ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

অধিকার নারীর প্রাপ্য

নানজীন বেগম

প্রকাশিত: ১৭:৩৭, ২২ মে ২০২৫

অধিকার নারীর প্রাপ্য

সমাজের সমসংখ্যক নারীর ওপর নির্বিচার শোষণ, অপশাসন সংস্কারাচ্ছন্ন বলয়ের নিয়ত লাঞ্ছনা। সেখানে অসমতা, বিচারহীনতা, শারীরিক লাঞ্ছনা ছাড়াও শ্রমের যে অবমূল্যায়ন তা মোটেও বিধিসম্মত নয়। সমাজের পেশিশক্তির চরম প্রতাপ আর প্রতিপত্তিই এমন সব অঘটনকে উস্কে দেয়। বর্তমানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নতুন বদলে যাওয়া বাংলাদেশের গঠন প্রক্রিয়ায় নানামাত্রিক সমতাহীনতাও দৃষ্টিকটুভাবে দৃশ্যমান। সংগঠিত নারীরাও সেভাবে পিছিয়ে থাকছে না। নানামাত্রিক শাসন-শোষণ আর বঞ্চনার ইতিবৃত্ত আজকের নয়। যুগ- যুগান্তরের অনধিগম্য এক শেকল যা আজও প্রতিরোধ করা যায়নি। উচ্চকণ্ঠে বহুবার সচকিত হয়ে নারী সমাজ ঘরে বসেও থাকেনি। আন্দোলন আর প্রতিরোধে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ পথযাত্রার সম্মুখ সমরকে মোকাবিলা করতে পেছন ফিরে তাকায়নি। সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে স্বৈরাচারী সরকার পতনের বৈপ্লবিক অভিগমন জাতিকে নবতর আঙিনার দ্বার উন্মোচন করে। তেমন গণঅভ্যুত্থানে নারীর সংগ্রামী অভিযাত্রা কোনো অংশেই কম ছিল না পুরুষের তুলনায়। তাই অধিকারের বেলায় বিন্দুমাত্র সমঝোতায় আসার প্রশ্নই অবান্তর। বৈপ্লবিক অগ্রযাত্রার পরবর্তী সময় আবারও বিভেদ-বিভাজনের দুষ্টু চক্র মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। তেমন অভিযোগে নারী সমাজ পুনরায় ঐক্যের মিলনযজ্ঞে অধিকার আদায়ে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে তাদের সচেতন, সক্রিয় অবস্থান জানান দেয়। পুনরায় সড়কে নেমে এসে সোচ্চার প্রতিবাদে মানিক মিয়া এভিনিউতে জোরেশোরে আওয়াজ তুলে নির্যাতন, অসমতা, অন্যায্যতা, শ্রমের অবমূল্যায়ন এমন সব মৌলিক দাবিতে সমঝোতার প্রশ্নই উঠবে না আর কখনো।
শুধু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারই নয় বরং সব রাজনৈতিক দলের সামনেও এমন বার্তা তুলে ধরে নারীরা সচেতন অভিব্যক্তিতে রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে অটল থাকবে। সহিংস বাতাবরণে নারীকে আটকে রাখার সুযোগ আর কাউকেই দেওয়া হবে না। এমন জোরালো কণ্ঠে শেকল ভাঙার যাত্রায় তাদের লড়াকু অভিগমন দমানো যাবে না বলে উচ্চ কণ্ঠে আবেদন ভেসে আসে। শারীরিকভাবে অপেক্ষাকৃত কোমল হলেও তারা মোটেও দুর্বল নয়। দেশের বিভিন্ন ক্রান্তিকালীন সময়ে নারী সমাজ গৃহে আটকা থাকেনি। সেই ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম ছাড়াও ’২৪-এর গণজাগরণে ছাত্রী সমাজের যে অকুণ্ঠ সমর্থন দৃঢ় মনোবল বিভিন্ন সময় সকলের সামনে উন্মোচিত হওয়া সমসংখ্যকের লড়াইয়ের ময়দানে নির্বিঘ্নে অংশ নেওয়া জাতির জন্য এক আকাক্সিক্ষত সংগ্রাম। তবে গণঅভ্যুত্থানের দশ মাস পর হতে না হতেই নারীর প্রতি মান্ধাতা আমলের শোষণ, বঞ্চনা, অপসংস্কার সব যেন মাথাচাড়া দেওয়ার দুরবস্থায়। সঙ্গত করণে ফের নারীদের একত্রিত হয়ে পথে নেমে আসাও সময়ের ন্যায্যতা। ক্ষোভ আর বিরক্তিতে নারী সমাজ আরও জানায়, তারা সরকার থেকে সব রাজনৈতিক সংগঠনে নারীর সচেতন অবস্থান নজরদারি করে সমতাভিত্তিক অগ্রযাত্রায় সবাইকে এক সুতায় বেঁধে রাখার অঙ্গীকার থেকে কখনো সরে যাওয়া যাবেই না। ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনেক পুরানো অসম বিধি সমাজ সংস্কারের অভ্যন্তরে জিইয়ে থাকে। সেখানে শুধু সমঝোতা নয় অধিকার ন্যায্যতা, প্রাপ্যতা সবই হিসাব নিকাশের আবর্তে জড়ানো। তাই বিন্দুমাত্র ছাড় নয় বরং সার্বিক ব্যবস্থাপনার আলোকে নৃশংসতা, প্রতিহিংসা অবদমন, লাঞ্ছনা-বঞ্চনার মূলে আঘাত করে চিরস্থায়ী নিরসনের স্বাচ্ছন্দ্য পথ খুঁজে নেওয়া জরুরি। শুধু নারী নয় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী হরেক মাত্রার নিপীড়ন ও বৈষম্যের শিকার। সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে  অনেক বৈষম্য মূল শিকড়ে জিইয়ে থাকার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার মতোই নয়। নারী-পুুরুষদের বিবদমান তারতম্য সব কালে ও যুগের এক বিসদৃশ্য সামাজিক প্রকোপ। যাকে ডিঙিয়ে যেত কত যুগ অতিক্রম করে গেল সেটাও যেন অনির্ধারিত যাত্রা সংকট। শুধু কি লড়াই, বিপ্লব আর অভ্যুত্থানে শরিক হওয়া? তার চেয়ে বেশি ছোট্ট পারিবারিক সংগঠনটিকে সাজিয়ে-গুছিয়ে সকলের মনোরঞ্জন করে কোনো এক সময় ছুটে যেতে হয় কর্মস্থলেও। বর্তমানে নারী পেশাজীবীর সংখ্যাও কম নয়। নিত্য নতুন বৈচিত্র্যিক পেশায়  অভিগমন নারী জাতির আধুনিকতার বরমাল্য। অফিস আদালতেও নারীদের নানামাত্রিক বিপন্নতার অপদৃশ্য সংবাদমাধ্যমে উঠে আসছে। সেখানেও সমান অধিকার থেকে বঞ্চনার ইতিবৃত্ত দুঃখজনক আর এক বলয়। যা নারীর সামনে চলার রাস্তাকে কণ্টকাকীর্ণ করে চলেছে।
সমাজের যা কিছু করার জন্য সবার আগে প্রয়োজন পড়ে অর্থের। অর্থের জোগান দেওয়া সহজাত আর এক সংকট তো বটেই। আবার নারীর ক্ষেত্রে তা হয়ে ওঠে আরও সঙ্গীণ। যা নির্যাতনের আর একমাত্রা বললে অতিকথন নয় কিন্তু। নারী অধিকার আদায়ে সমবেত হতে গেলে টাকা পয়সা ও জরুরি বলা হচ্ছে সমবেত নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে। নারীদের পোশাক ধূমপান এমন বিষয় নিয়ে বিরূপ মন্তব্য কোনোভাবেই সমীচীন নয়। এর আগে ছাত্রীরাও মাগুরায় শিশুকন্যা আছিয়ার ধর্ষণের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়ে রাস্তায় নেমে এসেছিল। এবার নামা হলো তাদের সহজাত অধিকারের প্রশ্নকে যাতে কোনো বাগবিতণ্ডায় আবৃত করা না হয়। সে জন্য পুনরায় সড়ক পথে তাদের উজ্জীবিত আহ্বানে সকলের দৃষ্টি  নিবদ্ধ করা হয়। এমন অধিকারভিত্তিক পথ সভায় আলাদাভাবে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের নাম একেবারেই আসেনি। বরং প্রতিক্রিয়াশীল যে সব শক্তি নারীর অধিকারের প্রশ্নকে ভিন্নমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার অপকৌশল চালিয়ে যাচ্ছে- সড়কে নেমে আসা নারীদের সেখানে আপত্তিই শুধু নয়, বিভিন্ন অনৈতিক বক্তব্যকে খণ্ডিত করতে তার বদ্ধপরিকর। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করে ঐতিহ্যিক গণজাগরণমূলক সংগীতের মূর্ছনায় পুরো সমাবেশ জমজমাট এক পথসভাকে উদ্দীপ্ত চেতনায় ভরিয়ে রাখে।

প্যানেল

×