
ছবি:সংগৃহীত
প্রচণ্ড পিঠে বা পেটের ব্যথা, প্রস্রাবে জ্বালা, কখনো রক্ত — আপনি হয়তো জানেন না, কিন্তু এগুলোর পেছনে কারণ হতে পারে কিডনিতে জমে ওঠা ছোট্ট এক টুকরো পাথর।
হ্যাঁ, কিডনিতে পাথর (Kidney Stones) অনেকের কাছেই পরিচিত একটা নাম। যন্ত্রণাদায়ক এই সমস্যার পেছনে দায়ী অনেক কারণই থাকতে পারে — যেমন শরীরে পানি কম থাকা, জেনেটিক সমস্যা বা কিছু ওষুধের প্রভাব। কিন্তু সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে আমাদের দৈনন্দিন খাবার।
আজ আমরা জেনে নেব কোন ১০টি খাবার কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা বাড়ায়, আর কোন ১০টি খাবার নিয়মিত খেলে আপনি এই ঝুঁকি থেকে অনেকটাই বাঁচতে পারেন।
প্রথমে জেনে নেওয়া যাক, কোন খাবারগুলো থেকে সাবধান হবেন
১. পালং শাক – যতই স্বাস্থ্যকর হোক, এতে থাকে প্রচুর অক্সালেট। ক্যালসিয়ামের সঙ্গে মিশে এটি পাথর তৈরি করতে পারে।
২. বিট (চুকন্দর) – এতে একইভাবে আছে প্রচুর অক্সালেট, যাদের আগে পাথর হয়েছে তারা বিশেষ সতর্ক থাকুন।
৩. বাদাম ও বাদামের মাখন – প্রোটিন ও ফ্যাটে ভরপুর হলেও অনেক রকম বাদামেই অক্সালেট বেশি থাকে।
৪. চকলেট – বিশেষ করে ডার্ক চকলেট। দিনে এক টুকরো মিষ্টি চলতে পারে, কিন্তু বেশি নয়।
৫. কালো চা – আমাদের দেশের চায়ের প্রেম অগাধ, কিন্তু অতিরিক্ত খেলে কিডনির ক্ষতি হতে পারে।
৬. লাল মাংস – রোজকার রেড মিট খেলে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যেতে পারে, যার ফলে ইউরিক অ্যাসিড পাথরের ঝুঁকি তৈরি হয়।
৭. লবণ (সোডিয়াম) – বেশি লবণ মানেই বেশি ক্যালসিয়াম ইউরিনে চলে যায়। ফলে পাথর জমার পথ তৈরি হয়।
৮. কোলা জাতীয় সফট ড্রিংক – ফসফরিক অ্যাসিড ইউরিনের অম্লত্ব বাড়িয়ে দেয়, যা পাথর তৈরির পেছনে কাজ করে।
৯. প্রসেসড খাবার – প্যাকেটজাত চিপস, ইনস্ট্যান্ট নুডলস বা প্রিজারভেটিভযুক্ত খাবার কিডনির ওপর চাপ ফেলে।
১০. রুবার্ব – এই ফলের পাতা বা ডাঁটা স্বাস্থ্যকর হলেও অক্সালেটের পরিমাণ খুব বেশি।
এখন আসুন দেখে নেওয়া যাক, কোন খাবারগুলো কিডনির জন্য আশীর্বাদ হতে পারে
১. জল – কিডনি ভালো রাখতে চাইলে নিয়মিত পর্যাপ্ত জল পান করুন। দিনে অন্তত ২–৩ লিটার।
২. লেবু, কমলা ও অন্যান্য সাইট্রাস ফল – এতে থাকা সাইট্রেট ক্যালসিয়ামের সঙ্গে মিশে পাথর হতে বাধা দেয়।
৩. দুধ, দই, পনির – প্রাকৃতিক ক্যালসিয়াম খাবারের অক্সালেটের সঙ্গে গাঁথা বেঁধে তা শরীর থেকে বের করে দেয়।
৪. কলা – পটাশিয়াম সমৃদ্ধ এবং কিডনির জন্য খুব উপকারী।
৫. জবের জল (বার্লি ওয়াটার) – আমাদের দাদির ঘরোয়া ওষুধ; প্রস্রাব বাড়ায় এবং ছোট পাথর ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে।
৬. শসা – জলসমৃদ্ধ ও ঠাণ্ডা, গরমে কিডনিকে ঠাণ্ডা রাখতে বেশ উপকারী।
৭. ওটস, ব্রাউন রাইস, হোল গ্রেইনস – এতে থাকা ম্যাগনেশিয়াম পাথর তৈরি হতে বাধা দেয়।
৮. তুলসী পাতা – আয়ুর্বেদের মতে, তুলসী পাতা কিডনি পরিষ্কার রাখতে ও ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
৯. তরমুজ – শরীরের জলীয় ভারসাম্য বজায় রাখতে দুর্দান্ত।
১০. ডালিম – অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পটাশিয়ামে ভরপুর, কিডনির কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
কিছু সহজ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ টিপস:
- অতিরিক্ত ভিটামিন C এড়িয়ে চলুন — শরীরে বেশি গেলে তা অক্সালেটে রূপান্তরিত হয়
- ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্টের চেয়ে খাবার থেকে ক্যালসিয়াম নেওয়াই ভালো
- বেশি পরিমাণ প্রাণিজ প্রোটিন (মাংস) খাওয়া থেকে বিরত থাকুন
- নিয়মিত হাঁটাচলা ও শরীরচর্চা করুন
- যাদের আগে কিডনিতে পাথর হয়েছে, তাদের ইউরিন pH পরীক্ষা করানো উচিত
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
- হঠাৎ তীব্র ব্যথা কোমর বা পেটের এক পাশে
- প্রস্রাবে রক্ত বা ঘোলাটে ভাব
- বমি বমি ভাব, জ্বর বা ঠান্ডা লাগা
এমন উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আধুনিক চিকিৎসায় এখন কিডনি স্টোন সহজেই ধরা যায় ও চিকিৎসা সম্ভব — কখনও শুধু জল, ওষুধ, আবার কখনও প্রয়োজনে ছোট্ট সার্জারি বা লিথোট্রিপসি।
শুধু খাবারের একটু সচেতনতাই আপনাকে ভবিষ্যতের কষ্ট থেকে রক্ষা করতে পারে। কিডনিকে ভালো রাখতে চাইলে পানি খান, সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন এবং নিজের শরীরের সংকেতগুলো গুরুত্ব দিন।
মারিয়া