
ছবিঃ সংগৃহীত
মাত্র তিন রাত টানা পর্যাপ্ত ঘুম না হলেই হৃদযন্ত্র ক্ষতির দিকে এগোতে শুরু করে , এমনটাই দেখা গেছে সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাম্প্রতিক গবেষণায়। গবেষণাটি প্রকাশিত হওয়ার পর চিকিৎসা মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
গবেষণায় অংশ নেন ১৬ জন তরুণ, সুস্থ পুরুষ। তাদের একটি পরীক্ষাগারে কয়েকদিন রাখা হয়, যেখানে তাদের খাদ্যাভ্যাস, দৈনন্দিন কাজকর্ম ও আলো-আঁধারি সবকিছু নিয়ন্ত্রিত ছিল। অংশগ্রহণকারীরা দুই ধরনের ঘুমচক্র অনুসরণ করেন— একবার তিন রাত পর্যাপ্ত ঘুম (৮.৫ ঘণ্টা) এবং আরেকবার তিন রাত ঘুম সীমিত (৪.২৫ ঘণ্টা)।
প্রতিটি ঘুমচক্র শেষে তাদেরকে একটি সংক্ষিপ্ত ও উচ্চ-তীব্রতার সাইক্লিং অনুশীলনে অংশ নিতে বলা হয়। অনুশীলনের আগে ও পরে রক্ত পরীক্ষা করা হয়, যেখানে প্রায় ৯০ ধরনের প্রোটিন বিশ্লেষণ করা হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, ঘুমের অভাবে রক্তে একাধিক প্রদাহজনিত প্রোটিনের পরিমাণ বেড়ে যায়, যেগুলো দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। এ প্রোটিনগুলো রক্তনালিতে ক্ষতি করে এবং হৃৎপিণ্ডের নানা জটিলতা — যেমন হৃদ্স্পন্দনের অনিয়ম, করোনারি হৃদরোগ এবং হৃদ্অসফলতা সৃষ্টি করতে পারে।
আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, সাধারণত শরীরচর্চা পরবর্তী যে উপকারী প্রোটিন (যেমন ইন্টারলিউকিন-৬ ও বিডিএনএফ) শরীরকে সজীব রাখে, তা কম ঘুমের পর স্বাভাবিক মাত্রায় বাড়েনি। অর্থাৎ ঘুম কম হলে শরীরের প্রাকৃতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হয়।
গবেষণার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল — রক্ত সংগ্রহের সময়। দেখা যায়, সকাল ও সন্ধ্যার মধ্যে প্রোটিন মাত্রায় পার্থক্য থাকে, এবং ঘুম সীমিত হলে এ পার্থক্য আরও তীব্র হয়। এটি ইঙ্গিত দেয়, ঘুম কেবল রক্তের উপাদান পরিবর্তন করে না, বরং তা কখন প্রকাশ পাবে সেটিও নিয়ন্ত্রণ করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই গবেষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা। আধুনিক জীবনে ঘুমকে তুচ্ছ করে অনেকেই প্রযুক্তি, কাজ বা সামাজিক যোগাযোগে ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু শরীর প্রতিটি ঘুমহীন রাতের হিসাব রাখে — নীরবে, রাসায়নিকভাবে এবং কোনো রকম ছাড় না দিয়ে।
নোভা