ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পর্যটনের স্বর্গে বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে শিল্পায়ন

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:১০, ২৪ মে ২০২৫

পর্যটনের স্বর্গে বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে শিল্পায়ন

ছবি: সংগৃহীত

সিঙ্গাপুর থেকে মাত্র ঘণ্টাখানেকের দূরত্বে অবস্থিত ইন্দোনেশিয়ার বিখ্যাত দ্বীপপুঞ্জ বিনতান ও তার আশেপাশের অঞ্চলগুলো বর্তমানে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। চীনের অন্যতম বৃহৎ অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদক নানশান গ্রুপের স্থানীয় ইউনিট PT Gbkek Industri Park এক নতুন শিল্প পার্ক গঠনের পরিকল্পনা নিয়েছে, যার অংশ হিসেবে স্টিল স্মেল্টার, অয়েল রিফাইনারি এবং বাল্ক কার্গো পোর্ট নির্মাণ করা হবে। এই প্রকল্পটি গড়ে উঠছে পুলাউ পোটো নামে ছোট একটি দ্বীপে, যা আগে একটি সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকার অন্তর্ভুক্ত ছিল।

পুলাউ পোটো সহ আশপাশের পাঁচটি দ্বীপ এবং বিনতান দ্বীপের বিলাসবহুল রিসোর্টগুলোর মালিকেরা এই শিল্প প্রকল্পের বিরুদ্ধে একাধিকবার সরকারের কাছে আপত্তিপত্র দিয়েছেন। তাদের মতে, প্রকল্পটি শুধু পরিবেশ নয়, স্থানীয় পর্যটন শিল্প এবং বহু মানুষের জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলবে।

অ্যান্ড্রু ডিকসন, একজন প্রাক্তন বিনিয়োগ ব্যাংকার ও বর্তমানে নিকই ও চেম্পেদাক নামে দুইটি বিলাসবহুল দ্বীপ রিসোর্টের মালিক বলেন, “পুলাউ পোটোতে শিল্প পার্ক চালু হলে এটি আমাদের ব্যবসার জন্য তো বটেই, স্থানীয় কমিউনিটির জন্যও বিপর্যয়কর হবে। ইতোমধ্যেই মৎস্যজীবীরা মাছের ঘাটতির অভিযোগ করছেন।

প্রতিবেশী লুলা অ্যাডভেঞ্চার রিসোর্ট থেকে জানা গেছে, বিনতান অ্যালুমিনা ইন্দোনেশিয়ার বর্তমান কার্যক্রমের ফলে স্থানীয় সমুদ্রজলের রঙ লালচে হয়ে গেছে। বক্সাইট প্রক্রিয়াজাতকরণের ফলে উৎপন্ন লালচে বর্জ্য সমুদ্রের জল ও উপকূলীয় প্রাণবৈচিত্র্যকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

রিসোর্টের মালিক মার্ক ভ্যান লু বলেন, “আগে যেখানে অ্যানিমোনি, কাঁকড়া, সামুদ্রিক তারা মাছ দেখা যেত, এখন সেখানে শুধু লাল বর্জ্যে ঢাকা মৃত সমুদ্রতল দেখা যায়।

চজিবিকে ইন্ডাস্ট্রি পার্কের পরিচালক সান্তোনি দাবি করেছেন, “আমরা সরকারের অনুমতি নিয়েই কাজ করছি। আমাদের সমস্ত কাজ ইন্দোনেশিয়ার আইন অনুযায়ীই হচ্ছে। পুলাউ পোটোতে পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প অঞ্চল গড়ার অধিকার আমাদের রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, “আমরা বুঝতে পারছি না কেন রিসোর্ট মালিকরা আপত্তি করছেন। আমরা পেশাদারভাবে কাজ করছি।

এদিকে, নানশান অ্যালুমিনিয়াম তাদের এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা পরিবেশগত ও সামাজিক দায়বদ্ধতা (ESG) নীতিমালা মেনে চলে এবং স্থানীয় প্রকল্পে টেকসই বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। তবে তারা দাবি করেছে, পুলাউ পোটো প্রকল্পে তাদের কোনো সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই।

২০২৫ সালের মার্চ মাসে Gbkek Industri একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। এই রিপোর্টে প্রস্তাবিত প্রকল্পের পরিবেশগত ঝুঁকি এবং তা মোকাবেলার জন্য করণীয় পরিকল্পনার বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, অঞ্চলটিতে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বা বিপন্ন প্রজাতির অস্তিত্ব নেই।

তবে এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন ডিকসনসহ অন্যান্য উদ্যোক্তা ও পরিবেশবিদরা। তাদের মতে, এই এলাকায় রয়েছে ডলফিন, ডুগং এবং বিপন্ন হকসবিল সাগর কচ্ছপের আবাসস্থল।

স্থানীয় ডাইভিং সেন্টারের মালিক রিও মার্তাদি সুসেত্যো বলেন, “সরকার পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব ও অস্তিত্বকে অবহেলা করছে। বর্ষা মৌসুমে শিল্প পার্ক থেকে প্রবাহিত বালির কারণে সমুদ্রের স্বচ্ছতা কমে গেছে, ফলে আমাদের ডাইভিং কার্যক্রম কমাতে হয়েছে।

ডিকসন বলেন, “আমরা বলছি না যে ইন্দোনেশিয়া তাদের সম্পদ ব্যবহার না করুক। আমরা শুধু বলছি, এমন এলাকাগুলোতে এসব প্রকল্প গড়ে উঠুক — যেখানে আগে থেকেই পর্যটন ব্যবসা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং স্থানীয় কমিউনিটি গড়ে উঠেছে। এটা জীববৈচিত্র্য ও জীবিকার ক্ষতি করবে।

মুমু

×