
ছবি : জনকণ্ঠ
গ্রীষ্মকালের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে সৌন্দর্য মেলে ধরেছে বনজুঁই। গ্রীষ্ম এলেই গ্রামাঞ্চলে মাঠে-ঘাটে, পথে-প্রান্তরে প্রায়ই দেখা যায় থোকায় থোকায় ফুটে এসব ফুল। ফুলগুলো সহজেই নজর কেড়ে নিচ্ছে স্থানীয়দের। ফুল দিনে ফোটে এবং রাতে সৌরভ ছড়ায়। এটি বনজ ফুল হলেও সৌন্দর্যের কমতি নেই। দেখে মনেই হবে না এটি অবহেলিত কোনো ফুল। অনেকের কাছে ‘বনজুঁই’ ভাটফুল, ভাটিফুল, ঘেটুফুল বা ঘণ্টাকর্ণ নামেও পরিচিত।
পর্যটন নগরী খ্যাত শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার আনাচে-কানাচে সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে নজর কাড়ছে ফুলটি।
উইকিপিডিয়া থেকে জানা যায়, বনজুঁইয়ের বৈজ্ঞানিক নাম Clerodendrum inerme। Infurchunatum প্রজাতির ফুল এটি। প্রায় ৪০০ প্রজাতির বনজুঁই পাওয়া যায় যাদের আদিনিবাস এশিয়া মহাদেশের বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায়। এটি গুল্মজাতীয় বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। গাছের প্রধান কাণ্ড খাড়া, সাধারণত ২-৪ মিটার লম্বা হয়। পাতা কিছুটা পানপাতার আকৃতির ও খসখসে। পাতা ৪-৭ ইঞ্চি লম্বা হয়। ডালের শীর্ষে পুষ্পথোকায় থোকায় ফুল ফোটে। পাপড়ি সাদা, তাতে বেগুনি মিশ্রণ থাকে। বনজুঁই সৌন্দর্যবর্ধন ছাড়াও নানা গুণে গুণান্বিত। ম্যালেরিয়া, চর্মরোগ ও পোকামাকড়ের কামড়ে এটি খুবই উপকারী।
সরাসরি ঘুরে দেখা যায়, ছোট আকৃতির এ ফুলটির পুংকেশর, পাপড়ি, পাতা ও কাণ্ড নিখুঁত কারুকার্যে সাজানো। মাঝের পুংকেশর ফুলটির সৌন্দর্য যেন আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ফুলের পাপড়ি ঝরে পড়ার পর লালচে বৃতির মাঝখানে সবুজ ও বেগুনি বীজ দেখতে একেবারে নাকফুলের মতো। মনে হয় যেন কারুকাজখচিত লালচে পাথরের মাঝে সবুজ অথবা গাঢ় বেগুনি চকচকে এক হীরার খণ্ড বসিয়ে রেখেছে। এ ফুলের মনমাতানো সৌন্দর্যে মুগ্ধ হবে যে কেউ। এর মিষ্টি গন্ধ মাতাল করে তোলে ফুলপ্রেমীদের মন। এছাড়া এর মনমুগ্ধকর সৌরভে প্রজাপতি, মৌমাছি, পিঁপড়াসহ নানা প্রজাতির কীটপতঙ্গের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো। এরা ফুলের সুগন্ধ ও সৌরভে ব্যাকুল হওয়ার পাশাপাশি ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে আসে।
ঝিনাইগাতীর ফাকরাবাদ এলাকার বাসিন্দা আশরাফ আলী মেম্বার ও কালা খালেক বলেন, ‘একটা সময় ভাটফুল, ভাটিফুল অনেক দেখা যেত। ক্ষেত-খামারের কিনারা, বাড়ির পাশে, গ্রামের রাস্তার ধারে, পাহাড়ের পাদদেশে, পতিত জমিতে, বন-বনবাদারে ফোটে এ ফুল। ফুলের সুবাস অনেক মিষ্টি। দেখতেও অনেক সুন্দর। এই ফুলগাছকে আমাদের স্থানীয় ভাষায় ভাটফুল বা ভাটিফুল বলা হয়।’
ডাকাবর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শুক্কুর আলী বলেন, ‘ঋতুরাজ গ্রীষ্মকালে দেখা যায় এ ফুল। এখানে-সেখানে নিজের সুন্দর রূপ ছড়িয়ে থাকে বনজুঁই (ভাটফুল, ভাটিফুল)। ফুলটি বাংলাদেশের আদি ফুল। দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ফুলের দেখা মেলে। নানা গুণে গুণান্বিত এ উদ্ভিদ।
সা/ই