ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সাড়ে ৫ কোটি টাকার সড়ক, তবুও ধস: ভোগান্তিতে ২০ গ্রামের মানুষ

সুদীপ্ত শামীম, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা)

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ২৪ মে ২০২৫

সাড়ে ৫ কোটি টাকার সড়ক, তবুও ধস: ভোগান্তিতে ২০ গ্রামের মানুষ

ছবি: জনকণ্ঠ

টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ধসে গেছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামডাকুয়ায় তিস্তা নদীর উপর নির্মিত সেতুর সংযোগ সড়ক। উদ্বোধনের মাত্র তিন বছরের মাথায় এমন দুরবস্থায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, ‘সেদিন যদি কথা শুনতেন, আজ এ দুর্ভোগ দেখতে হতো না!’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বেলকা, তারাপুর, হরিপুর ইউনিয়ন ছাড়াও কুড়িগ্রামের উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রামের মানুষ প্রতিদিন এই সড়ক ব্যবহার করেন। দীর্ঘদিন বাঁশ ও কাঠের সাঁকো এবং নৌকার ওপর নির্ভর করে পারাপার চললেও ২০২২ সালে বহুল প্রত্যাশিত সেতুটি যাতায়াতের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে স্বস্তি ফেরে এলাকাবাসীর মাঝে।

তবে দুর্ভোগ শুরু হয় সংযোগ সড়কের কাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার নিয়ে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বহুবার নিষেধ করার পরও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও এলজিইডি কর্ণপাত করেনি।

উপজেলা প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা যায়, পিসি গার্ডার সেতুটির পূর্ব ও পশ্চিম পাশে ৫০ মিটার করে মোট ১০০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৫ কোটি ৫৭ লাখ ৯৮ হাজার ৪৪৪ টাকা। কাজের দায়িত্বে ছিল ঢাকার ‘পুরকৌশল প্রযুক্তি লিমিটেড’। ২০১৯ সালে কাজ শুরু হলেও ২০২২ সালে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

স্থানীয় খলিল মিয়া বলেন, ‘রাস্তার কাজটা খুবই নরমাল হইছে। আমরা বাধা দিলেও কন্ট্রাকটার শোনে নাই। আগেও একবার ভাঙছিল, এবারও একদিনের বৃষ্টিতেই দুই পাশ ভাঙি গেছে।’

কাশেম আলী নামের আরেকজন বলেন, ‘এই রাস্তা না থাকলে মানুষ চলবে কীভাবে? ঠিকমতো কাজ না করলে তো এটাই হবে।’

ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালক এমদাদুল হক বলেন, ‘সেতু হওয়ার পর এই রুটে সারাদিন অটো চালিয়ে সংসার চালাই। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সেতুর দু’পাশে ধস নেমেছে। দ্রুত মেরামত না করলে আমরা চরম বিপাকে পড়বো।’

একতা বাজারের রড-সিমেন্ট ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সেতু হওয়ার পর বাজারে পণ্য পরিবহন অনেক সহজ হয়েছিল। ব্যবসাও ভালো চলছিল। কিন্তু এখন সংযোগ সড়ক ভেঙে যাওয়ায় গাড়ি আসতে পারছে না। এতে আমাদের ব্যবসা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দ্রুত সংস্কার না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’

বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহিম খলিলুল্যাহ বলেন, ‘সেতু হওয়ার পর আমার ইউনিয়নের চরাঞ্চলের মানুষ খুবই উপকৃত হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যেও ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু সংযোগ সড়ক ধসে যাওয়ায় আবার আগের মতো ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা না নিলে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে।’

অভিযোগের বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারকে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এদিকে উপজেলা প্রকৌশলী মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, 'আপাতত জিওবি মেইনটেনস কর্মসূচির অধীনে কর্মীদের দিয়ে ভেঙে যাওয়া অংশে সাময়িক ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্থায়ী সমাধানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।'

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘সংযোগ সড়ক ধসের বিষয়টি ফেসবুকে দেখেছি। বরাদ্দ এলেই মেরামতের ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঠিকাদারকে আইনের আওতায় আনার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

এএইচএ

×