
ছবিঃ সংগৃহীত
বসন্ত এসে গিয়েছে, আর এই সময়টাতেই অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন বসন্ত রোগ বা জলবসন্তে, যাকে চিকেন পক্স বলা হয়। সম্প্রতি ডাক্তার এসএ মল্লিক জানান, গত কয়েকদিনে তাঁর ক্লিনিকে বেশ কয়েকজন রোগী এসেছেন যারা এই রোগে আক্রান্ত। তাই সাধারণ মানুষকে সতর্ক করতে তিনি দিয়েছেন বিস্তারিত পরামর্শ।
ভাইরাসজনিত ছোঁয়াচে রোগ
চিকেন পক্স একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যেটি Varicella Zoster Virus দ্বারা সৃষ্ট। এটি বাতাসের মাধ্যমে বা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে সহজেই ছড়াতে পারে। স্কিনে র্যাশ, জলভরা ফোস্কা, জ্বর, গলা ব্যথা, দুর্বলতা ইত্যাদি এর সাধারণ উপসর্গ।
চিকেন পক্সের র্যাশগুলো সাধারণত তিনটি ধাপে দেখা যায়—
১. ছোট লাল গুটির মতো (বাম্প)
২. জলভরা ফোস্কা
৩. স্ক্যাব হয়ে শুকিয়ে যাওয়া
চিকেন পক্স সংক্রমিত হওয়ার আগেই রোগী অন্যকে সংক্রমিত করতে পারে, এমনকি র্যাশ দেখা দেওয়ার দুদিন আগেও। সাধারণত ১০ দিন সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে।
কারা বেশি ঝুঁকিতে?
-
শিশুদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়, বিশেষত যাদের ইমিউনাইজেশন হয়নি
-
যেসব প্রাপ্তবয়স্কের আগে কখনো চিকেন পক্স হয়নি
-
যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম
-
গর্ভবতী নারী, ক্যান্সার রোগী, কেমোথেরাপি নিচ্ছেন এমন ব্যক্তিরা
জটিলতা কী হতে পারে?
চিকেন পক্স সাধারণত মৃদু হলেও কিছু ক্ষেত্রে তা মারাত্মক হতে পারে। হতে পারে:
-
ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন
-
নিউমোনিয়া
-
রেই’স সিনড্রোম (বিশেষত অ্যাসপিরিন খেলে)
-
এনসেফালাইটিস
-
ডিহাইড্রেশন
-
ব্লাড ক্লট
কী করবেন চিকেন পক্স হলে?
-
পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও জলপান
-
সুষম ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার (যেমন ডিম, মাছ, ডাল, মুরগি)
-
অ্যান্টি-অ্যালার্জিক লোশন বা ওষুধ প্রয়োগ
-
স্ক্র্যাচ না করা এবং নখ কেটে রাখা
-
প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে জ্বরের সময়
-
প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ গ্রহণ
-
অন্যান্যদের থেকে নিজেকে আলাদা রাখা
চিকেন পক্সের ভ্যাকসিনেশন
-
১২–১৫ মাস বয়সে প্রথম ডোজ
-
৪–৬ বছর বয়সে দ্বিতীয় ডোজ
-
১৩ বছরের বেশি বয়সীদের ২টি ডোজ, ২৮ দিন ব্যবধানে
ভ্যাকসিন না থাকলে যেকোনো বয়সে এই রোগ হতে পারে—এমনকি ৯০ বছর বয়সেও।
কখন হাসপাতালে যাবেন?
-
দীর্ঘদিন ধরে জ্বর না কমলে
-
শ্বাসকষ্ট বা ঘাড় শক্ত হয়ে গেলে
-
চোখ লাল হয়ে গেলে
-
অতিরিক্ত বমি বা ডিহাইড্রেশন হলে
-
খেতে না পারলে
ডা. মল্লিক বলেন, "চিকেন পক্স একটি ভাইরাল অসুখ, তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সঠিক যত্ন, পুষ্টি এবং বিশ্রামে অধিকাংশ মানুষই সেরে ওঠেন। তবে যেকোনো জটিলতা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।"
ইমরান