ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

হৃদরোগ থেকে দূরে রাখতে পারে ঝাল মরিচ—বিজ্ঞানীরা যা বলছেন

প্রকাশিত: ১৯:৩৩, ১৫ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৯:৩৪, ১৫ জুলাই ২০২৫

হৃদরোগ থেকে দূরে রাখতে পারে ঝাল মরিচ—বিজ্ঞানীরা যা বলছেন

ছবি: সংগৃহীত

ঝাল খাওয়ার উত্তেজনা অনেকেই উপভোগ করেন, তবে ঝাল মরিচের উপকারিতা শুধু জিভে আগুন ধরানোতেই সীমাবদ্ধ নয়। সাম্প্রতিক গবেষণাগুলোর দাবি, নিয়মিত ঝাল খাবার, বিশেষ করে কাঁচামরিচ খেলে হৃদ্‌রোগ, মেটাবলিজম এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্যসহ নানা ক্ষেত্রে উপকার মিলতে পারে। এর পেছনে মূল যাদু উপাদান ‘ক্যাপসাইসিন’—যেটা মরিচের ঝাল স্বাদের জন্য দায়ী। কিন্তু কীভাবে এটি শরীরের উপকার করে? আর কতটা খাওয়া নিরাপদ?

ঝাল খাবার কি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো? গবেষণার দাবি কী?

২০২০ সালের একটি মেটা-অ্যানালাইসিসে দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ঝাল মরিচ খান, তারা অন্যদের তুলনায় ২৫% কম হারে অকালমৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকেন। এই গবেষণায় দেখা গেছে, মরিচ খাওয়ার অভ্যাস হৃদ্‌রোগ, ক্যানসার ও শ্বাসযন্ত্রের রোগের ঝুঁকি কমায়।

এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ক্যাপসাইসিন। এটি শরীরের TRPV1 নামের একটি রিসেপ্টরকে সক্রিয় করে, যা চর্বি পোড়ানো, ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণ, রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখা এবং ক্ষুধা দমন করতে সাহায্য করে।

আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যাপসাইসিন মেটাবলিজম, অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া এবং প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, যা হার্ট ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যসহ সারা শরীরের উপকারে আসে।

প্রদাহ কমিয়ে হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধে মরিচের ভূমিকা

দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ (Chronic Inflammation) হলো হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগের মূল কারণ। গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যাপসাইসিন অতিরিক্ত সক্রিয় ইমিউন কোষগুলোর কার্যক্রম শান্ত করে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

মানবভিত্তিক গবেষণায়ও দেখা গেছে, যারা বেশি কাঁচামরিচ খান, তাদের রক্তচাপ কম এবং কোলেস্টেরল ভালো থাকে। ইতালির একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ঝাল মরিচ খেতেন, তাদের হৃদ্‌স্বাস্থ্য ছিল অনেক ভালো—তুলনায় যারা শুধুমাত্র মিষ্টি মরিচ খেতেন।

২০২৩ সালের এক গবেষণায় আরও দেখা যায়, ঝাল মরিচে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পলিফেনল বেশি থাকে, যা শরীরের ক্ষতিকর অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়। এমনকি মাঝারি ঝালের মরিচ, যেমন জলাপেনো, স্বল্প তীব্রতার মধ্যেও ভালো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেয়।

কীভাবে ধীরে ধীরে ঝাল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলবেন?

ঝাল খাওয়ার অভ্যাস না থাকলে ধীরে ধীরে শুরু করুন। প্রথমে পোবলানো, কলা মরিচ জাতীয় নরম ঝালের মাধ্যমে শুরু করে ধীরে ধীরে জলাপেনো ও অন্যান্য তীব্র ঝালের দিকে এগোতে পারেন।

ঝাল খাবার খেলে আমরা স্বাভাবিকভাবেই ধীরে ধীরে খাই, ছোট কামড় নিই, বেশি চিবাই—যা হজমে সাহায্য করে, ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, এবং রক্তে শর্করার মাত্রা স্থির রাখে।

সর্বোচ্চ পুষ্টিগুণ পেতে কীভাবে ঝাল খাবেন?

সব ঝাল খাবার সমান নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, তাজা বা হালকা রান্না করা মরিচে বেশি পুষ্টি থাকে। লাল মরিচে ক্যাপসাইসিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি বেশি থাকে। তবে রোস্ট করা মরিচেও ফ্ল্যাভোনয়েড ও পলিফেনল বেশি থাকে, তাই বিভিন্নভাবে খাওয়ার সুবিধা রয়েছে।

অলিভ অয়েল, অ্যাভোকাডো বা ফুল-ফ্যাট দইয়ের মতো স্বাস্থ্যকর চর্বি যুক্ত খাবারের সঙ্গে মরিচ খেলে ক্যাপসাইসিনের পুষ্টিগুণ ভালোভাবে শোষিত হয় এবং জ্বালাভাবও কমে। যেমন, অলিভ অয়েলে মরিচ ফেলে রাখতে পারেন, কিংবা গুয়াকামোল, গ্রীক দই, বা ফারমেন্টেড খাবারের সঙ্গে খেতে পারেন।

আবির

×