ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

খাগড়াছড়িতে এনসিপি নেতা-নেত্রীর পাল্টাপাল্টি জিডি: জেলাজুড়ে ব্যাপক আলোচনা

জীতেন বড়ুয়া,খাগড়াছড়ি

প্রকাশিত: ১২:৪৯, ১৫ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১২:৫০, ১৫ জুলাই ২০২৫

খাগড়াছড়িতে এনসিপি নেতা-নেত্রীর পাল্টাপাল্টি জিডি: জেলাজুড়ে ব্যাপক আলোচনা

ছবি: জনকণ্ঠ

খাগড়াছড়িতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের দুই শীর্ষ নেতা একে অপরের বিরুদ্ধে মানহানি, নিরাপত্তাহীনতা, মামলায় জড়ানোর হুমকি এবং মিথ্যা তথ্য ছড়ানোসহ একাধিক অভিযোগে পাল্টাপাল্টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। এই ঘটনায় জেলাজুড়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

জিডি করেছেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য মনজিলা সুলতানা ঝুমা এবং এনসিপির গুইমারা উপজেলা শাখার প্রধান সমন্বয়ক ও জেলা শাখার যুগ্ম সমন্বয়ক মো. রাসেল শেখ। খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল বাতেন মৃধা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ জানায়, গত ১২ জুলাই এনসিপি'র কেন্দ্রীয় সংগঠক অ্যাডভোকেট মনজিলা সুলতানা ঝুমা এবং ১৩ জুলাই একই সংগঠনের খাগড়াছড়ি শাখার নেতা মো. রাসেল পাল্টাপাল্টি জিডি করেন। তার জিডিতে রাসেলসহ অজ্ঞাত আরও ২০-২৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ঝুমা অভিযোগ করেছেন যে, অভিযুক্তরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ব্যক্তিজীবন ও সংগঠনকে জড়িয়ে ভিত্তিহীন, মানহানিকর ও মিথ্যা বক্তব্য উপস্থাপন করছেন। বিশেষত, ১২ জুলাই সকালে গুইমারা এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়ক মো. রাসেল 'কন্যা ভুল করিস না ধীরে ধীরে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছি..বয়কট’ শীর্ষক একটি ফেসবুক পোস্ট করেন এবং এর নিচে একাধিক নেতিবাচক মন্তব্য করেন, যা ঝুমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়। এরপর বিভিন্ন ফেসবুক আইডি থেকে ঝুমার বিরুদ্ধে সম্মানহানিকর পোস্ট করা হয়। একই দিনে খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবে মো. রাসেল একটি সংবাদ সম্মেলন করে ঝুমা এবং তার সংগঠনকে হেয় প্রতিপন্ন করে বিভিন্ন বক্তব্য রাখেন বলেও জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ঘটনার পর থেকে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জিডিতে জানিয়েছেন মনজিলা ঝুমা। তিনি মনে করেন, এই অপপ্রচার আগামী ২১ জুলাইয়ের কেন্দ্রীয় নেতাদের খাগড়াছড়ি জেলায় পূর্বনির্ধারিত জুলাই পদযাত্রাকে বানচাল করার জন্য স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে চালানো হচ্ছে।

অন্যদিকে, রাসেল তার জিডিতে মনজিলা সুলতানার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক বিরোধ, অনিয়ম, মামলায় জড়ানোর হুমকি প্রদানসহ একাধিক অভিযোগ করেন। তিনি দাবি করেন, ১২ জুলাই সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবে মনজিলা সুলতানা ঝুমার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করার পর থেকে তিনি বিভিন্ন হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন এবং উদ্বিগ্নতায় ভুগছেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন, তার এবং তার সংগঠনের বিভিন্ন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন পোস্ট করা হচ্ছে। মো. রাসেল শেখ তার জিডিতে নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে মো. রাসেল অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে এনসিপির নাম ভাঙিয়ে মনজিলা সুলতানা ঝুমা নানা অনিয়ম করছেন। সম্প্রতি পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীনস্থ বাজার ফান্ডে নিয়ন্ত্রণাধীন গুইমারা বাজারের ইজারার শেয়ারের লাভ্যাংশ আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়াও, পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে সংগঠনের নামে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকার কাজ ও ১৫ মেট্রিক টন খাদ্যশস্যসহ বিভিন্ন প্রকল্প নিজ নামে গ্রহণ করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও তিনি করেন।

খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল বাতেন মৃধা জানিয়েছেন, জিডি দুইটি গ্রহণের পর তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এই ঘটনা এনসিপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে প্রকাশ্যে এনেছে এবং জেলাজুড়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

সাব্বির

×