
ছবি:সংগৃহীত
পাকিস্তানের সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে তিনটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। চীন ও তুরস্কের পাশাপাশি এমন একটি দেশও পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ করে, যার নাম শুনে অনেকেই বিস্মিত হবেন, সেই দেশটি হলো নেদারল্যান্ডস। চীনের পর পাকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ বর্তমানে নেদারল্যান্ডস। এই তথ্য ভারতের জন্য কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং কিছুটা উদ্বেগজনকও।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস. জয়শঙ্কর তাঁর ইউরোপ সফরে তিনটি দেশ পরিদর্শন করছেন, জার্মানি, ডেনমার্ক এবং নেদারল্যান্ডস। এই ছয় দিনের সফরে তিনি প্রথমে ১৯ মে নেদারল্যান্ডসে পৌঁছান। এটি ছিল ‘অপারেশন সিন্দুর’–এর পর তাঁর প্রথম বিদেশ সফর এবং পাকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ নেদারল্যান্ডস থেকেই সফর শুরু করাটা তাৎপর্যপূর্ণ।
ড. জয়শঙ্কর এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ লিখেছেন, "হেগ-এ নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক শোফের সঙ্গে সাক্ষাতে আনন্দিত হয়েছি। আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানিয়েছি এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসের দৃঢ় অবস্থানের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছি।" তিনি আরও লেখেন, "ভারত-নেদারল্যান্ডস অংশীদারিত্বকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তাঁর প্রতিশ্রুতি প্রশংসনীয়।"
যদিও নেদারল্যান্ডস পাহলগামে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করেছে, তারপরও তারা ভারত ও পাকিস্তানকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন ওঠে, ভারত নেদারল্যান্ডস ও পাকিস্তানের মধ্যকার সামরিক সম্পর্ক কীভাবে দুর্বল করতে পারে?
নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ২২ বিলিয়ন ডলার, যেখানে পাকিস্তানের গোটা ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য মাত্র ১৫ বিলিয়ন ডলারের। ভারত এই অর্থনৈতিক সুবিধাকে ব্যবহার করে নেদারল্যান্ডসের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যেন তারা পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ না করে। পাশাপাশি, নেদারল্যান্ডস ভারতের প্রতিরক্ষা বাজারে প্রবেশ করতে চায় এবং ভারতও তাদের সেই সুযোগ দিতে প্রস্তুত। এ থেকেই স্পষ্ট, ভারতের কাছে কৌশলগত ও অর্থনৈতিক দু’দিক থেকেই সুবিধা রয়েছে।
নেদারল্যান্ডসের জন্য প্রশ্ন হচ্ছে, পাকিস্তানের জন্য ভারতের মতো একটি বড় বাণিজ্যিক অংশীদারকে চরমভাবে অসন্তুষ্ট করা কি তাদের পক্ষে যুক্তিযুক্ত হবে? কারণ, নেদারল্যান্ডসের পাকিস্তানের প্রতি কোনও রাজনৈতিক পক্ষপাত নেই, যেমনটা চীন বা তুরস্কের আছে। তাছাড়া, ভারত ও নেদারল্যান্ডসের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কও এমন নয় যে, পাকিস্তানের জন্য সেই সম্পর্ক নষ্ট করবে।
চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের মতো নেদারল্যান্ডসও পাকিস্তানকে বহু বছর ধরে অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে। এসব অস্ত্রের অধিকাংশই নৌবাহিনীর জন্য। ১৯৯০-এর দশকে, পাকিস্তান নেদারল্যান্ডসসহ কয়েকটি দেশ থেকে চারটি মাইন হান্টার (Mine Hunter) সংগ্রহ করে, যা সমুদ্রের তলদেশে পাতা বিস্ফোরক খুঁজে বের করে ধ্বংস করার কাজে ব্যবহৃত হয়। ২০২১ সালে তারা আরও দুটি ব্যবহৃত মাইন হান্টার কেনে এবং এখন নেদারল্যান্ডস আরও যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ করছে।
২০১৭ সালে, পাকিস্তানের সঙ্গে একটি চুক্তি হয় যাতে একটি ডাচ কোম্পানি দুটি পেট্রল জাহাজ নির্মাণের দায়িত্ব পায়। এসব কার্যকলাপ ভারতের দৃষ্টিতে উদ্বেগজনক, কারণ এটি পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতাকে সমর্থন জোগাচ্ছে।
ভারতের জন্য এখন গুরুত্বপূর্ণ হলো কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক কৌশলের মাধ্যমে নেদারল্যান্ডসকে বোঝানো যে, পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক বজায় রাখা তাদের স্বার্থের পরিপন্থী হতে পারে। বাণিজ্যিক সুবিধা, প্রতিরক্ষা চুক্তি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সুযোগ ব্যবহার করে ভারত নেদারল্যান্ডসকে এই পথে পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করতে পারে।
আঁখি