
ছবি: প্রতীকী
আমরা অনেকেই মনে করি, সবাইকে খুশি রাখা আমাদের দায়িত্ব। তাই যখন কেউ কিছু চায় বা অনুরোধ করে, তখন না বলতে পারি না। ভাবি, যদি সে কষ্ট পায়! যদি সম্পর্ক খারাপ হয়! অথচ এই ‘না’ বলতে না পারার কারণেই অনেক সময় আমাদের নিজের জীবন এলোমেলো হয়ে যায়। আমরা নিজের প্রয়োজন, শান্তি, স্বপ্ন বা কাজের কথা ভুলে গিয়ে অন্যের চাহিদা পূরণে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এই অভ্যাস থেকে বের হয়ে আসা জরুরি। জীবন গুছিয়ে নিতে চাইলে, সময় মতো ‘না’ বলার দক্ষতা গড়ে তুলতে হবে।
'না' বলা মানে কখনোই অসদাচরণ করা নয়। এটা এক ধরনের আত্মসচেতনতা। আপনি জানেন আপনার ক্ষমতা কতটুকু, আপনার সময় কতটুকু, আপনি কোনটিকে অগ্রাধিকার দিতে চান। সেই বুঝেই আপনি সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার সবার আছে। যারা সময় ও মনের শান্তিকে গুরুত্ব দেয়, তারা জানে কোথায় 'না' বলতে হবে, আর কোথায় 'হ্যাঁ'। সবাইকে খুশি রাখতে গিয়ে যদি আপনি নিজে ক্লান্ত, হতাশ আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েন, তাহলে সেটি কারো জন্যই ভালো নয়।
অনেক সময় আমরা না বলি না এই ভেবে যে, মানুষটি হয়তো আমাদের ভুল বুঝবে। কিন্তু সত্যি কথা হলো, যারা আপনার ভালো চায়, তারা আপনার সীমাবদ্ধতা বুঝবে। বরং যারা আপনার ‘না’ মেনে নিতে পারে না, তারা হয়তো নিজের স্বার্থেই আপনাকে ব্যবহার করছে। তাই নিজের প্রতি সৎ থাকাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি নিজের মূল্য বোঝেন, তাহলে আপনার সময়, শ্রম ও মনের শান্তির গুরুত্বও বুঝবেন। তখনই আপনি সাহস করে ‘না’ বলতে পারবেন।
চাকরি, পরিবার, বন্ধুবান্ধব কিংবা সমাজ—সব জায়গাতেই কিছু না কিছু চাপ থাকে। কেউ কাজ বাড়িয়ে দেয়, কেউ অহেতুক আবেগিক চাপে ফেলতে চায়। তখন যদি আপনি নির্ভীকভাবে না বলতে পারেন, তাহলে আপনার নিজের কাজ, মনোযোগ ও স্বাস্থ্য রক্ষা হবে। আর এই রক্ষাটাই দরকার জীবনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। সবাইকে খুশি রাখতে গিয়ে নিজের লক্ষ্য হারিয়ে ফেললে, পরে আফসোস ছাড়া কিছুই থাকে না।
‘না’ বলার অভ্যাস গড়তে প্রথমে নিজের মনে প্রস্তুতি নিতে হবে। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন—এই কাজটি কি আমার জন্য প্রয়োজনীয়? এটি না করলে কি কোনো সমস্যা হবে? আমি কি সময় দিতে পারব? যদি উত্তর ‘না’ হয়, তাহলে আপনিও বিনয়ের সাথে না বলুন। প্রথমে অস্বস্তি লাগবে, অপরাধবোধ হবে, কিন্তু ধীরে ধীরে আপনি বুঝবেন—এটাই ছিল সঠিক সিদ্ধান্ত।
অনেকেই ভাবেন, ‘না’ বললে সম্পর্ক নষ্ট হবে। অথচ সত্যিটা হলো, স্পষ্টভাবে না বলতে পারা সম্পর্ককে আরও স্বাস্থ্যকর করে। এতে করে দুই পক্ষই একে অপরের সীমা বোঝে এবং সম্মান করে। সম্পর্ক তখনই টেকে, যখন সেখানে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়া থাকে। সবসময় হ্যাঁ বললেই যে মানুষ আপনাকে বেশি ভালোবাসবে, এমন কোনো গ্যারান্টি নেই। বরং ‘না’ বলে নিজেকে সৎ ও শক্তভাবে উপস্থাপন করলেই মানুষ আপনাকে গুরুত্ব দেবে।
জীবনে গুছিয়ে চলতে হলে শুধু স্বপ্ন দেখলেই হবে না, সেই স্বপ্ন পূরণের পথও পরিষ্কার রাখতে হবে। অহেতুক দায়িত্ব, অতিরিক্ত চাপ আর অন্যের ইচ্ছা পূরণ করতে গিয়ে যদি সেই পথ বন্ধ হয়ে যায়, তবে সফলতা অসম্ভব। তাই নিজের সময়, শক্তি ও সম্ভাবনাকে মূল্য দিন। কখন কোথায় ‘না’ বলতে হবে, তা বুঝে নিন।
‘না’ বলতে শেখা মানে নিজেকে ভালোবাসা শেখা। নিজের জীবনকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রথম ধাপ এই ‘না’। আপনি যখন নিজের পছন্দ, অগ্রাধিকার ও শান্তিকে গুরুত্ব দেন, তখনই জীবনের জটগুলো খুলতে শুরু করে। আর এভাবেই জীবন গুছিয়ে নেয়া সম্ভব হয়। অতএব, আর দেরি না করে আজ থেকেই শুরু করুন— জরুরি নয় এমন অনুরোধ বা চাপের মুখে সাহস করে বলুন, “না।”
এম.কে.