
ছবি : জনকণ্ঠ
সেঁজুতি রানী দাস। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর গ্রামের এই তরুণী ১২০ টাকা খরচায় নিয়োগ পেয়েছেন পুলিশে। তার পদ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল।
বৃহস্পতিবার মুন্সীগঞ্জ পুলিশ লাইন্সের কনস্টেবল বোরহান উদ্দিন মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শামসুল আলম সরকার। চূড়ান্তভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ২০ জনের মধ্যে নারী প্রার্থী ছিলেন দুই জন, তাদের একজন সেঁজুতি। পুলিশ সুপার জানান, একেবারেই ঘুষ ও তদবিরমুক্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় এই নিয়োগটি হয়েছে।
সেঁজুতি গজারিয়া সরকারি কলেজের ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত। অভাব-অনটনের কারণে আগে টিউশনি করতেন। পরে স্থানীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান—জেএমআই কোম্পানিতে কাজ নেন। তিন মাস ধরে কঠোর পরিশ্রমের এই কাজ করেছিলেন।
তার বাবা রাধেশ্যাম চন্দ্র দাস ছিলেন একজন মিষ্টির দোকানের কর্মচারী। ২০২৪ সালের নভেম্বরে মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেন সেঁজুতি। মা গৃহিণী। তাই সেঁজুতিই পরিবারটির একমাত্র উপার্জনক্ষম। তাই এইচএসসি শেষ না করেই কাজে নেমে পড়তে বাধ্য হন।
নিজের সংগ্রামী পথচলার কথা জানিয়ে সেঁজুতি বলেন, “আমি কখনো ভাবিনি এত সহজে সরকারি চাকরি পেয়ে যাবো। স্বপ্নের মতো লাগছে। এখন মায়ের মুখে হাসি ফুটেছে।”
পুলিশে যোগদানের মধ্য দিয়ে কেবল নিজের নয়, পরিবারেরও ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন এই তরুণী। চাকরি অবস্থায় অনুমতি নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়াসহ নিয়ম মোতাবেক প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে আরও উপরের ধাপে যাওয়ার স্বপ্ন এখন আরও দৃঢ় হয়েছে।
পুলিশের এই চাকরি পরীক্ষায় কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করার মত কাজটি সম্পন্ন করার বিষয়টিও চমৎকারভাবে স্মৃতিচারণ করেন সেঁজুতি। পুলিশে চাকরি পাওয়া তার মতো বাকি ১৯ জনেরও অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। ফলাফল প্রকাশের পর কেউ কেউ আনন্দে কেঁদে ফেলেন।
মুন্সীগঞ্জ জেলার ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবলের ২০টি শূন্য পদের বিপরীতে প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিং শেষে ২৪১ জন প্রার্থী শারীরিক মাপ, শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। তাদের মধ্য থেকে ১৪৬ জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ২৩ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। মৌখিক পরীক্ষায় তন্মধ্যে ২০ জনকে চূড়ান্তভাবে মনোনীত করে মুন্সীগঞ্জ জেলা টিআরসি নিয়োগ বোর্ড।
ফলাফল ঘোষণার সময় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণদের সততা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সাথে দেশসেবার মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে কাজ করার আহ্বান জানান পুলিশ সুপার।
এসময় টিআরসি নিয়োগ বোর্ডের সদস্য নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ইসরাত জাহান ও নরসিংদীর সহকারী পুলিশ সুপার বায়েজিদ বিন মনসুর উপস্থিত ছিলেন।
সা/ই