
সাহিত্য চর্চায় ছোটকাগজ একটি আন্দোলন, বিদ্রোহ- প্রতিবাদ ও একটি দার্শনিক যাত্রা। ছোটকাগজ চর্চার মধ্য দিয়ে ভবিষ্যৎ সাহিত্যের গতিপথ নির্ধারিত হয়। মোটাদাগে বাংলাদেশে ষাটের দশক থেকে নিরবচ্ছিন্ন ছোটকাগজ চর্চা হয়ে আসছে। প্রধানত রাজধানী ঢাকা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে এর ব্যাপকতা লক্ষ্য করা গেলেও জেলা ও মফস্বল শহরে ছোটোকাগজ চর্চা হয়। একই ধারায় দীর্ঘদিন যাবৎ সিলেট থেকে বই কথা ও শেরপুর থেকে বালুচর প্রকাশিত হয়। ধীরে ধীরে ছোটকাগজ সংশ্লিষ্ট পাঠকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে।
বই কথা
শামসুল কিবরিয়া সম্পাদিত বই কথা। এটি মূলত গদ্য সংখ্যা। বই কথা নিয়মিতভাবে প্রবন্ধ ও বই আলোচনা দিয়ে নিজেদের সমৃদ্ধ করে। বরাবরের মতো এবারের সংখ্যাটিও গদ্য সংখ্যা।
এবারের সংখ্যায় তৌফিকুল ইসলাম চৌধুরী- সাহিত্যে স্মৃতিকাতরতা: সৃজনের বীজতলা, আশরাফ উদদীন আহমদ- বশীর আল হেলাল-এর গল্পে জীবনযন্ত্রণা ও রিয়াদ আল ফেরদৌস- ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঢেউ : প্রসঙ্গ ব্রহ্মপুত্র নদ এবং অন্যান্য নামে তিনটি প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে।
বই আলোচনা পর্বে গল্প ও উপন্যাস নিয়ে গদ্য লিখেছেন নাহার আলম- বাবুলের বেড়ে ওঠা : এক ভীতু ও ভুল- কৌতূহলী কিশোরের জীবন- পর্চা, গৌতম চন্দ্র দাশ- সিলেটি নাগরীলিপি সাহিত্যের ইতিবৃত্ত : এক অনুসন্ধানী গবেষণা গ্রন্থ, মোহাম্মদ আলী- শামীমা বনাম বারোমাসই ভাদ্রমাসের সারমেয়গণ আকিমুন রহমানের প্রথম উপন্যাস ‘পুরুষের পৃথিবীতে এক মেয়ে’ সুশান্ত বর্মন- প্রাচীন বাংলার পথে-প্রান্তরে: বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ বই, আনোয়ার কামাল- বাংলাদেশের সমকালীন থিয়েটার : একটি নিকট বিশ্লেষণ, শাহাব আহমেদ- অনুশ্রু ঈশ্বর : কাজী লাবণ্য, গোলাম রাব্বানী- শহরে মহানগরে : জীবন- সমাজ-সংসারের বাস্তবতার রূপায়ন, কাজল রশীদ শাহীন- উত্তর প্রজন্মের ‘দায় ও দরদ’, শাওয়াল খান- অনন্ত বসতি দিও মহেশখালীর বাঁকে ও ইলিয়াস বাবর- তখনো যায়নি ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ : পরিপার্শ্বের গল্পগুলো এইখানে।
কাব্যগ্রন্থ ও কবিতা বিষয়ক প্রবন্ধ লিখেছেন,
জয়নাল আবেদীন শিবু- ওবায়েদ আকাশের কাব্যচেতনার আলেখ্য ‘উদ্ধারকৃত মুখমণ্ডল’, মামুন সুলতান- কবি খালেদ উদ-দীন’র কবিতা ও ভাবনার অন্তর্জাল, ড. ফজলুল হক তুহিন- গাফফার মাহমুদের কবিতা : যাপিত জীবনের শব্দশৈলী।
ছোটোকাগজ ব্যাটিং জোন নিয়ে নিয়ে লিখেছেন শাশ্বত জামান?
