ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রাজনৈতিক বিবর্তনের মিশেল ‘পাখিদের বিধান সভা’ ॥ আহমেদুল কবির 

গৌতম পাণ্ডে

প্রকাশিত: ২২:১৯, ২২ মে ২০২৫

রাজনৈতিক বিবর্তনের মিশেল ‘পাখিদের বিধান সভা’ ॥ আহমেদুল কবির 

ড. আহমেদুল কবির

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও নাট্য নির্দেশক ড. আহমেদুল কবির। তার পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় ‘পাখিদের বিধান সভা’ নাটকের পরপর দুটি প্রদর্শনী হবে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টা ও সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। এ সম্পর্কে কথা হয় গুণী এ ব্যক্তিত্বর সঙ্গে।
আজকের মঞ্চায়ন নিয়ে বলুন।
চট্টগ্রামভিত্তিক সুফি দর্শন গবেষণা কেন্দ্র দারুল ইরফান রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রযোজিত নাটক ‘পাখিদের বিধান সভা’। নাটকটি মঞ্চায়ন করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগ। পারস্যের কবি ফরিদ উদ্দীন আত্তার রচিত ধ্রুপদী কবিতা মানতিকুত্ তোয়ায়ের অবলম্বনে এর নাট্যরূপ দিয়েছেন নাট্যকার ড. শাহমান মৈশান। 
নাটকের ক্ষেত্রে ফরিদ উদ্দিন আত্তারের কবিতা নির্বাচন কেন ? 
স্বদেশ-প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের ক্লাসিক এবং আধুনিক সাহিত্য নিয়ে কাজ করাটা আমাদের বরাবরের স্বাচ্ছন্দ্য। পারস্য প্রতিভায় ফেরদৌসী-শেখ সাদী-জালালউদ্দীন রুমী আমাদের কাছে অধিক পরিচিত। জালালউদ্দীন রুমীর শিক্ষাগুরু ফরিদ উদ্দীন আত্তার। চিরন্তন আধ্যাত্মিক জিজ্ঞাসার সঙ্গে সমকালীন বিশ্ববাস্তবতার রাজনৈতিক বিবর্তনকে মিশেল ঘটিয়ে এক অসামান্য সৃজন আমাদের বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাহমান মৈশানের। ফলে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্প্রীতি, সহাবস্থান, সহিষ্ণুতা, এবং মনুষত্বের মূল্যায়নের স্বার্থে বিষয় হিসেবে ‘পাখিদের বিধান সভা’কে বেছে নেওয়া। 
‘পাখিদের বিধান সভা’ নির্মাণ প্রক্রিয়া নিয়ে বলেন।
একদিকে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে তাত্ত্বিক বোধের অন্বেষণ অপরদিকে মহড়ায় নিখুঁত চরিত্র চিত্রণ। পুরো কাহিনীটি যেহেতু পাখিদের চরিত্রের মোড়কে বিশ্বজনিন বার্তা ঘোষিত হয় ফলে শব্দ-বাক্য-সংলাপের দৃশ্যকল্প শারীরিক ভাষায় নির্মাণ ছিল ভাঙ্গা-গড়ার মধ্যে দিয়ে বিশ্বস্ত গড়ন। প্রতিটি শব্দের অন্তর্নিহিত অর্থকে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা যেন দৈহিক-বাচিক-সাত্ত্বিক অবয়বে দর্শক-শ্রোতাদের হৃদয়ের গহীনে প্রবেশ করাতে পারে সেটা ছিল এক গভীর অনুশীলন। পাশাপাশি কস্টিউম ও লাইটের তীক্ষè ও বহুমাত্রিক প্রয়োগে মহাজাগতিক পরিভ্রমণ যেন ভিন্ন ভিন্ন স্তরকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে, সেটাই এক অধরাকে ধরতে চাওয়ার আমাদের সমবেত প্রচেষ্টার প্রতিফলন।
ভ্রমণের মাধ্যমে চরিত্রায়ন কিভাবে ?
ভ্রমণতো এক অর্থে জ্ঞানের সম্প্রসারণ। মহড়া শুরু প্রথম সেমিস্টারে পড়াকালীন। মহড়ার প্রথম ধাপ চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির নানুপুরে। সেখানকার আধ্যাত্মিক পরিবেশ চরিত্রদের গভীরতার সঙ্গে যুক্ত হতে যেমন সহায়ক হয় তেমনি গাছ-গাছালি, পাখিদের অবাধ বিচরণের মাঝে তাদের অবস্থান পাখিদের প্রতীকী যাত্রার যথার্থ উপলব্ধি এনে দিতে সহায়ক হয়। ফলে সেখান থেকে তারা এক ধরনের বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং আত্ম-অন্বেষণের সুযোগ পায়। আবার উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের উন্মুক্ত পরিবেশে তাদের মহড়া, শারীরিক কাঠামোগত অনুশীলন, পাখির চরিত্র, পাখিদের দ্বন্দ্ব এবং পাখিদের যাত্রাপথের বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে পাখিদের মুক্তির প্রতীকী ধারণাকে জীবন্ত করে তুলতে সহায়ক হয়। ফলে নাট্য নির্মাণের এই যে ভ্রমণ এবং পরিভ্রমণ এটাকেই আমরা বলছি ভ্রমণের মাধ্যমে চরিত্রায়ন।
আজকের দ্বৈত শো নিয়ে প্রত্যাশার কথা বলেন। 
এই মৌসুমে শেষবারের মতন মঞ্চায়ন হচ্ছে ‘পাখিদের বিধানসভা’। স্টুডেন্টরা পাস করে যাবে ফলে নিয়মিত মঞ্চায়ন সব সময় সম্ভব না। ফলে যে বৃহৎ কর্মযজ্ঞ প্রডাকশানকে ঘিরে তা অধিক দর্শক উপভোগ করুন সেই প্রচেষ্টায় আমাদের এই সমবেত আয়োজন।
গৌতম পাণ্ডে

×