ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ভিন্নধর্মী প্রদর্শনী ‘ফেয়ার ওয়াটার’

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মনোয়ার হোসেন 

প্রকাশিত: ০০:৪৮, ২৩ মে ২০২৫

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনালয়ে বৃহস্পতিবার ফেয়ার ওয়াটার শীর্ষক প্রদর্শনীর নিদর্শন দেখছেন দর্শনার্থীরা

সবকিছুরই শেষ আছে। তবে কিছুতেই যেন শেষ হচ্ছে না দাবি আদায়ের আন্দোলন। মিটছে না নানা মত ও পথের বিভাজন। সেই সূত্রে অধিকার আদায়ের দাবিতে  উত্তাল ছিল বিগত সপ্তাহের শহর ঢাকার দিনরাত্রি। নানা দাবি নিয়ে রাজনৈতিক দল থেকে শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমেছে। দাবি আদায়ের সূত্র ধরে সড়ক অবরোধ করে চলেছে আন্দোলন।  ফলশ্রুতিতে থেমে গেছে গাড়ির চাকা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই রাস্তায় আটকে থেকেছে বাস, পিকআপ, ব্যক্তিগত গাড়িসহ বিভিন্ন বাহন। শহরের প্রধান সড়কসহ পথে পথে সৃষ্টি হয়েছে যানজট। তাই স্বল্প দূরত্বও পাড়ি দিতে লেগেছে দীর্ঘ সময়। এমন বাস্তবতায় নাগরিকদের পোহাতে হয়েছে ভোগান্তি।

বিশেষ করে সপ্তাহের শেষ দুইদিন বুধ ও বৃহস্পতিবার সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে নগরবাসীকে। গাড়ির চাকা থমকে যাওয়া এবং সড়ক অবরুদ্ধ হওয়ায় হেঁটে পৌঁছুতে হয়েছে গন্তব্যে। একদিকে সড়ক অবরোধ এবং অপরদিকে বৃষ্টির ঝাপটাÑ দুইয়ে মিলে বায়ান্ন বাজার তিপান্ন গলির শহর ব্যাপক বিড়ম্বনার হেতু হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়া সড়ক নগরবাসীর চলাচলে বাড়িয়েছে ভোগান্তির মাত্রা। এর পর মধ্যে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে যানজটে থমকে যায় ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো। 
এবার আসি ভিন্ন প্রসঙ্গে। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে চলছে এখন গ্রীষ্মকাল। আর এই গ্রীষ্মকালের সূত্র ধরে বৈশাখ পেরিয়ে এসেছে মধু মাস জ্যৈষ্ঠ। গরমের অস্বস্তির উল্টোপিঠে মধু মাস নিয়ে এসেছে স্বস্তির সুবাতাস। চোখে পড়ছে ভোজনবিলাসী বাঙালির রসনা মেটানো রকমারি ফল। আম-জাম, কাঁঠাল-লিচুসহ ঋতুনির্ভর লোভনীয় ফলসমূহ উঁকি দিচ্ছে রাজধানীর ফলের দোকানগুলোয়। ফুটপাতের ভ্রাম্যমাণ ভ্যানগাড়ির দোকান থেকে স্থায়ী কাঠামোর ফলের দোকানগুলো ছেয়ে গেছে মৌসুমি ফলে। এসব ফলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমাহার ঘটেছে নানা জাতের আমের। তাই মূল সড়কের সমান্তরালে অলি-গলিতেও বিক্রি হচ্ছে হিমসাগর, ল্যাংড়াসহ রকমারি স্বাদ ও গড়নের আম।

