ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জমি কেনার আগে সাবধান! কী কী দরকার দলিল রেজিষ্ট্রেশন করতে?

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ২৪ মে ২০২৫

জমি কেনার আগে সাবধান! কী কী দরকার দলিল রেজিষ্ট্রেশন করতে?

ছবি: প্রতীকী

বর্তমান সময়ে জমি কেনাবেচার বিষয়টি যত সহজ মনে হয়, বাস্তবে তা অনেক বেশি জটিল এবং সাবধানতার দাবি রাখে। একজন আইনজীবী সম্প্রতি একটি ভিডিওতে এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন, যেখানে তিনি সতর্ক করেছেন যে, জমির দলিল লেখার কাজ কেবল একজন দলিল লেখকের হাতে ছেড়ে দিলে ক্রেতার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। বরং দলিলে যদি কোনো ভুল থেকে যায়, তার দায়দায়িত্ব শেষপর্যন্ত ক্রেতাকেই বহন করতে হয়।

অনেক সময় দেখা যায়, দলিলে যে দাগ ও খতিয়ান নম্বর উল্লেখ আছে, তা বাস্তবে জমির অবস্থানের সাথে মেলে না। এমনও হয়, আপনি যে জমিতে বসবাস করছেন বা দখলে রেখেছেন, সেই দাগ নম্বর দলিলে নেই। আবার দলিল অনুযায়ী জমির মালিকানা থাকা সত্ত্বেও নামজারির সময় নানা জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়। এসব সমস্যা মূলত ঘটে থাকে অসতর্কতা এবং দলিল লেখার সময় প্রয়োজনীয় যাচাই না করার কারণে।

২০২৫ সালে দলিল করতে গেলে ক্রেতার কিছু বিষয়ে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। প্রথমেই দেখে নিতে হবে, বিক্রেতা মানসিকভাবে সুস্থ এবং আইনগতভাবে সাবালক কিনা। তিনি আদালতের দৃষ্টিতে দেউলিয়া নন তো? এমন অবস্থায় কারও কাছ থেকে জমি কিনলে পরবর্তীতে আইনি জটিলতায় পড়তে হতে পারে।

দলিল লেখার আগে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে যে, জমির প্রকৃত মালিক কে, এবং জমির ওপর বিক্রেতার মালিকানা বৈধ কি না। যদি তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে জমিটি পেয়েছেন বলে দাবি করেন, তাহলে তার সেই দাবির প্রমাণসহ পূর্ব মালিকের সাথে সম্পর্কের সূত্র যাচাই করা জরুরি।

জমির পরিমাণ, বিক্রয়মূল্য, জমির অবস্থান ও চারপাশের চৌহদ্দি সঠিকভাবে দলিলে অন্তর্ভুক্ত করা আবশ্যক। বিশেষ করে জরিপ অনুযায়ী দাগ নম্বর ও খতিয়ান নম্বর যেন বর্তমান পরচা বা খতিয়ানের সঙ্গে মিলে যায়, তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

দলিলে যেকোনো কাটাকাটি, ঘষামাজা কিংবা অস্পষ্ট লেখা থাকলে পরবর্তীতে তা বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। যদি কোনো ভুল হয়েই যায়, তাহলে দলিলের শেষ অংশে পরিষ্কার কৈফিয়ত লিখে তা দলিল লেখকের স্বাক্ষরসহ সংরক্ষণ করতে হবে।

দলিলের প্রতিটি পৃষ্ঠায় বিক্রেতার স্বাক্ষর থাকা আবশ্যক এবং কমপক্ষে দুইজন সাক্ষী ও একজন শনাক্তকারীর স্বাক্ষর থাকতে হবে। এছাড়া দলিল লেখার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র, বর্তমান পরচা, জরিপ নকল এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে খাজনার রশিদ সংগ্রহ করে রাখতে হবে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে জমি কেনার আগে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস, তহসিল অফিস বা জেলা রেকর্ড রুম থেকে জমির খতিয়ান, দাগ নম্বর ইত্যাদি যাচাই করা। প্রয়োজনে খতিয়ানের সেইমোহর নকল (যা মূল খতিয়ানের সত্যায়িত কপি) সংগ্রহ করে দেখা উচিত, দলিলের তথ্য তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা।

এসব সতর্কতা ও সঠিক পদ্ধতিতে দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে একজন ক্রেতা নিজেকে ভবিষ্যতের আইনগত জটিলতা এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন।

 

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=yRPIunL_KZk

রাকিব

×