ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

"কিছু না করা" পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে এক নীরব বিপ্লব !

প্রকাশিত: ১৬:২১, ২৪ মে ২০২৫; আপডেট: ১৬:৩২, ২৪ মে ২০২৫

"কিছু না করা" এখন এক নতুন জীবনদর্শন, ক্লান্ত আধুনিক জীবনে আরাম খোঁজার গল্প। "একটা বছর শুধু বিশ্রামে কাটানো" এই ভাবনাটা আপনার কেমন লাগে? কাজ নেই, ইমেইল নেই, ক্যারিয়ার দৌড় নেই, সফলতার দাপট নেই। শুনতে যেন স্বপ্নের মতো! অথচ কয়েক বছর আগেও এটাকে অনেকে ব্যর্থতা ভেবে আতঙ্কে পড়ে যেতেন। কিন্তু সময় বদলেছে। আজকের ক্লান্ত, ওভারলোডেড, প্রযুক্তি-নিয়ন্ত্রিত বিশ্বে, অনেকেই বলছেন, "মন্থর জীবনই প্রকৃত মুক্তি!"

বার্নআউট থেকে ফিরে আসার গল্প: এমা গ্যাননের 'এক বছরের কিছু না'

ব্রিটিশ লেখিকা এমা গ্যানন, এক সময়ের "গার্লবস" কালচারের প্রবক্তা, এখন ‘কিছু না করাই'–কে জীবনের সেরা ওষুধ বলে মানেন। এক ভয়াবহ বার্নআউটের পরে তাঁর শরীর ও মন একেবারে ভেঙে পড়ে, স্ক্রিন দেখতে পারতেন না, রাস্তায় হাঁটলে দুর্বল লাগত। বাধ্য হয়ে তিনি কাজ থেকে পুরো বিরতি নেন।

এই সময়টিকেই তিনি পরিণত করেছেন এক শান্তিপূর্ণ অভিযাত্রায়, যার গল্প এখন দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে "A Year of Nothing"। সেই বইতে আছে তাঁর দিনগুলো কেটেছে পাখি দেখা, বাচ্চাদের টিভি দেখা, জার্নাল লেখা, আর অবশ্যই – ঠান্ডা পানিতে সাঁতার কাটার মতো ধীরে বাঁচার চর্চায়।

গ্যানন বলেন, "আমরা তো বিশ্রামের জন্যই তৈরি, ঘুম, পার্কে হাঁটা, আকাশের দিকে তাকানো। এগুলো বিলাসিতা না, জরুরি।"

"কাজ করলেই মূল্যবান" – এই ধারণার বিরুদ্ধে উঠছে প্রশ্ন

এক সময় মনে হতো, যত বেশি ব্যস্ত, তত বেশি সফল। এখন ধীরে ধীরে সেই ধারণা ভেঙে যাচ্ছে। গ্যাননের মতো আরও অনেক লেখক এখন "ধীরে বাঁচা", "চাপহীন জীবন", এবং "কাজ নয়, বিশ্রামই প্রয়োজন", এই বার্তা দিচ্ছেন বইয়ের পাতায় পাতায়।

জেনি ওডেলের "How To Do Nothing" ২০১৯ সালেই আলোড়ন তুলেছিল। তিনি বলেন, প্রযুক্তি আমাদের মনোযোগ চুরি করে নিচ্ছে, এবং "কিছু না করাও" এক ধরনের প্রতিবাদ হতে পারে।

অলিভার বার্কম্যানের "Four Thousand Weeks" মনে করিয়ে দেয়, আমাদের জীবন খুবই ছোট, সবকিছু পারফেক্ট করতে গিয়ে সময় নষ্ট না করে, বরং গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলোতে মন দিন।

"নিকসেন" (Niksen), ডাচ ধারণা, যার মানে ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু না করা। এই ভাবনা এখন বইয়ের দোকানে ট্রেন্ড।

"Pause, Rest, Be" বইতে অক্টাভিয়া রাহিম বলেন, যোগব্যায়াম মানে শুধু ফিটনেস না, নিজের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করাও একটা সাধনা।

"The Art of Rest" বইতে ক্লডিয়া হ্যামন্ড গবেষণার ভিত্তিতে বলেন, বিশ্রাম কোনও বিলাসিতা নয়, একেবারে প্রয়োজন।

পশ্চিমা বিশ্বে এই মন্থরতার উত্থান কেন?

সবচেয়ে বড় কারণ, আমরা সবাই অসহ্যভাবে ক্লান্ত
গ্যাননের ভাষায়: "সবাই খুব, খুব ক্লান্ত। প্রতিদিন একটা জগ juggling, যেটা আর চালানো যাচ্ছে না।"

স্মার্টফোন আমাদের সবসময় অনলাইনে রাখে, সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনকে ‘কন্টেন্ট’-এ পরিণত করেছে, সবকিছু ট্র্যাক করা, ঘুম থেকে শুরু করে খাওয়া, হাঁটা, এও এক চাপ, কোভিড-প্যান্ডেমিকে অনেকে কাজ থেকে বিরতি পায়, প্রথমবার বোঝে ‘ধীরে চলাও’ সম্ভব

তবে, ধীরে জীবন মানেই কি প্রিভিলেজ?

সমালোচকরাও আছেন, তাঁদের মতে, এমন "বিশ্রামময় জীবন" শুধু অর্থবান বা সুবিধাপ্রাপ্তদের জন্যই সম্ভব। সবার পক্ষে সব ছেড়ে ‘কিছু না’ করা কি আদৌ বাস্তব?

তবুও, একথা অস্বীকার করা যায় না, ধীরে চলা, সময় নেওয়া, এবং শরীর-মনের যত্ন নেওয়া এখন এক ধরনের "র‍্যাডিকাল অ্যাক্ট"।

'কিছু না করাও' আজকাল এক নতুন প্রতিরোধ, চাপের বিরুদ্ধে, অতিরিক্ত ব্যস্ততার বিরুদ্ধে, এবং নিজের অবহেলার বিরুদ্ধে।
হোক তা বই পড়া, হোক তা আকাশ দেখা, এখন মানুষ খুঁজছে সময়, খুঁজছে বিরতি !

উৎস: বিবিসি

সায়মা

×