ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১

প্রবাসে মুক্তির বাহারি রান্না

শিউলী আহমেদ

প্রকাশিত: ০২:০২, ১২ জুলাই ২০২৪

প্রবাসে মুক্তির বাহারি রান্না

প্রবাসে মুক্তির বাহারি রান্না

‘শিক্ষিত হয়েছি চাকরি করব না!’- আজকাল আমাদের মানসিকতাই যেন এমন হয়ে যাচ্ছে। স্বাবলম্বী হতে চাইলে ইচ্ছেটাই যথেষ্ট। তার জন্যে চাকরিই করতে হবে তেমনটা নয়। ঘরে বসেই নিজেকে স্বাবলম্বী করা যায়- দূর দেশে থেকেও সুরমা শারমীন মুক্তি তা প্রমাণ করেছেন। জন্ম ২৬ মার্চ হওয়ায় বাবা নাম রেখেছিলেন ‘মুক্তি’। বাবা মো. আইনুল হক বাংলাদেশ ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে অবসরে গিয়েছিলেন।

মা মেহেরা হক ছিলেন গৃহিণী। মুক্তি আট ভাইবোনের মধ্যে সপ্তম। বাংলাদেশ ব্যাংক আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ফজলুল হক মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি ও ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ¯œাতকোত্তর শেষ করার পর তার বিয়ে হয়। বাবার ইচ্ছে ছিল তার ৫ মেয়েই ¯œাতকোত্তর সম্পন্ন করবে, তারপর বিয়ে। বাবা বলতেন, বিয়ের পর মেয়েদের পড়ালেখা হয় না। আর যারা করেও তাদের অনেক কষ্ট করতে হয়।

সংসার আর লেখাপড়া- দুই মিলে অনেক সংগ্রাম করতে হয়। তাই তিনি ৫ মেয়েকেই ¯œাতকোত্তর শেষ করিয়ে বিয়ে দিয়েছেন আর তারা সবাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। চমৎকার রান্না করেন মুক্তি। মায়ের কাছেই তার হাতেখড়ি। মা শিখেছিলেন নানুর কাছে। ছোটবেলা থেকেই মুক্তির রান্নার খুব শখ ছিল। বিভিন্ন রকম রান্না করে সেগুলোকে সুন্দরভাবে পরিবেশন করতে খুব ভালো লাগে তার। বৈবাহিক সূত্রে ১৬ বছর যাবত স্বামী-সন্তানসহ ইতালির পাদোভা শহরে বসবাস করেন। চাকরি তাকে কখনোই আকর্ষণ করেনি। মন দিয়ে সংসারটাই করতে চেয়েছেন।

বিদেশ-বিভুঁইয়ে সন্তানরা যেন নিজ ধর্ম ও সংস্কৃতি ভুলে না যায়, স্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারিতা যেন তাদের জীবন যাপন না হয়, সেদিকে সব সময় সচেষ্ট থেকেছেন। পরিচিত জনেরা তার রান্না খুব পছন্দ করেন। প্রায়ই তাকে বলতেন রান্না নিয়ে কিছু করতে, তারাই কিনে নিবেন। কিন্তু খুব একটা আগ্রহ দেখাননি। শেষমেষ করোনাময় সময়টাতে সবার অনুরোধ আর বড় বোনের অনুপ্রেরণায় শুরু করেন যাত্রা। বড় বোন সাংবাদিকতায় পড়ালেখা করলেও চাকরি করেছেন মহিলা অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন পদে। মূলত বোনের উৎসাহেই তিনি নিজেকে স্বাবলম্বী করার পথে হাঁটতে শুরু করেছেন। করোনার সময় সবকিছু বন্ধ থাকায় প্রতিবেশীরা তাকে খাবার দিতে অনুরোধ করেন।

সেই থেকে শুরু তার নতুন পথচলা ‘মুক্তির বাহারি রান্নাঘর’ নিয়ে। সব ধরনের খাবারই তিনি তৈরি করেন- দেশীয়, চাইনিজ, বেকারি, ফাস্ট ফুড, রিচ ফুড, ¯œ্যাকস, আচার। মেয়েরা বড় হয়ে যাওয়ায় অবসর সময়টুকু কাজে লাগিয়ে তিনি এখন স্বাবলম্বী। এখন তিনি খুব পরিতৃপ্ত, তার শখের রান্নাটাকে কাজে লাগিয়ে নিজে কিছু করছেন বলে! এই ৪ বছরে তিনি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন ভবিষ্যতে একটি রেস্টুরেন্ট করার, যেখানে বাংলাদেশের খাবারের প্রাধান্য থাকবে। সেই লক্ষ্যে নিজেকে তৈরি করছেন। 


মুক্তি বলেন, ‘আমার এই স্বপ্ন পূরণে আমার স্বামী খান তানভীর, আমার দুই মেয়ে লাবণ্য এবং লামিয়া সবসময় পাশে থেকে আমাকে অফুরন্ত সহযোগিতা ও উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে।’ রান্নার পাশাপাশি বাগান করাও তার শখ। ছোট ব্যলকনিতে রয়েছে গাঁদা, রজনীগন্ধ্যা এবং গোলাপ। সেই সঙ্গে নানান ধরনের সবজির গাছ। প্রায়ই নিজের বাগানের সবজি দিয়ে ঘরের খাবার রান্না করেন। বই পড়ার নেশাও আছে মুক্তির।

জানেন বিভিন্ন রকম হাতের কাজও। তবে এগুলো তার ব্যবসার অংশ নয়। অলসতা তার অভিধানে নেই। সংসার-সন্তান সামলে, খাবার সাপ্লাই দেওয়ার পর যে অবসর সময়টুকু পান, সেটুকু সময় তিনি বই পড়ে ও বাগান করে মনের পরিচর্যাও করেন।

×