
ছবি: সংগৃহীত
কোরবানি ঈদকে ঘিরে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততায় কিশোরগঞ্জের খামারিগুলো এখন প্রাণচঞ্চল। দিন যতই এগিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে প্রস্তুতির চাপ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গরুগুলোর পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা। গরুগুলোর খাওয়াদাওয়া, গোসল, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা—সব কিছুতেই তারা রাখছেন বিশেষ নজর। গরমের কষ্ট থেকে বাঁচাতে খামারে ফ্যান চালু রাখা হয়েছে, কিছু জায়গায় গরুগুলোকে মেশিনের মাধ্যমে পানি দিয়ে গোসল করানো হচ্ছে।
ছোট থেকে বড় সব আকারের পশু এখানে প্রস্তুত করা হয়েছে, যার প্রত্যেকটিকে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে সুন্দরভাবে। পরিচ্ছন্ন শরীর, পরিপাটি সাজ এবং সুস্থ-সবল চেহারা—সব মিলিয়ে যেন ঈদের আনন্দ আগেই চলে এসেছে এসব খামারে। ক্রেতার মন জয় করতে খামারিরা কোনো চেষ্টাই বাদ রাখছেন না।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যমতে, জেলায় কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা ২ লাখ ১৩ হাজার ৩৬৯টি। এর মধ্যে চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার ৯১১টি, যা জেলার চাহিদা পূরণ করেও ৩২ হাজার ৪৫৮টি পশু দেশের চাহিদা পূরণ করবে। জেলায় ৭০ হাজার ৭১টি ষাঁড়, ৪ হাজার ৬টি বলদ, ১৮ হাজার ৫৫৯টি গাভি, ১ হাজার ২৮৮টি মহিষ, ১ লাখ ১৩ হাজার ৮৯৬টি ছাগল, ৫ হাজার ৫১৬টি ভেড়া ও অন্যান্য ৩৩টি কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু রয়েছে।
কিশোরগঞ্জের খামারগুলোতে দেশি জাতের গরুর পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন উন্নত জাতের গরু—যেমন ফ্রিজিয়ান, শাহী ওয়াল, ব্রাহামা এবং ইন্ডিয়ান বোল্ডারের মতো বড় আকৃতির গরু।এসবের পাশাপাশি রয়েছে মহিষ, বলদ ও গয়ালের মতো পশুও। প্রাকৃতিক উপায়ে লালন-পালন করা এসব পশুকে ঘাস, খড়কুটা, ভুসি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে বড় করা হয়েছে। ফলে এসব গরুর প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ ও চাহিদা চোখে পড়ার মতো।
দেশীয় গরুর বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় খামারিরা ক্ষতিকর হরমোন বা ইনজেকশন ব্যবহার না করে পুরোপুরি প্রাকৃতিক ও দেশীয় পদ্ধতিতে গবাদিপশু পালন করেছেন। এতে গরুগুলোর স্বাস্থ্য ভালো থাকছে এবং ক্রেতারাও পাচ্ছেন নিরাপদ পশু। খামারিরা মনে করছেন, এখন আর কোরবানির ঈদে ভারতীয় গরুর উপর নির্ভরশীল হওয়ার প্রয়োজন নেই—দেশীয় গরু দিয়েই চাহিদা পূরণ সম্ভব, বরং আরও বেশি লাভজনক ও নিরাপদ।
খামারি মোঃ সানজিদ হাসান জানান, তাঁর খামারে কোরবানির উপযোগী প্রায় ২০ টি গরু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব গরুর দাম শুরু হয়েছে এক লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। তিনি বলেন, “কোরবানির জন্য যেসব গরু লালন-পালন করেছি, সেগুলো প্রায় এক থেকে দেড় বছর ধরে পরিচর্যা করে বড় করেছি।
খামারি সানজিদ আরো জানান, প্রতিটি কোরবানির গরুর পেছনে প্রতিদিন খরচ হচ্ছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, আকার ও ওজনভেদে। খাদ্যতালিকায় রয়েছে দেশীয় খাবার—যেমন ভুসি, কুড়া, খৈল, ঘাস, ভুট্টা, আলু, মিষ্টি কুমড়া ও খড়।
তবুও আশাবাদী তিনি। তাঁর বিশ্বাস, বাইরের দেশ থেকে গরু না আনলেও দেশীয় গরু দিয়েই কোরবানির চাহিদা পূরণ সম্ভব। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপারি ও সাধারণ মানুষ খামারে এসে গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এসব গরু স্বাস্থ্যবান, পরিচ্ছন্ন এবং নিরাপদ হওয়ায় ক্রেতাদের মধ্যে আস্থা বাড়ছে বলেও জানান তিনি।
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুভাষ চন্দ্র পণ্ডিত জানান, জেলায় কোরবানিকে ঘিরে মোট ৬৩টি গরুর হাট বসবে। এসব হাটে ক্রেতারা যেন নিরাপদ ও স্বাস্থ্যবান পশু কিনতে পারেন, সে লক্ষ্যে ৪০টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম দায়িত্ব পালন করবে।উপজেলা ভিত্তিক টিমের সংখ্যা হলো: কিশোরগঞ্জ সদর: ৪টি, হোসেনপুর: ৩টি, করিমগঞ্জ: ৪টি, তাড়াইল: ৩টি, পাকুন্দিয়া: ২টি, কটিয়াদী: ৬টি, কুলিয়ারচর: ২টি, ভৈরব: ৩টি, বাজিতপুর: ৩টি, নিকলী: ২টি, ইটনা: ২টি, মিঠামইন: ৪টি ও অষ্টগ্রাম: ২টি। এসব টিম হাটে উপস্থিত থেকে গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা, রোগ শনাক্তকরণ এবং সচেতনতা তৈরিতে কাজ করবে।
আলীম