ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আলোচিত শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলা

অপরাজিতা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:৪৬, ২২ মে ২০২৫

আলোচিত শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলা

মাগুরায় আলোচিত শিশু আছিয়া হত্যার রায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে সম্পন্ন করেছেন মহামান্য আদালত। আছিয়ার বোনের শ্বশুরের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। সঙ্গে এক লাখ টাকার অর্থদণ্ডও দাবি করেন আদালত। তবে তিনজন আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়াতে মা অসন্তুষ্ট হয়েছেন বিচারিক প্রক্রিয়ায়। ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে’ বহুল আলোচিত এবং নির্মমতার অসহনীয় দৃষ্টান্তকে সামনে রেখে রায়টি ঘোষণা করেন এম জাহিদ হাসান। অভিযোগ দাখিল আর বিচার শুরুর মাত্র ১৪ কার্যদিবসের মধ্যেই রায়টি ঘোষণা দেওয়া অপরাধীদের জন্য এক যথার্থ কার্যক্রম সম্পন্ন করা। তবে সন্তানহারা মায়ের আহাজারি খুব বেশি প্রশমিত হয়ইনি। সম্মিলিত এই ন্যক্কারজনক ঘটনায় বাকি তিনজনের খালাস নিয়ে মায়ের দুঃসহ কষ্টের লাঘব হয়নি। লোমহর্ষক এমন মধ্যযুগীয় বর্বরতায় সভ্যতা সূর্য অস্তমিত হওয়ার উপক্রম প্রায়। শিশু ধর্ষণ ও হত্যায় বিভিন্ন তথ্যউপাত্তে উঠে আসে শিশুরা নাকি চারপাশের নিকটজনের কাছ থেকেই এমন অমানবিক, পৈশাচিক ঘটনার বলি হয়। নতুন কিছু নয় যুগ যুগান্তরের এক অসহনীয় দাবানল। রায় ঘোষণার সময় অসহায় জননী আদালত চত্বরেই অবস্থান করছিলেন।
সন্তান হারানো দুঃসহ বেদনায় ভারাক্রান্ত মার অপেক্ষার পালা শেষ হলেও তাকে শেষ অবধি অসন্তুষ্ট চিত্তে রায়ের বর্ণনা শুনতে হয়। রায়ে যারা খালাস পেয়েছেন তারা সবাই আছিয়ার আপনজন। রক্তের বাঁধন হয়তোবা নেই। কিন্তু সম্পর্কের নিগূঢ় বন্ধন অস্বীকার করার উপায়ই থাকে না। আছিয়ার বোনের স্বামী ভাসুর ও শাশুড়ি। এটাই দেশের দ্রুততম বিচারের দ্বিতীয় নজির।
চলতি বছরের মার্চ মাসে আছিয়া বেড়াতে যায় তার বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে। আনন্দ, আয়োজনে বোনের সঙ্গে সময় কাটানোর ইচ্ছে আর আগ্রহে। কিন্তু বিপরীত প্রদাহ যেভাবে অপেক্ষা করেছিল তাও এক কন্যা শিশুর ওপর নিদারুণ পেষণের কঠিন বাতাবরণ। তবে বিচারিক রায় সংশ্লিষ্ট পরিবার মোটেও খুশি না হওয়া পরিস্থিতির ন্যায্যতা। কিন্তু ১৪ কার্যদিবসের মধ্যে মামলাটির নিষ্পত্তি হওয়া এক অবশ্যাম্ভাবী কর্মযোগ যথার্থ সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন করা মহামান্য আদালতের জঘন্যতম অপরাধীদের প্রতি শাস্তিমূলক বিচার জনগণের সামনে নিয়ে আসা। শাস্তি হয়েছে তবে তা দৃষ্টান্তমূলক মোটেও হয়নি। গুরু পাপে লঘুদণ্ড মানাই যায় না। যারা নিয়মিত এমন দুঃসহ ঘটনার সঙ্গে শুরু থেকেই পর্যবেক্ষণ এবং অভিব্যক্তিমূলক বর্ণনার সহযোগী ছিলেন তারাও কি এই রায়কে সমর্থন করছেন? নির্দ্বিধায় বলা যা একেবারেই না। মা এখনো করুণ আর্তনাদে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন। তার মতে আছিয়ার বড় বোনও শ্বশুরবাড়িতে শান্তি আর স্বস্তিতে নেই। নিয়মিত তার ওপর অন্যায়, অবিচার আর কথার আঘাতে জর্জরিত করা হচ্ছে। যারা এখন আছিয়ার বড় বোনের ওপর কঠিন আঘাত হানছে তারাও তো দোষী। তবে কেন তারা পার পেয়ে গেল? বিচারটা একেবারেই একপেশে হয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মেয়েও। বিচার চলাকালীন উকিলের পক্ষপাতিত্বকেও সামনে নিয়ে আসা হয়। বাদী পক্ষের সাক্ষীও রাখা হয়নি বলে অভিযোগ এসেছে সংশ্লিষ্ট অসহায় পরিবার থেকে। আছিয়ার বোনও অভিযোগ করেন ঘটনার পর তার শ্বশুরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া তার দাবিও নিজের ভিটেয় থাকতে পারেননি। পরবাসির মতো অন্যের বাড়িতে গিয়ে থাকছেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানান, আপাতত মূল আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ে ভাবার সুযোগ এখনো আছে। তিনজনের খালাসের ব্যাপারে জানা যাবে পূর্ণাঙ্গ রায়ের কাগজ হাতে আসলে। সেটা আসার পর তা পর্যালোচনা আর আমলে নিয়ে পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে আপিলের বিষয়টি আমরা অতি অবশ্যই ভাবব। আছিয়ার ওপর এই পাশবিক নির্মমতায় পরিবারসহ গোটা দেশ শোকে দুঃখে পাথর হয়ে যাওয়ার দুর্দশা।

প্যানেল

×