন রানী দত্তের গল্প। যার পরতে পরতে নাটক, ব্যথা ও বেদনা। নীতিকথা ভরে আছে কাঞ্চন রানী দত্ত গল্প-‘বিন্দু বিসর্গের দ্বন্দ্ব’। বইটি প্রকাশ করেছে বইপুস্তক প্রকাশন। প্রকাশকাল : ২০২১। চমৎকার প্রচ্ছদ করেছেন নিয়াজ চৌধুরী তুলি। চার ফর্মার এ বইটির দাম মাত্র ১৮০ টাকা। বইটি আপনার সংগ্রহকে সমৃদ্ধ করবে। আমরা বইটির বহুল প্রচার ও প্রসার কামনা করছি। মৃধা আলাউদ্দিন
×