ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ধর্ষণের শাস্তি কোন দেশে কেমন? ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হায়দারের বিশ্লেষণ

প্রকাশিত: ০৯:১৭, ২৪ মে ২০২৫

ধর্ষণের শাস্তি কোন দেশে কেমন? ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হায়দারের বিশ্লেষণ

ছবি: প্রতীকী

ধর্ষণের মতো ভয়াবহ অপরাধের বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কার্যকর রয়েছে কঠোর আইন ও শাস্তির বিধান। সম্প্রতি ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হায়দার এক ভিডিও বার্তায় এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ধর্ষণ একটি আদিমতম অপরাধ এবং বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এটি ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। তবে এই সংক্রান্ত শাস্তির বিষয়ে সঠিক তথ্যের অভাবে সামাজিক মাধ্যমে নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে ধর্ষণের বিচার হয় ২০০০ সালের ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন’-এর আওতায়। এই আইনের ৯ ধারার উপধারা অনুযায়ী, ধর্ষণের শাস্তি নির্ধারিত হয়েছে ‘যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা মৃত্যুদণ্ড’। কোনো অবস্থায় কম মেয়াদের সাজা দেয়ার সুযোগ নেই। বিচার হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে, যেখানে মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকর হয় ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৬৮ ধারার আওতায়।

ভারতে ২০২৩ সালে প্রণীত নতুন আইন ‘ভারতীয় ন্যায়সংহিতা’ অনুযায়ী, ধর্ষণকে ভাগ করা হয়েছে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে। গুরুতর ধর্ষণের শাস্তি ১০ বছর থেকে যাবজ্জীবন এবং গ্যাংরেপের শাস্তি ২০ বছর থেকে মৃত্যুদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে।

পাকিস্তানে শরিয়াভিত্তিক ‘হুদুদ অর্ডিন্যান্স ১৯৭৯’-এর আওতায় ধর্ষণকে গণ্য করা হয় জিনা হিসেবে, যার শাস্তি পাথর মেরে মৃত্যু বা ১০০ বেত্রাঘাত।

সৌদি আরবে শরিয়া আইন অনুসারে ধর্ষণের শাস্তি হতে পারে দোররা মারা থেকে প্রকাশ্যে শিরোচ্ছেদ পর্যন্ত। ইরানে ‘ইসলামিক পেনাল কোড’-এর ২২৪ ধারা অনুযায়ী ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হলেও অনুতপ্ত হলে দণ্ড লঘু হতে পারে।

চীনে ১৪ বছরের কম বয়সী কিশোরীকে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। উত্তর কোরিয়ায় ধর্ষণের শাস্তি তুলনামূলকভাবে কম, সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড।

জাপানে ধর্ষণের শাস্তি সর্বনিম্ন তিন বছর, গ্যাংরেপে চার বছর। যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল এবং অঙ্গরাজ্যভেদে বিধান ভিন্ন। সর্বোচ্চ শাস্তি প্যারোল ছাড়া যাবজ্জীবন। যুক্তরাজ্যে গুরুতর ধর্ষণের শাস্তি ‘লাইফ ইন প্রিজন’ হলেও বাস্তবে তা ১৫ বছর কারাদণ্ড এবং পরবর্তী জীবনে প্যারলের আওতায় থাকে।

রাশিয়ায় ধর্ষণের জন্য সর্বোচ্চ ১৫ বছর কারাদণ্ড এবং কানাডায় গুরুতর সেক্সুয়াল অ্যাসল্টের জন্য রয়েছে যাবজ্জীবন সাজা।

ব্যারিস্টার সাজ্জাদ বলেন, তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশের ধর্ষণ আইনে রয়েছে সবচেয়ে কঠোর শাস্তির বিধান। কিন্তু তারপরও দেশে ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েই চলেছে। তিনি মনে করেন, শুধু আইন নয়, প্রয়োগ ও সামাজিক সচেতনতার মাধ্যমেই এই অপরাধ রোধ সম্ভব।

 

সূত্র: https://youtu.be/vumosMJKwio?si=EdFf6GoC9nXMlZVd

রাকিব

×