বালুচর
নিশিকান্ত ভাদুড়ী : স্মৃতি তর্পন- শেরপুর থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হয় ছোটকাগজ ‘বালুচর’। বালুচর সম্পাদকীয় নীতি অনুসারে একটি সামগ্রিক আর্থ- সামাজিক, রাজনৈতিক, দার্শনিক-সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও ঐতিহাসিক দায় বোধের পরিচয় ফুটে ওঠে। সাংস্কৃতিক দায় বোধ থেকে প্রকাশ করেছে ‘নিশিকান্ত ভাদুড়ী : স্মৃতি তর্পন’ সংখ্যা।
সংখ্যায় বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক এনায়েত আলী- দুটি কথা নিশিকান্ত ভাদুড়ী, আবদুস সামাদ ফারুক- পণ্ডিত স্যার, মনজুরুল আহসান বুলবুল : দূরের নক্ষত্র- কাছে থেকে দেখা, এম এ হাকাম হীরা : আত্মপ্রচার বিমুখ নিশিকান্ত ভাদুড়ী, নিরঞ্জন ভাদুড়ী নিরু- স্মৃতিতে সমুজ্জ্বল আমার বাবা, অরুণা ভাদুড়ী- মহান কর্মবীরের মহা প্রস্থান, বিপ্লব দে কেটু- আপাদমস্তক তুমি এক জ্ঞানভাণ্ডার, জ্যোতি পোদ্দার- পণ্ডিত স্যারের সাথে এক দুপুর, ড. ইসলাম শফিক- আমাদের ‘পণ্ডিত স্যার’ একজন ঋষিতুল্য শিক্ষাবিদ, স্বপ্না চক্রবর্তী- স্মৃতিকথন, রিয়াদ আল ফেরদৌস- পণ্ডিত স্যার, তাঁকে যেমন দেখেছি, শহিদুল ইসলাম ফকির- পিট্টি, শুভ্র প্রকাশ পাল- শুদ্ধ শব্দের জাদুকর শ্রদ্ধেয় পণ্ডিত স্যার, পুলক রায়- সেই প্রথম ও শেষ কথা ও হাকিম বাবুল লিখেছেন পণ্ডিত নিশিকান্ত ভাদুড়ী, জীবনে অবসর বলতে কিছু নেই। এবং সুবর্ণা ভাদুড়ী তাঁর স্মরণে কবিতা লিখেছেন কবিতা : নক্ষত্রের পথে।
বালুচর সম্পাদকীয়তে নিশিকান্ত ভাদুড়ী সংখ্যা নিয়ে যা উল্লেখ করেছেন, তা পাঠ করলেই সংখ্যাটির তাৎপর্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। নিচে তার অংশবিশেষ উল্লেখ করা হলো : ‘জনসমাজের বিপুলা গতিমুখে শতাব্দীর খেয়ায় পণ্ডিত নিশিকান্ত ভাদুড়ীর মতো মানুষ খুঁজে বার করা দুস্কর? এমন প্রাগ্রজ বাতিঘর, যিনি আলো জ্বেলেছেন বিগত শতকের পাঁচ দশক এবং এই শতকের দুই দশক ধরে। আমাদের সমাজে একজন জনগুরুত্বপূর্ণ মান্যবর মানুষ প্রয়াত হলে কিছু দায় বোধহয় সমাজের থেকেই যায়। যদিও সমকালীন জনসমাজে এহেন রেওয়াজ বড্ড অপ্রতুল। তথাপি সর্বজন শ্রদ্ধাস্পদেষু পণ্ডিত স্যারকে স্মৃতি তর্পন এবং তার বর্ণাঢ্য মহৎ কর্মময় জীবনকে বিদ্বজনের দৃষ্টিকোণ থেকে বহুতলীয়ভাবে চিত্রিত করতেই বালুচর সাহিত্য পত্রিকার বিশেষ স্মরণ সংখ্যার আয়োজন। এতে করে সামাজিক দায়মোচন তো সামান্য নিশ্চয়ই অধিকন্তু একজন প্রাগ্রসর শিক্ষকের প্রতি তাঁর ছাত্রদের শ্রদ্ধা নিবেদন করার, আলোচনার সুযোগ হলো সম্পাদকীয়/বালুচর।
সম্পাদক রিয়াদ আল ফেরদৌস, সম্পাদনা পর্ষদে জ্যোতি পোদ্দার ও সজল কর্মকার, প্রচ্ছদ : মোহাম্মদ তালুত, মুল্য পঞ্চাশ টাকা। বই কথা ও বালুচর ছোটকাগজ দুটি পাঠকপ্রিয় হোক।
প্যানেল