দামটাও এখন নাগালের মধ্যে। তাই আমের চাহিদাও বেশি। তাই অন্য ফলের চেয়ে আমের বিকিকিনিও বেশি। বাজার ঘুরে দেখা যায়, কেজিপ্রতি রাজশাহীর হিমসাগর মিলছে ১০০ টাকার মধ্যে। সাতক্ষীরার হিমসাগর পাওয়া যাচ্ছে ৮০ টাকায়। ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে সুগন্ধী আম ল্যাংড়া। তবে মৌসুমের আরেক আকর্ষণীয় ফল লিচুর দামটা বেশ চড়া। একশ’ রাজশাহীর লিচু কিনতে হচ্ছে ৪৫০ টাকায়। একইভাবে ডায়াবেটিসসহ নানা রোগের জন্য উপকারী ফল জামের দাম নেওয়া হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪০০ টাকা।
ভিন্নধর্মী প্রদর্শনী ‘ফেয়ার ওয়াটার’॥  বর্তমানে শহরের নানা প্রান্তের গ্যালারিগুলোয় চলছে বহুমাত্রিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী। তবে এসব শিল্পায়োজনের মাঝে ভিন্নধর্মী এক প্রদর্শনী চলছে জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনালয়ে।  ফেয়ার ওয়াটার শিরোনামের প্রদর্শনীটিতে জলের সঙ্গে জীবনের সংযোগকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। মৃৎপাত্রের তৈরি নানা নিদর্শনের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানির অধিকার রক্ষার বিষয়ে বার্তা দেওয়া হয়েছে। জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ ধরে রাখতে পানিঘটিত বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলার কৌশল তুলে ধরা হয়েছে। পানির সমতা নিশ্চিতে প্রতিবন্ধকতাসমূহ উন্মোচিত করা হয়েছে। উল্টোদিকে খুলনার দাকোপসহ বিভিন্ন অঞ্চলের বিশুদ্ধ পানিবঞ্চিত মানুষের  বেদনার্ত বয়ান হয়ে উঠেছে এই প্রদর্শনী। 
বিশ শতকে কুমারদের গড়া নানা প্রকারের মৃৎপাত্রের ঠাঁই হয়েছে প্রদর্শনীতে। প্রদর্শনালয়ে প্রবেশ করতেই নজর চলে যায় বিশাল আকৃতির একটি মটকার পানে। ঢাকনাসহ পানি রাখার পাত্রটি সংগ্রহ করা হয়েছে ঢাকার নিকটবর্তী কলাকুপা বান্দুরা থেকে। এই মটকার পাশে দেখা মেলে কোলা নামের মাছ রাখার মাটির পাত্রে। একই টেবিলে উপস্থাপিত হয়েছে খুলনার তৈরি পানি সংরক্ষণের আরেক মৃৎপাত্র চাড়ি। এর পাশেই রয়েছে বাঁশের তৈরি লোকজ সংস্কৃতির অনুষঙ্গময় মাছ ধরার দুই সরঞ্জাম চাই ও পলো। পৃথকভাবে দর্শনার্থীকে কাছে টানে জল শীতল রাখার আরেক মৃৎপাত্র সুরাই। ধাতব আশ্রিত শৈল্পিক আঙ্গিকে গড়া বিচিত্র গড়নের জগ কিংবা গাডু নামে পানি রাখার পাত্র স্মরণ করিয়ে দেয় পুরনো দিনের কথা। এসবের সঙ্গে আছে রকমারি নক্সার আল্পনায় আবৃত এক কলস বা কলসি।   
এসব নিদর্শনের সঙ্গে আলোকচিত্রের আশ্রয়ে সুপেয় পানির অভাবে জর্জরিত মানুষের জীবনের কষ্টকে তুলে ধরা হয়েছে প্রদর্শনীতে। এসব ছবিতে গ্রামের সুপেয় পানি না পেয়ে নদী বা পুকুরের দূষিত পানি সংগ্রহের দৃশ্যকল্প ধরা দিয়েছে। আলোকচিত্রের বাইরে উক্তির মাধ্যমে পানিবঞ্চিত মানুষের দুদর্শশার চিত্র  মেলো ধরা হয়েছে। তেমনই এক উক্তিতে খুলনার দাকোপ উপজেলার এক ব্যক্তি ভবিষ্যতে পানিপ্রাপ্তির অনিশ্চয়তা প্রসঙ্গে বলেছেন, সবার নিজস্ব পুকুর নেই। আমরা পাশের বাড়ির পুকুর থেকে পানি আনি। কিছুদিন পর তারা আর পানি দিতে রাজি হবে না। 
আগামী ৪ জুন পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী। যৌথভাবে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে জাতীয় জাদুঘর, লন্ডনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড ফ্ল্যাড ম্যানেজমেন্ট বিভাগ।

×