
আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে সিরিজে এভাবেই বারবার মাথা নত হয়েছে লিটন-হৃদয়দের
লজ্জার আর বোধহয় কোনো অংশ বাকি নেই! বছরের পর বছর ধারাবাহিকভাবে এমন নাকানিচুবানি খাচ্ছেন টাইগাররা; তাতে করে এখন আর লজ্জা-শরম তেমন কাজ করে বলে মনে হয় না!! টেস্ট ও টি২০ ক্রিকেটে এখনো শিক্ষানবিসের মতো দল। ওয়ানডেতে একটা সময় দারুণ সম্ভাবনা জাগিয়েছিল; সেটাও ধূলিস্যাৎ হয়ে গেছে গেল প্রায় দুই বছরে। সবমিলিয়ে এখন সব ফরম্যাটেই যাচ্ছেতাই অবস্থা। সবশেষ আইসিসির সহযোগী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে লজ্জার সিরিজ হারে দেশের ক্রিকেটের কঙ্কালসার চিত্রটাই ফুটে উঠেছে।
এই ব্যর্থতা চলছে ধারাবাহিকভাবে। ২০২৩ সালে স্কটল্যান্ডের কাছে হার মানে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালে হাঁটিহাঁটি পা পা করে এগিয়ে চলা যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও মাথা নত করতে হয়। সবশেষ লজ্জাটা এলো আরব আমিরাতের কাছ থেকে। প্রথমে সিরিজটি ছিল দুই ম্যাচের। সেটা থাকলে অন্তত সমতায় থেকে শেষ করতে পারতেন লিটনরা। ম্যাচ একটি বাড়ায় ঠিকই সিরিজ হারের লজ্জায় ডুবতে হয়েছে। অথচ সিরিজের প্রথম ম্যাচটা জয়ের পর আত্মবিশ্বাস বেশ উঁচুতেই ছিল টাইগারদের। প্রস্তুতির জন্য তাই তুলনামূলক খর্বশক্তির দেশের বিপক্ষে আরও একটা ম্যাচ বাড়িয়ে নেয় বাংলাদেশ।
কিন্তু এর ফল হয়েছে বুমেরাং। সিরিজনির্ধারণী তৃতীয় টি২০তে বাংলাদেশ হেরেছে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে। সবমিলিয়ে সহযোগী দেশের বিপক্ষে এটি ১১তম হার। অফিসিয়াল ম্যাচের হিসাবে ১০ম ম্যাচে। সিরিজ বিবেচনায় তৃতীয় সিরিজ হার। সবশেষ এক বছরের মধ্যে দুইবার আইসিসির সহযোগী দেশের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ।
কাকতালীয়ভাবে ২০২৪ সালে ২১ মে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সিরিজ হেরেছিল বাংলাদেশ। ২০২৫ সালে এসেও ২১ মে তারিখেই আরব আমিরাতের কাছে হারতে হয়েছে সিরিজ। আর সেটাই টাইগার ক্রিকেটে লজ্জাজনক দুই বিশ্বরেকর্ডের স্বীকৃতি এনে দিয়েছে! টেস্ট ক্রিকেটের শীর্ষস্তরে বা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলা ৯ দেশের মধ্যে প্রথম দেশ হিসেবে সহযোগী সদস্যদের কাছে ১০ টি২০ হেরেছে বাংলাদেশ। ৫ হারের রেকর্ডও অবশ্য অন্য কোনো দেশের নেই। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪ টি২০ হেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এখানেই শেষ হচ্ছে না বাংলাদেশের টি২০’র লজ্জার উপাখ্যান। জিম্বাবুয়ে ব্যতীত একমাত্র টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে সহযোগী দেশের কাছে একাধিক টি২০ সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলা দেশগুলোর কথা বিবেচনা করলে টাইগাররাই সহযোগী দেশগুলোর কাছে হারের একমাত্র শিকার। এর আগে ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ড ও হল্যান্ড সফরে গিয়ে স্কটল্যান্ডের কাছে এক ম্যাচের সিরিজ হেরেছিল বাংলাদেশ।
