
ছবি : সংগৃহীত
যুক্তরাজ্যে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে সেরা কিছু বিশ্ববিদ্যালয়। তবে শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুনাম নয়, চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে—আপনার পছন্দের কোর্সটি দেশটির বর্তমান চাকরির বাজারে কতটা উপযোগী।
আপনি যদি ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যে পড়াশুনার কথা ভেবে থাকেন, এই তালিকাটি আপনাকে এমন ১০টি কোর্সের ধারণা দেবে যা সরাসরি সেইসব খাতে নিয়ে যেতে পারে যেখানে দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে, চাহিদা বাড়ছে এবং ক্যারিয়ারের সম্ভাবনা প্রবল।
১. ডেটা সায়েন্স ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)
যুক্তরাজ্য এআই ও ডেটা-নির্ভর উদ্ভাবনে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করছে। লন্ডন, ম্যানচেস্টার ও এডিনবরার মতো শহরগুলো এখন প্রযুক্তির আন্তর্জাতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। প্রেডিকটিভ অ্যানালিটিক্স, মেশিন লার্নিং বা AI নীতিশাস্ত্র—এই খাতে চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।
Imperial College London ও University of Edinburgh-এর মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাস্তবভিত্তিক ও ইন্ডাস্ট্রি কানেক্টেড প্রোগ্রাম অফার করে।
২. ক্রিয়েটিভ আর্টস, মিডিয়া ও ডিজাইন
আপনি যদি সৃজনশীল হন, যুক্তরাজ্য হতে পারে আপনার জন্য আদর্শ জায়গা। চলচ্চিত্র, ফ্যাশন, গ্রাফিক ডিজাইন, বিজ্ঞাপন, গেম ডেভেলপমেন্ট—সবকিছুতেই রয়েছে বড়সড় ইন্ডাস্ট্রি।
UAL (University of the Arts London), Bournemouth University ও Goldsmiths-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেয় এমন কোর্স পরিচালনা করে, যেখানে অনেক শিক্ষার্থী গ্র্যাজুয়েশনের আগেই চাকরি পেয়ে যান।
৩. সাইবার সিকিউরিটি ও ডিজিটাল ফরেনসিকস
বিশ্বব্যাপী সাইবার হুমকি বাড়ছে, এবং যুক্তরাজ্যও এর বাইরে নয়। ফলে সিস্টেম সুরক্ষা ও সাইবার অপরাধ তদন্তে দক্ষ পেশাদারের প্রয়োজনও বাড়ছে।
Royal Holloway, Kent ও South Wales-এর মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই বিষয়ে বিশেষায়িত কোর্স পরিচালনা করে, যেগুলোর অনেকগুলো UK-এর National Cyber Security Centre দ্বারা অনুমোদিত।
৪. পরিবেশ বিজ্ঞান ও টেকসই উন্নয়ন
যুক্তরাজ্য কার্বন নিরপেক্ষতা ও টেকসই উন্নয়নের জন্য উচ্চাশা নির্ধারণ করেছে। ফলে জলবায়ু বিজ্ঞান, সবুজ শক্তি, পরিবেশনীতি ও কনসাল্টিং খাতে চাকরির সুযোগ বাড়ছে।
University of Exeter, University of Leeds ও UEA (University of East Anglia) পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়নের ওপর ফোকাসড প্রোগ্রাম চালায়।
৫. ফাইন্যান্স ও ফিনটেক
লন্ডন বিশ্বব্যাপী একটি বড় ফাইন্যান্স হাব, এবং ফিনটেকেও যুক্তরাজ্য দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। আপনি যদি ব্যবসামুখী ও সংখ্যাবান্ধব হন, তাহলে এ খাতটি ভালো বিকল্প হতে পারে।
LSE, Warwick ও Bayes Business School বিশ্বজুড়ে সম্মানিত প্রোগ্রাম চালায়, যেগুলোর অনেকগুলোতে ইন্টার্নশিপ বা কুপ প্রোগ্রাম থাকে।
৬. বায়োমেডিকেল বিজ্ঞান ও জনস্বাস্থ্য
যুক্তরাজ্যে শুধু চিকিৎসক নয়, গবেষক, ল্যাব বিশ্লেষক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদেরও প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
King’s College London, University of Glasgow ও Birmingham-এ এই বিষয়ে প্রোগ্রাম চালু রয়েছে, যেগুলো আপনাকে হাসপাতাল, গবেষণাগার ও আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন WHO বা UNICEF-এ কাজের সুযোগ তৈরি করে দেয়।
৭. গেম ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট
যদি আপনি গেম ও প্রযুক্তি ভালোবাসেন, তাহলে জেনে খুশি হবেন যে যুক্তরাজ্যে ইউরোপের অন্যতম বড় গেম ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে।
Abertay University (যারা প্রথম গেম ডিজাইন ডিগ্রি চালু করে), Portsmouth ও Staffordshire গেম ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টের ওপর হাতে-কলমে প্রশিক্ষণমূলক কোর্স চালায়।
৮. শিক্ষা ও শিক্ষকতা
যুক্তরাজ্যে যোগ্য শিক্ষকের ঘাটতি বাড়ছে, বিশেষত বিজ্ঞান, গণিত ও কম্পিউটিং বিষয়ে। যদি শিক্ষকতা পেশায় আগ্রহ থাকে, তবে এখনই সময়।
University of Cambridge, Reading ও University of Glasgow শক্তিশালী শিক্ষা ও PGCE প্রোগ্রাম চালায়, যা যুক্তরাজ্যে শিক্ষক হিসেবে কাজ করার যোগ্যতা দেয়।
৯. লজিস্টিকস ও সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও ই-কমার্সের দ্রুত বৃদ্ধি এই খাতে বিশেষজ্ঞদের চাহিদা বাড়িয়েছে। উৎপাদন থেকে ডেলিভারি পর্যন্ত, সবকিছু যেন সুষ্ঠুভাবে চলে, সেটা নিশ্চিত করাই এ কাজের মূল বিষয়।
Cranfield, Warwick ও University of Hull বাস্তবভিত্তিক ও ইন্ডাস্ট্রি-কানেক্টেড কোর্স চালায় যা এই বিষয়ে দক্ষতা বাড়ায়।
১০. মনোবিজ্ঞান ও মানসিক স্বাস্থ্য
বিশ্বজুড়ে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে, এবং যুক্তরাজ্য স্কুল, কর্মক্ষেত্র ও সমাজে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা বাড়াতে মনোযোগ দিচ্ছে। ফলে এই খাতে দক্ষ পেশাদারের চাহিদা বেড়েছে।
University of Bath, Sussex ও York মনোবিজ্ঞান ভিত্তিক কোর্স চালায়, যা কাউন্সেলিং, মানবসম্পদ, শিক্ষা বা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট হওয়ার পথ তৈরি করে।