ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবেশ সুরক্ষায় গৃহিণীর ভূমিকা

মোশারফ হোসেন

প্রকাশিত: ০১:৩৯, ২ জুন ২০২৩

পরিবেশ সুরক্ষায় গৃহিণীর ভূমিকা

নারীর সঙ্গে প্রকৃতি আর পারিপার্শ্বিকতার এক অবিমিশ্র যোগাযোগ

নারীর সঙ্গে প্রকৃতি আর পারিপার্শ্বিকতার এক অবিমিশ্র যোগাযোগ। সেই সৃষ্টির আদিকাল থেকে। সৃজনশীল ব্যক্তিত্বরা নারীর সঙ্গে প্রকৃতিকে মিলিয়ে মিশিয়ে এক করে দেন। প্রকৃতির অকৃত্রিম দানের সঙ্গে নারীর অপার মহিমার মিলনসুরে সেখানে নারীরাই থাকে বেশ খানিক এগিয়ে। চারপাশের নির্মল প্রতিবেশকে সুরক্ষা দিতে ও নারীদের প্রাসঙ্গিক কর্মযোগের কোন তুলনাই নেই। টেকসই উন্নয়ন এবং দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির লক্ষ্যমাত্রায় নারীকেও সহায়ক ভূমিকা রাখতে হয় নৈসর্গ্যরে নিয়মিত পরিচর্যায়। ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞানীরা ধারণা দেন কৃষি সভ্যতা তার আলোকিত পথ তৈরি করে নারীর হাত ধরেই।

বন্যদশায় গুহাবাসী মানুষরা ফলমূল কুড়িয়ে এনে তাদের প্রতিদিনের আহারের সংস্থান করত। পশু-পাখির কাঁচা মাংস ভক্ষণ তো ইতিহাসের আদিপর্বের বিপদশঙ্কুল যাত্রা। পুরুষরা বিভিন্ন জায়গায় চষে বেরিয়ে যে ফলাফলাদি ঘরে নিয়ে আসতো তাতে আহার সংযোগ হতো ঠিকই। তবে ফলমূলের বীজ থেকে যে নতুন কিছু উৎপাদন করা সেটাও নারীর অভাবনীয় পারদর্শিতা। চারপাশে ফলমূলের বীজ ছড়ানোর মধ্য দিয়ে কৃষি সভ্যতার যে নবঅধ্যায় শুরু হয় তা সে সময়ের অরুণোদয়ের অনন্য সম্ভাবনা। ক্রমান্বয়ে প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল বন্য মানুষরা তাদের চেতনা আর শ্রমশক্তিতে নৈসর্গকে জয় করল।

সভ্যতার সূর্য সারা পৃথিবীতে আলো বিকিরণের নব অধ্যায়ে রূপ নিল। কিন্তু প্রকৃতির সঙ্গে নারীর যে অনবচ্ছেদ বাধন সেখানে আজ অবধি চিড় ধরেনি। যান্ত্রিক সভ্যতার ক্রমন্বয়ে বিশ্ব যে মাত্রায় উষ্ণতার দিকে ধাবিত হচ্ছে সেখানে প্রকৃতিও পড়ছে চরম বিপর্যয়ে। সহজাত শান্তি স্নিগ্ধ নির্মল পরিবেশ কার্বন নিঃসরণে যেভাবে মারাত্মক অবস্থায় এগিয়ে চলেছে সেখানেও নারীর ভূমিকায় অনেক কিছু সুরক্ষিত থাকা প্রকৃতির অমোঘ বিধান। অন্তত ছোট গৃহকোণটি সে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় ঘিরে রেখে পরিবেশকে হালকা রাখে। শুধু তাই নয় চারপাশে ক্ষুদ্র একটি সবজি কিংবা ফুলের বাগান করে শ্যামল প্রকৃতিকে যেভাবে রক্ষা করে তেমন অবদানও খুব কম নয়।