অমার্জনীয় ব্যর্থতার পরও সাফাই গাইছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমরা যথেষ্ট ভালো ছিলাম না, এখানে এলে সবসময় ম্যাচ জেতার ভাবনা নিয়ে আসবেন আপনি। এগুলো আসলে জীবনেরই অংশ। যখন আপনি ক্রিকেট খেলবেন, মাঝেমধ্যে প্রতিপক্ষ অনেক ভালো খেলবে। ফলে তাদেরকেও (আমিরাতকেও) কৃতিত্ব দিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাটিংয়ে আমরা কিছু ভুল করেছি। আমার মনে হয় আমরা পর্যাপ্ত ভালো রান পাইনি যেমনটা এই উইকেট, কন্ডিশনে তিন ম্যাচ বিবেচনায় আমরা পেতে চেয়েছিলাম।
পরে বল করায় শিশিরও একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল।’ আইসিসির সহযোগী দেশের কাছে সিরিজ হারে বেশ হতাশ ছিলেন শারজার গ্যালারিতে থাকা বাংলাদেশি দর্শকরা। সেই হতাশা থেকেই ক্রিকেটারদের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ও হয় দর্শকদের। আরব আমিরাতে প্রচুর বাংলাদেশি প্রবাসী আছেন। ম্যাচ শেষে বেশ কয়েকজন সমর্থক গ্যালারি থেকে ক্রিকেটারদের উদ্দেশ করে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। দর্শকদের এমন ব্যবহারে এক পর্যায়ে মেজাজ হারান শামীম পাটোয়ারী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, খেলোয়াড়েরা যখন মাঠ ছেড়ে ড্রেসিংরুমে ফিরছিলেন, তখন এক দর্শক বাজে ভাষা ব্যবহার করেন।
অন্য ক্রিকেটাররা মাথা নিচু করে চলে গেলেও জবাব দেন শামীম। তিনি গ্যালারির দিকে ইঙ্গিত করে সেই দর্শককে নিচে নামার আহ্বান জানান। শামীমের এমন প্রতিক্রিয়ায় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। গ্যালারির অনেক দর্শক একসঙ্গে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। ঠিক তখনই পেসার তানজিম হাসান সাকিব এসে শামীমকে ড্রেসিংরুমের দিকে নিয়ে যান।
এমন বাজে হারের পর বাংলাদেশের ক্রীড়া সাংবাদিকরাও হতাশা প্রকাশ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের বিরক্তি আর ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসজেএ) সাধারণ সম্পাদক এসএম সুমন লিখেন, ‘আরব আমিরাতের কাছে এই পরাজয়ের পরও বাংলাদেশ দল ভুল থেকে কিছুই শিখবে না! উল্টো ক্রিকেটাররা অনেক অজুহাত দেখাবেন। এরা ভুলে যায় এদের মান অনেক সহযোগী দেশের চেয়ে খারাপ।’ প্রথম আলোর সাহিদ রহমান অরিন লিখেন, ‘আরব আমিরাতে শিক্ষা সফর আপাতত শেষ। এরপর পাকিস্তানে পিকনিক।’
কানিজ ফাতেমা নামের একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ক্রিকেট প্লেয়ারদের বেতন, সুযোগ-সুবিধা কমানোর জন্য রাস্তায় নামা উচিত দেখছি। এদের উন্নতি নেই; এরা শিখেই যাচ্ছে। এ শেখার শেষ হবে না। মাসে ৭/৮ লাখ টাকা বেতন নিয়ে আবেগ বিক্রি করে খাচ্ছে।’ বাংলা ট্রিবিউনের রবিউল ইসলাম রবি আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘আমি জাস্ট নিতে পারছি না। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে এভাবে ক্রিকেটটা ধ্বংস হয়ে গেল! ভাবতেই অবিশ্বাস্য লাগে কি দলটা কি হয়ে গেল।’