
শিলাইদহ সুইমিং ক্লাবের নাদিমুল হক
সাঁতারের নিয়ম অনুসারে সাধারণত ফিনিশিং টাচ ছোঁয়ার ক্ষেত্রে ব্রেস্টস্ট্রোক ও বাটারফ্লাই ইভেন্টে টাচ প্যাড দুই হাতেই স্পর্শ করতে হয়। কিন্তু নাদিমুল হক সব সময় দুই হাত সমানভাবে টাচ প্যাডে লাগাতেই পারেন না।
কীভাবে পারবেন? নাদিমুলের যে বাঁ হাতের চারটা আঙুলই নেই! সাঁতারে মাইক্রোসেকেন্ডে যেখানে পদকের নিষ্পত্তি হয় সেখানে অন্যরা দ্রুত দুই হাত সাবলীলভাবে টাচ প্যাডে লাগালেও নাদিমুলকে নিয়মটা মানতে একটু হলেও সমস্যায় পড়তে হয়। কিন্তু তাই বলে অনেক স্বাভাবিক সাঁতারুর চেয়ে পেছনে পড়ে থাকেন না। বরং মিরপুরের চলমান ৩৭তম জাতীয় বয়সভিত্তিক সাঁতার পুল মাতিয়ে চলেছেন নাদিমুল।
দুই দিনে এ পর্যন্ত চারটি ইভেন্টে অংশ নিয়েছেন কিশোরগঞ্জের নিকলীর যুবক। সব কয়টি ইভেন্টেই পদক জিতেছেন। ৪টির মধ্যে ৩টিতে জিতেছেন রুপা, ১টি ব্রোঞ্জ।
বুধবার প্রথম দিনে ১০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোক ও ২০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে জিতেছেন রুপা। আজ বৃহস্পতিবার (২২ মে) পানিতে নেমে সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন নাদিমুল। ২০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকে জেতেন রুপা। ১৫০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে জেতেন ব্রোঞ্জ।
পদকের রংগুলো সহজেই বদলে রুপা থেকে সোনা করে নিতে পারতেন। কিন্তু কিশোরগঞ্জের নিকলি কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র নাদিমুল সাঁতারের জন্য এবার খুব বেশি সময় অনুশীলন করতে পারেননি। যে কারণে নিজের টাইমিং নিয়েও খুব বেশি সন্তুষ্ট নন তিনি। সাঁতার পুলের পাশে দাঁড়িয়ে নাদিমুল আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, “আমি আসলে উচ্চমাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষার জন্য সেভাবে অনুশীলন করতে পারিনি। সোনার সম্ভাবনা জাগিয়েও মাইক্রোসেকেন্ডের জন্য হয়নি। তা না হলে সব কটি ইভেন্টে সোনা জিততে পারতাম।”
২০১৬ সাল থেকে নিয়মিত সাঁতারে অংশ নেন নাদিমুল। কিন্তু ২০২১ সাল থেকে নিয়মিত পদক জিতছেন তিনি। জানালেন, গত তিন বছরে সোনার পদকও জিতেছেন।
জন্মগতভাবেই বা হাতের চার আঙুল নেই নাদিমুলের। জন্মের সময় এটা দেখে বেশ কষ্ট পেয়েছিলেন তার বাবা-মা। কিন্তু যতই সময় গড়িয়েছে, বাবার দুঃখ ভুলিয়ে দিয়েছেন খেলাধুলায় এসে।
হাতের আঙুল নেই বলে এতটুকু দুঃখ নেই নাদিমুলের, “আমার জন্ম থেকে হাতে সমস্যা। এই অবস্থা নিয়েই বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সব সাঁতারু— বিকেএসপি, আনসারের সাঁতারুদের সঙ্গে লড়াই করছি। এই হাত নিয়ে আমি আরও সামনে এগিয়ে যেতে চাই। হাত ভালো থাকলে আরও ভালো ফল করতাম।”
ছোটবেলায় ভীষণ দুরন্ত ছিলেন নাদিমুল। ফুটবল, ক্রিকেট খেলা, গাছে উঠে ফল পাড়া— এমন কোনও দুরন্তপনা নেই যা তিনি করতেন না। অন্য অনেক খেলা পছন্দ থাকলেও সাঁতারে সাফল্য পাচ্ছেন নাদিমুল।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, এত ডিসিপ্লিন থাকতে কেন সাঁতারকেই বেছে নিয়েছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে নাদিমুল বলেন, “আমার চাচা আবুল হাশেম সাঁতার সংগঠক, তার ছেলে এনামুল হক সাঁতারু। উনি ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিবেন। অন্য ভাইয়েরাও সাঁতারু। আমি আসলে সাঁতারুর ঘরের সন্তান। তাছাড়া নিকলি হাওর অঞ্চল। পানিতেই আমাদের শৈশব কাটে। সাঁতারকে তাই বেছে নিয়েছি।”
দীর্ঘ ৯ বছর সাঁতারের ক্যারিয়ার। কিন্তু কখনও আন্তর্জাতিক প্যারা অলিম্পিক গেমসে বা প্যারা গেমসে অংশ নেননি। সর্বশেষ প্যারা এশিয়ান গেমসে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড পাননি। তবে সুযোগ পেলে ভবিষ্যতে প্যারা অলিম্পিকে অংশ নিতে চান নাদিমুল, “যদি অলিম্পিকে সাঁতারে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাই, তাহলে আশা করি আমি বাংলাদেশের হয়ে পদক জিততে পারব। সেই আত্মবিশ্বাস আমার মধ্যে আছে।”
নাদিমুলের মতো সাঁতারুদের প্যারা গেমসে সুযোগ দেওয়া তাই তো সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।
জাহিদ জয়
সা/ই