ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ বাড়ছে? বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে মেনে চলুন এই ৫টি কার্যকর কৌশল

প্রকাশিত: ১৩:৪৯, ২৪ মে ২০২৫; আপডেট: ১৩:৫০, ২৪ মে ২০২৫

কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ বাড়ছে? বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে মেনে চলুন এই ৫টি কার্যকর কৌশল

বর্তমান ডিজিটাল ও দ্রুতগতির কর্মজীবনে কর্মক্ষেত্রের মানসিক চাপ একটি বৈশ্বিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিল্পভেদে কর্মীদের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ, ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা ও ব্যক্তিজীবনের ভারসাম্যহীনতা তাদের পেশাদার ও ব্যক্তিগত জীবন দুটোতেই প্রভাব ফেলছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (২০২৩) এর তথ্যমতে, মানসিক চাপজনিত সমস্যা বর্তমানে পেশাগত অসুস্থতার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান সময়ের কাজের ধরন ও মানসিক চ্যালেঞ্জগুলো বুঝে সুনির্দিষ্ট কৌশল গ্রহণ না করলে কর্মীদের উৎপাদনশীলতা, আস্থা ও মানসিক সুস্থতা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপের আধুনিক রূপ
১. নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগের চাপ
স্মার্টফোন, মেসেজিং অ্যাপ, ওয়ার্ক চ্যাট এবং নানা প্রোডাক্টিভিটি টুলের মাধ্যমে কর্মীরা এখন সবসময়ই ‘উপলব্ধ’ থাকেন। এর ফলে ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের সীমারেখা অস্পষ্ট হয়ে গেছে। এই চাপ দীর্ঘমেয়াদে মানসিক ক্লান্তি তৈরি করে, ছুটির সময়েও দেহ ও মনকে মুক্তি দেয় না।

২. অনিশ্চয়তা ও চাকরি হারানোর ভয়
অর্থনৈতিক অস্থিরতা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) দ্বারা কাজের পরিবর্তন, কোম্পানির পুনর্গঠন বা ছাঁটাই সব মিলিয়ে কর্মীদের মনে অনিরাপত্তা তৈরি হয়েছে। এই ক্রমাগত উদ্বেগ তাদের কর্মক্ষমতা ও মানসিক স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। অনেকেই শারীরিক লক্ষণ যেমন ঘুমের সমস্যা, মাথাব্যথা ও ক্লান্তিতে ভুগছেন।

৩. মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সামাজিক ভয়
বর্তমানে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বাড়লেও, অনেক কর্মী এখনো তাদের উদ্বেগ বা ক্লান্তির কথা ম্যানেজমেন্টকে বলতে ভয় পান। দুর্বল হিসেবে বিবেচিত হওয়ার ভয়, বা প্রমোশনের সুযোগ হারানোর আশঙ্কা তাদের চুপ করিয়ে রাখে।

৪. অন্তর্ভুক্তির অভাব
যেসব কর্মী সংখ্যালঘু বা কম প্রতিনিধিত্বশীল শ্রেণির, তারা সহকর্মীদের তুলনায় বাড়তি মানসিক চাপের মুখোমুখি হন। নেতৃত্বের অভাবে, অবমূল্যায়ন বা আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ মন্তব্যও দীর্ঘমেয়াদে মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করে।

মানসিক চাপ কমাতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
১. নমনীয় কর্মঘণ্টা নীতি প্রণয়ন
কর্মীদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে নমনীয় সময় নির্ধারণের নীতি গ্রহণ করুন। কর্মীরা যেন নিজস্ব উৎপাদনশীল সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারেন এবং পারিবারিক ও স্বাস্থ্যগত দিকগুলোতে সমন্বয় ঘটাতে পারেন। এতে কর্মীদের মানসিক সুস্থতা ও নিয়ন্ত্রণবোধ বাড়ে।

২. সর্বজনীন স্বাস্থ্য ও সুস্থতা কর্মসূচি চালু করুন
শুধু শারীরিক স্বাস্থ্য নয়, মানসিক ও পারিবারিক সুস্থতাকেও প্রাধান্য দিন। ২৪ ঘণ্টার মানসিক সহায়তা হেল্পলাইন, কর্মী কাউন্সেলিং প্রোগ্রাম, এবং মানসিক স্বাস্থ্য অ্যাপ চালু করে সহজ প্রবেশযোগ্যতা ও সচেতনতা নিশ্চিত করতে হবে। এগুলোর প্রচার যেন শুধু পোস্টার নয়, বাস্তব সহায়তা হয়।

৩. শীর্ষ ব্যবস্থাপনাকে মানসিক স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ দিন
যেভাবে CPR বা হৃৎপিণ্ড সংকট চিনে নিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, সেভাবেই ম্যানেজারদের প্রশিক্ষণ দিন যাতে তারা কর্মীদের মানসিক চাপ বা উদ্বেগের প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্ত করতে পারেন। সহানুভূতিশীল কথোপকথন একটি নিরাপদ ও সহায়ক সংস্কৃতি গড়ে তোলে।

৪. মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খোলামেলা আলোচনা চালু করুন
নেতৃত্ব পর্যায়ে নিজস্ব মানসিক চাপ স্বীকার করার সাহসিকতা অন্যদের জন্য পথ খুলে দেয়। কর্মীদের সমর্থনে গ্রুপ তৈরি, নির্দিষ্ট সময়ের কর্ম-পর্যালোচনা এবং ফোকাসড কাজের পরিবেশ তৈরি মানসিক স্বস্তি বাড়ায়। এই আলোচনাকে ‘বিশেষ দিবসের বিষয়’ না করে প্রতিদিনের সংস্কৃতিতে পরিণত করুন।

৫. প্রচেষ্টা ও দলীয় কাজকে স্বীকৃতি দিন
শুধু অর্জন নয়, চেষ্টাকেও পুরস্কৃত করুন। সাপ্তাহিক মিটিংয়ে ছোট ছোট জয় উদযাপন করুন, যা কর্মীদের মাঝে আত্মবিশ্বাস ও দলের মধ্যে উৎসাহ তৈরি করে। ইতিবাচক প্রশংসা কর্মীদের মনোবল বাড়ায় এবং বার্নআউটের ঝুঁকি কমায়।


কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ে কাজ করাটা কেবল মানবিক দায় নয়, এটি দীর্ঘমেয়াদে প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের মূলে থাকা একটি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ। কর্মীরা যদি মনে করেন যে তাদের প্রতিষ্ঠান তাদের পাশে আছে, তাহলে তারা প্রতিষ্ঠানটির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে অন্তর থেকে ধারণ করেন।

মানসিক চাপ থেকে মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সহানুভূতিশীল কর্মপরিবেশ তৈরি করাই আগামী দিনের সফল প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্য। এখনই সময় কর্মীদের স্বস্তি দেওয়ার, যাতে তারা শুধু কাজেই নয়, জীবনেও সাফল্য অর্জন করতে পারেন।

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/333mzjue

আফরোজা

×