ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ম্যানইউকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়ন টটেনহ্যাম

স্পোর্টস রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০১:২৭, ২৩ মে ২০২৫

ম্যানইউকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়ন টটেনহ্যাম

অনেক সাধনার ট্রফি নিয়ে টটেনহ্যামের ফুটবলারদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস

উয়েফা ইউরোপা লিগের অল ইংলিশ ফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ১-০ গোলে হারিয়ে চাম্পিয়ন হয়েছে টটেনহ্যাম হটস্পার। বুধবার রাতে স্পেনের বিলবাওয়ের সান মামেস স্টেডিয়ামে ম্যাচের ৪২ মিনিটে টটেনহ্যামের হয়ে জয়সূচক গোলটি করেন ব্রেনান জনসন। এই জয়ে ১৭ বছরের শিরোপা খরা কাটানোর পাশাপাশি ৪১ বছর পর কোনো ইউরোপিয়ান ট্রফি জয়ের স্বাদ পেয়েছে টটেনহ্যাম। 
এই সাফল্যের আগে টটেনহ্যাম সবশেষ কোনো শিরোপা জিতেছিল ২০০৭-০৮ মৌসুমে। সেটা ছিল ইংলিশ লিগ কাপ। আর সবশেষ ইউরোপিয়ান ট্রফি জিতেছিল ইউরোপা লিগেই। সেই সাফল্য এসেছিল ১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে। তখন অবশ্য প্রতিযোগিতাটির নাম ছিল উয়েফা কাপ। এবার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ভালো করতে না পারলেও, ইউরোপা লিগে শুরু থেকে দারুণ ধারাবাহিক ছিল ম্যানইউ। গোটা আসরে অপরাজিত থেকে তারা পা রেখেছিল ফাইনালে। কিন্তু এখানে আর পারেননি ফার্নান্দেজ-কাসেমিরোরা। যে কারণে শিরোপাহীন মৌসুমও তাদের নিশ্চিত হয়ে গেছে রেড ডেভিলসদের। এই ব্যর্থতার কারণে আগামী মৌসুমে তাদের দেখা যাবে না কোনো ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায়।
টটেনহ্যাম অধিনায়ক সন হিউং-মিন ইতিহাস গড়তে চেয়েছিলেন। কিংবদন্তি হতে চেয়েছিলেন। অবশেষে তিনি পেরেছেন। বছরের পর বছর ধরে যে স্বপ্নের ছবি তিনি এঁকেছেন হৃদয়ে, বারবার যে ছবি ঝাপসা হয়ে গেছে, যে হৃদয়ে মেঘ জমেছে, সেখানেই অবশেষে সুখের প্রবল বর্ষণ। কিংবদন্তি হতে কি ট্রফি জিততেই হয়? হয়ত তর্কসাপেক্ষ। ইতিহাসের সব কিংবদন্তি তো ট্রফি জেতেননি! তবে এই শর্তটা নিজেকেই বেঁধে দিয়েছিলেন সন। ১০ বছর ধরে এই ক্লাবে আছেন। ক্লাবের ইতিহাসের সেরাদের একজন তিনি হয়েই গেছেন।

তবু মৌসুম শুরুর আগে তিনি বলেছিলেন, একটি ট্রফি না জেতা পর্যন্ত তিনি কিংবদন্তি হওয়ার যোগ্য নন। টটেনহ্যামে ব্যক্তিগত সাফল্যের এই দীর্ঘ পথচলায় দলীয় সাফল্যের স্বাদ পাচ্ছিলেন না সন। সম্ভাবনা কয়েকবার উঁকি দিয়েও মিলিয়ে গেছে। এবার যখন আরেকবার শিরোপার মঞ্চে উঠতে পারলেন, রোমাঞ্চ-শঙ্কা-শিহরণ, সবই ছিল তার। ফাইনালের আগে বলেছিলেন, ‘আমার জীবনের সেরা দিন হতে পারে এটি, ইতিহাস গড়তে চাই।’
ফাইনালের পর সেই সন আবেগের স্রোতে হাবুডুবু খেয়ে স্যালুট করছেন নিজেকে। দক্ষিণ কোরিয়ান তারকা বলেন, ‘বলতে পারেন, আমি একজন কিংবদন্তি। কেন নয়? আজকের জন্য হলেও তো।’ সন বলেন, ‘১৭ বছর ধরে এটা কেউ পারেনি। এই দুর্দান্ত ফুটবলারদের নিয়ে এটা করতে পারা। এখন বলব আমি এই ক্লাবের কিংবদন্তি।’ ২০০৮ সালে ইংলিশ লিগ কাপ জয়ের পর টটেনহ্যামের প্রথম ট্রফি এটি। ইউরোপিয়ান ট্রফির ছোঁয়া পেল তারা ৪১ বছর পর। সবশেষ সেই ১৯৮৪ সালে উত্তর লন্ডনের ক্লাবটি জিততে পেরেছিল উয়েফা কাপ।  জার্মান ক্লাব বায়ার লেভারকুসেন থেকে ২০১৫ সালে টটেনহ্যামে এসেছেন সন। গোলের পর গোল করেছেন। দলের অনেক জয়ের সাক্ষী হয়েছেন।

ব্যক্তিগত অনেক পুরস্কার ও স্বীকৃতি জিতেছেন। কিন্তু চূড়ান্ত লক্ষ্য তো দলীয় অর্জন। এতটা পথ মাড়িয়ে সেই সাফল্যে নিজেদের রাঙাতে পেরে আত্মহারা সন, ‘এই অনুভূতি অসাধারণ। সবসময় এই স্বপ্নই দেখে এসেছি। অবশেষে সেটা পূরণের দিন। স্বপ্ন সত্যি হলো, সত্যিকার অর্থেই সত্যি হলো। আমি কী যে খুশি! আমি এই দুনিয়ার সবচেয়ে খুশি মানুষ।’
অন্যদিকে টটেনহ্যামে দায়িত্ব নিয়েই বলেছিলেন, আমি খুব বেশি শিরোপা জিতিনি। তবে সব ক্লাবেই দ্বিতীয় বছরে শিরোপা জিতেছি। অস্ট্রেলিয়ান কোচ আঞ্জে পোস্টেকোগলুর এমন কথা এতদিন পর্যন্ত ফুটবলে একটা সাধারণ বাক্য হয়েই টিকেছিল। তবে ট্রফি জয়ের পর নিশ্চিতভাবেই এই কথার মূল্যায়ন থাকবে অনেক বেশি। ইউরোপের দল টটেনহ্যাম কিংবা বৈশ্বিক গণমাধ্যম যখন এই অস্ট্রেলিয়ান কোচের প্রশংসা করছেন, তখন বাংলাদেশের ফুটবল ভক্তদের মাঝেও উঁকি দিচ্ছে ১০ বছর আগের এক স্মৃতি। বাংলাদেশে পা রেখেছেন ফুটবলের এমন গ্রেট কোচদের কথা বললে সবার আগে আসবে জিনেদিন জিদানের নাম। ২০০৬ সালে যিনি এসেছিলেন বাংলাদেশে। এরপরেই হয়ত থাকবে পোস্টেকোগলুর নাম। ২০১৫ সালে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া দলের কোচ হয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন পোস্টেকোগলু।

×