
শিশু মানেই আদর, যত্ন আর পুষ্টির প্রতি বাড়তি মনোযোগ। আর এই যত্নে দুধ যেন এক অবিচ্ছেদ্য অংশ! কিন্তু জানেন কি, দুধ যতটা পুষ্টিকর, ততটাই বিপজ্জনক হতে পারে যদি তা বয়সের আগেই বা অতিরিক্ত পরিমাণে শিশুকে খাওয়ানো হয়? অনেক অভিভাবকই না জেনে শিশুর খাবার তালিকায় অতিরিক্ত দুধ যোগ করে ফেলেন—ফলে শরীরে দেখা দেয় অপুষ্টি, আয়রনের ঘাটতি, এমনকি রক্তস্বল্পতার মতো জটিলতাও। তাই দুধ নিয়ে আবেগ নয়, প্রয়োজন জ্ঞানের আলোকে সঠিক সিদ্ধান্ত।
দুধ শিশুদের শরীর গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে—এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে দুধই সব নয়। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুর এক বছরের আগে গরুর দুধ খাওয়ানো একেবারেই অনুপযুক্ত। কারণ এতে থাকা প্রোটিন ও খনিজ উপাদান শিশুর কচি পেটে হজম হয় না এবং কিডনির উপর বাড়তি চাপ ফেলে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) সুপারিশ অনুযায়ী, প্রথম ছয় মাসে শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধই শিশুর জন্য যথেষ্ট। ছয় মাসের পর শুরু করতে হয় সম্পূরক খাবার এবং এক বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগে গরুর দুধ নয় বরং ঘরে তৈরি দই, সুজি, চালের গুঁড়ো, ফলের পিউরি জাতীয় খাবার দেওয়া নিরাপদ।
এক থেকে চার বছর বয়সী শিশুদের প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৭২০ মিলি দুধই যথেষ্ট বলে জানিয়েছেন পুষ্টিবিদরা। এর বেশি হলেই দেখা দিতে পারে আয়রনের ঘাটতি, হজমে সমস্যা এবং খিদে কমে যাওয়ার মতো বিপত্তি। কারণ অতিরিক্ত দুধ শিশুদের পাকস্থলীতে জায়গা নিয়ে নেয়, ফলে অন্য পুষ্টিকর খাবারের জায়গা সঙ্কুচিত হয়ে যায়।
পুষ্টিবিদদের মতে, দুধের চেয়ে দই অনেক বেশি উপকারী। কারণ দইয়ে রয়েছে প্রোবায়োটিক, যা শিশুর অন্ত্রের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সহায়তা করে এবং হজম শক্তি বাড়ায়।
শিশুর সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করতে হলে শুধু দুধ নয়, বরং মিশ্র খাবার ও সুষম ডায়েটের দিকে নজর দেওয়া জরুরি। অভিভাবকদের উচিত—শুধু ‘দুধ খাওয়ালেই হবে’ এই ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে বয়স অনুযায়ী খাবারের তালিকা ঠিক করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
মিমিয়া