ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শখের বশে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা

মো. মাসুদ হোসেন

প্রকাশিত: ১৭:৪৯, ২২ মে ২০২৫

শখের বশে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা

শখের কাজটাকে কাজে লাগিয়ে এখন ঘরে বসে নিজের হাতের তৈরি কেক বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন হাফছা বিনতে হান্নান। অনলাইন খাবার ব্যবসা সারাদেশেই এখন জনপ্রিয়। বাসায় বসে অর্ডার করলেই পৌঁছে দেওয়া হয় কাক্সিক্ষত খাবার। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ঘরে বসেই মাসে আয় করছেন এই নারী উদ্যোক্তা। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা হাফছার হাতে বানানো সুস্বাদু কেক খেয়ে সন্তুষ্ট ক্রেতারা। ২০২২ সালে করোনাকালীন সময়ে ঘরে বসে অবসর সময়কে কাজে লাগাতে শুরু করেন শখের কেক তৈরির কাজ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে Hafsa's cake world নামে পেজ খুলে তার বানানো কেকের ছবি আপলোড করতে থাকেন তিনি। প্রবাসী স্বামীর কাছ থেকে ২০/২৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করা ব্যবসায় তিনি এখন পুরাই স্বাবলম্বী।
মাস্টার্স পাস সফল এই নারী উদ্যোক্তা জানান, ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষে পড়া অবস্থায় আমার বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু আমার ইচ্ছে ছিল নিজে স্বাবলম্বী হবো। ২০২২ সালে আমি ফেসবুকে পেজ খুলে হোম মেড কেক সার্ভিস শুরু করি। আমি কয়েকটি প্রফেসনাল সেফ কোর্স করে বেকিং এবং বেকারি সম্পর্কিত সব ধরনের খাবার তৈরি শিখেছি। প্রথমে ফেসবুক পেজ ওপেন করার পরে মানুষকে কনভেন্স করতে আমার বেশ সময় লেগেছে। করোনায় যখন দেশে লকডাউন শুরু হয়, তখন মানুষ হোম মেড কেকের প্রতি নির্ভরশীল হতে শুরু করেন। কারণ লকডাউনের জন্য রেস্টুরেন্ট বন্ধ হওয়ায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য কেক প্রয়োজন হলে তখন অনলাইনই ছিল ভরসা। তখন আমার পেজে অর্ডার বাড়তে শুরু করে। আর এ সবই করে যাচ্ছি আমার সংসার সামলে। ধীরে ধীরে কেকের সুনাম ছড়িয়ে পড়ার পর চাঁদপুরের হাজীগঞ্জসহ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অর্ডার আসতে লাগল। বিভিন্ন প্রকারের কেক তৈরি করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য চকোলেট, ভ্যানিলা, স্ট্রবেরি, লেমন, অরেঞ্জ, বাটার কচ, পানদান ফ্লেভারের বিভিন্ন ডিজাইনের কেক বেশি তৈরি করেন। তা ছাড়া ছোট বাচ্চাদের জন্মদিনের ডল কেক, ডোরিমন, কার কেকসহ বিভিন্ন কার্টুনের কেক বানাতে পারদর্শী তিনি। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো তিনি ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী হুবহু ডিজাইন সংবলিত কেক তৈরি করে চমক লাগিয়ে দিতে পারেন। প্রথমে ৪৫০ টাকার একটি কেক বিক্রি করে পজেটিভ ফিডব্যাক পাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত তার কেক বিক্রি হয়েছে প্রায় ২ হাজারের বেশি। অর্ডারের নির্ধারিত তারিখের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কেক সরবরাহ করা হয়। এতে করেই প্রতি মাসে ৩০-৩৫ হাজার টাকা আয় হচ্ছে তার। ইনকামের পাশাপাশি কেক তৈরি করা এখন তার নেশা হয়ে গিয়েছে।
তিনি বলেন, আমার ইনকামের টাকা দিয়ে সন্তানসহ নিজের টুকটাক খরচ চালাতে পারি। এছাড়া আমার সামর্থ্য অনুযায়ী সমাজের দুঃস্থ ও অসহায়দের পাশে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছি। নারী উদ্যোক্তা হাফছা বিনতে হান্নান বলেন, সাহস করে শুরু করেছিলাম এখন তার সুফল পাচ্ছি। এই ব্যবসার মাধ্যমেই মানুষ আমাকে চিনতে পেরেছে। নিজ পরিবারসহ আত্মীয়স্বজন ও সমাজের মানুষের কাছ থেকে পাচ্ছি অনেক সম্মান। সমাজের শিক্ষিত অথচ বেকার রয়েছেন এমন নারীদের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, নিজস্ব চিন্তা-ধারা কাজে লাগিয়ে সাহস করে উদ্যোগ গ্রহণ করুন অবশ্যই সফল হবেন।

প্যানেল

×