গৃহস্থালির কাজকর্ম সারতে গিয়ে সেভাবে যান্ত্রিক কলাকৌশলের অনুগামীও হয় না। বরং স্বাভাবিক নিয়মে প্রকৃতি সহায়ক কর্মবিধি সম্পাদন করে নৈসর্গকে তার আপন মর্যাদায় অধিষ্ঠিত রাখে। রোগ, জরা থেকে নিকটজনকে মুক্ত রাখতে যে মাত্রায় বাড়ির চারপাশের আবর্জনা নির্মূল করে সেখানেও প্রকৃতি তার শ্যামল বৈশিষ্ট্য হারাতে বসে না। চারপাশের খোলা হাওয়ায় নিজের পরিবার পরিজনকে আগলে রাখতে আমাদের মা, বোন আর স্ত্রীদের কোন জুড়ি নেই। খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে পুষ্টিকর স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের সংস্থান করে সবাইকে সুস্থ রাখাও তাদের এক প্রকার দায়বদ্ধতা। আর ছোট্ট ছাদটির উপরে যদি একটি সবজি এবং ফুলের বাগান থাকে তাহলে তো কথাই নেই।

আমরা জানি বৃক্ষ বাতাস থেকে দূষিত কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে আর বিশুদ্ধ অক্সিজেন নিজের থেকে ছেড়ে দেয় বায়ুম-লে। যা প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করতে নিয়ামক। অত্যাধুনিক ভবনের ওপর নয়নাভিরাম ছাদ কৃষি আধুনিকতার নির্মাল্য। কিন্তু গ্রামে-গঞ্জে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাড়ির আঙিনায় কয়েকটি গাছ রোপণ সেখানে নারীর অনন্য ভূমিকা অবশ্যই স্বীকার্য। সবুজ শাক-সবজি যেভাবে শ্যামল প্রকৃতির বিশুদ্ধতার মাত্রাকে সুরক্ষিত করে পাশাপাশি গৃহে উৎপাদিত কৃষি পণ্যে খাদ্যের যে পুষ্টিকর উপাদান তাও শরীরের স্বাস্থ্যকে সবল ও সতেজ রাখে।

হরেক রকম রোগ বালাই থেকেও নিরাপদ দূরত্বে থাকে। আর এক চিলতে উঠোন কিংবা ঘরের সীমাবদ্ধ ছাদে সূর্যের যে বিকিরণ সেখান থেকে ভিটামিন ডি পাওয়াও এক প্রকার স্বাস্থ্য সচেতনতার নিয়ামক। যেখানে ভিটামিন ডি ওষুধ খেয়ে পর্যাপ্ত ভিটামিন শরীরে যোগান দিতে হয়। এখন নারীরা আর গৃহকোণে সীমাবদ্ধ নয়। বরং উন্মুক্ত ফসলি মাঠেও তারা তাদের মূল্যবান শ্রমশক্তি বিনিয়োগ করে চাষাবাদে অগ্রণী ভূমিকা রাখারও দাবিদার। সেই জমিতে বীজ রোপণ করা থেকে তার প্রাসঙ্গিক পরিচর্যা এবং পাকা ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত এখন নারীরা সব ধরনের কর্মযোগে সম্পৃক্ত থাকে। ফসলি ক্ষেতের চারপাশের আবর্জনা সাফ করতেও এগিয়ে আসে নারীরা।

স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় দূষণ নির্মূল করে স্বচ্ছ পরিচ্ছন্ন পরিবেশ উপহার দেয়া সেটাও যান্ত্রিকতার অবমূল্যায়নের চরম দুঃসময়ে অনেক বড় প্রাপ্তি। শুধু তাই নয়, একজন মা হিসেবে কোলের সন্তানের পরিচর্যায় যেভাবে সম্পৃক্ত থাকেন সেখানেও কোমলমতি শিশুটি তার সুরক্ষার কবচটি পেয়ে যায়। এর দাম যে কত বেশি তা মূল্যায়নকেও অতিক্রম করে যায়। পারিপার্শ্বিক শিক্ষা, পরিবেশ সংরক্ষণ ও সচেতন দায়বদ্ধতায় একজন নারী তার দায়িত্বশীল ভূমিকায় যে কর্মসম্পাদন করে যান সেখানে তার তুলনা তিনি নিজেই। পরিবারের নিকটজনের অসুখ বিসুখে ও তার প্রাসঙ্গিক সেবাদানে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাকে যেভাবে উজ্জীবিত করে তা অন্যদের জন্য দৃষ্টান্তও বটে। তবে নারীদের এমন সব অনন্য শ্রমশক্তির মূল্যায়ন সেভাবে হয় না। প্রকৃতিকে যেভাবে আগলে রাখে সে দাম থেকেও তারা বঞ্চিত হয়। 

×