ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

তেল সংকটে চলে না হাসপাতালের জেনারেটর, বিদ্যুৎ গেলে ভরসা টর্চ লাইট ও মোমবাতি

মন্জুরুল আহসান শামীম, কাউনিয়া, রংপুর 

প্রকাশিত: ২২:০৫, ২২ মে ২০২৫; আপডেট: ২২:০৬, ২২ মে ২০২৫

তেল সংকটে চলে না হাসপাতালের জেনারেটর, বিদ্যুৎ গেলে ভরসা টর্চ লাইট ও মোমবাতি

ছবি: সংগৃহীত

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তেলের অভাবে চালু হচ্ছে না জেনারেটর, নষ্ট হচ্ছে লাখ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে জেনারেটরটি। লোডশেডিংয়ের সময় বন্ধ থাকছে অস্ত্রোপচার। টর্চ কিংবা মোমবাতি জ্বালিয়ে চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

জানা গেছে, রোগীদের সেবার মান বাড়াতে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এছাড়া রোগীর অপারেশনসহ বিভিন্ন সময়ে নির্বিঘ্নে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতে হাসপাতালে অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন জেনারেটর বরাদ্দ দেওয়া হয় ২টি। এর মধ্যে একটি সচল থাকলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে প্রায় তিন বছর যাবত অন্য একটি জেনারেটর এখনো মেরামত হয়নি। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে জেনারেটরটি। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে চিকিৎসা সেবা নিতে এসে দুর্ভোগে পড়ছেন রোগী ও স্বজনেরা। তবে জ্বালানি তেলের প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না দেওয়ায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে জেনারেটরটি। প্রায়ই বন্ধ থাকছে অস্ত্রোপচারও।

মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া একাধিক রোগী বলেন, “সারা দিনে কয়েকবার বিদ্যুৎ যায়। এই গরমে আমাদের অনেক সমস্যা হয়। দিনের বেলা কষ্ট করে থাকলেও রাতে বেশি সমস্যা হয়। হাসপাতালে কোনো জেনারেটর নেই। রাতে কারেন্ট চলে গেলে পুরোই অন্ধকার হয়ে যায়। চিকিৎসা নিতে এসে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি আমরা।”

হাসপাতালে আসা রোগীরা বলছেন, “এত কোটি টাকা খরচ করে হাসপাতাল ভবন তৈরি করা হয়েছে, মেশিন বসানো হয়েছে। কিন্তু জেনারেটরই যদি না চলে, এগুলোর দরকার কী? রোগীদের অপারেশনের সময় বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটর না থাকায় কাজ বন্ধ হয়ে থাকে। ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। লোডশেডিংয়ের সময় মোমবাতি ও টর্চলাইট জ্বালিয়ে জরুরি সেবা দিতে হচ্ছে,” বলে জানান চিকিৎসকেরা।

হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের আত্মীয়-স্বজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “হাসপাতালের মতো এমন একটি জায়গায় কারেন্ট চলে গেলে রোগীদের জন্য বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। দিনের বেলা পাখা দিয়ে বাতাস নিয়ে কোনো রকমে চলা যায়, কিন্তু রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় পুরো হাসপাতাল অন্ধকার হয়ে যায়।”

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মেডিকেল অফিসার জানান, “বিদ্যুৎ না থাকলে অনেক গরম লাগে, কারণ জেনারেটর থাকলেও তা চলে না। রোগীদেরও তখন কষ্ট হয়। হাসপাতাল পুরো অন্ধকার হয়ে গেলে মোমবাতি ও টর্চলাইট জ্বালিয়ে জরুরি সেবা দেওয়া হয়।” স্থানীয়দের দাবি, হাসপাতালে রোগীদের কথা চিন্তা করে লোডশেডিংয়ের সময় জেনারেটর বা অন্য কোনো উপায়ে ফ্যানগুলো চালানোর ব্যবস্থা করা হোক, যাতে অন্তত রোগীদের কষ্ট কিছুটা কমে।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা সুজয় সাহা জানান, “জনবল সংকট ও তেলের বরাদ্দ না থাকার কারণে জেনারেটর চালানো সম্ভব হচ্ছে না। ইমার্জেন্সি সহ কয়েকটি রুমে আইপিএসের ব্যবস্থা রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” 

আসিফ

×