
ছবি: সংগৃহীত
বৃষ্টি বা বজ্রপাতের সময় অনেকেই লক্ষ্য করে থাকেন, পুকুর বা জলাশয়ের আশপাশে হঠাৎ করেই কিছু মাছ— বিশেষ করে কই মাছ মাটির উপর উঠে এসে লাফালাফি করতে থাকে। এমন দৃশ্য গ্রামে বিশেষভাবে দেখা যায় বর্ষাকালে, বাংলা দিনপঞ্জিকায় যখন আশার বা শ্রাবণের সময় চলছে। যাদের বাড়ি খাল-বিল বা পুকুরঘেঁষে, তারা এ দৃশ্যের সঙ্গে পরিচিত। এই ঘটনাকে গ্রামের মানুষজন চেনেন "মাছ উজানো" নামে।
"উজান" শব্দটি সাধারণত স্রোতের বিপরীত দিকে যাওয়াকে বোঝায়। কিন্তু এই অদ্ভুত দৃশ্যের প্রকৃত কারণ কী? বিজ্ঞান তা ব্যাখ্যা করেছে "ট্যাক্সিস" নামক একটি জীববৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।
ট্যাক্সিস হলো জীবের বাহ্যিক কোনো উদ্দীপনার প্রতি প্রতিক্রিয়ায় নির্দিষ্ট দিক অভিমুখে চলাচল। উদাহরণস্বরূপ, তাপ, আলো, শব্দ, চাপ, পানি বা স্রোতের মতো উদ্দীপনায় সাড়া দিয়ে কোনো প্রাণীর যে দিকনির্দেশিত চলাচল, তাকেই ট্যাক্সিস বলা হয়।
কই মাছের এই আচরণকে বিশেষভাবে ব্যাখ্যা করা হয় "রিও-ট্যাক্সিস" হিসেবে। অর্থাৎ, স্রোতের দিকে মাছের সাড়া দিয়ে চলা। বর্ষার শুরুতে বা বজ্রপাতের সময় হঠাৎ করে পুকুর, খাল বা বিলের পানি বাড়ে। সেই বাড়তি পানির স্রোতের টানে কই, শিং, মাগুর, কুতুম ইত্যাদি মাছরা নিজেদের খাবার ও অক্সিজেনের খোঁজে নতুন পানির উৎসের দিকে রওনা হয়।
বর্ষার আগে দীর্ঘদিন বৃষ্টি না থাকলে জলাশয়ে অক্সিজেন ও খাদ্যের অভাব দেখা দেয়। ফলে মাছেরা অস্থির হয়ে ওঠে। বৃষ্টির আগাম বার্তা বা প্রথম স্রোতের ছোঁয়া পেলে তারা নতুন পানির সন্ধানে ছুটতে শুরু করে। এই ছুটে চলার মধ্যেই অনেক মাছ মাটি ঘেঁষে চলে আসে এবং সেইসময় মাটির উপর মাছ লাফাতে দেখা যায়।
তাই বর্ষার দিনে যদি হঠাৎ করে বাড়ির পাশে কই মাছ লাফাতে দেখেন, জেনে রাখুন, এটি নিছক কাকতালীয় নয়— প্রকৃতিরই এক সূক্ষ্ম ইঙ্গিত ও প্রাণিকূলের অভিযোজনের অংশ।
ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=G7zMuZfS_UM
এম.কে.