
ছবি: সংগৃহীত।
ভালো ঘুম, প্রশান্ত মন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার জন্য আমরা প্রতিদিন রাতের নির্দিষ্ট রুটিন অনুসরণ করার চেষ্টা করি। যেমন—ঘুমানোর আগে মোবাইল ফোন ব্যবহার না করা, ঠান্ডা ও অন্ধকার ঘরে ঘুমানো, কিংবা আগেভাগে রাতের খাবার খাওয়া। তবে আপনি কি জানেন, প্রতি রাতেই ঘুমাতে যাওয়ার আগে পায়ে ম্যাগনেসিয়াম তেল ব্যবহার করলে শুধু ঘুম নয়, আরও অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়?
রাতে নিয়মিত পায়ে ম্যাগনেসিয়াম তেল মালিশ করলে যে পাঁচটি বড় উপকার পাওয়া যায়, তা নিচে তুলে ধরা হলো—
১. ঘুমের মান উন্নত করে:
ঘুমাতে যাওয়ার আগে পায়ে ম্যাগনেসিয়াম অয়েল ব্যবহারে ঘুমের গুণমান বাড়ে এবং দেহ ও মন আরও বেশি বিশ্রাম পায়। এটি মেলাটোনিন হরমোনকে নিয়ন্ত্রণ করে, যা আমাদের ঘুম-জাগরণ চক্র নির্ধারণ করে। একইসঙ্গে এটি মস্তিষ্কে GABA নামক নিউরোট্রান্সমিটার তৈরিতে সহায়তা করে, যা শরীরকে শান্ত ও রিল্যাক্সড করে।
রাতের ঘুমের সময় যাঁদের পেশিতে টান বা অস্থিরতা থাকে, ম্যাগনেসিয়াম তেল তা কমাতে সাহায্য করে। ফলে গভীর ও নিরবচ্ছিন্ন ঘুম হয়। যারা এই পদ্ধতি নিয়মিত অনুসরণ করেন, তাঁরা ঘুম ভালো হওয়ার পাশাপাশি সকালে আরও চনমনে বোধ করেন।
২. পেশির ব্যথা ও খিঁচুনি দূর করে:
দীর্ঘদিন কাজ বা ব্যায়ামের পর পেশির ব্যথা ও খিঁচুনি অনেকেরই হয়ে থাকে। পেশির স্বাভাবিক শিথিলতার জন্য ম্যাগনেসিয়াম অত্যন্ত জরুরি, কারণ এটি দেহে ল্যাকটিক অ্যাসিড জমা হওয়া প্রতিরোধ করে।
পায়ে সরাসরি ম্যাগনেসিয়াম অয়েল লাগালে তা নির্দিষ্ট পেশিতে দ্রুত পৌঁছে কাজ করে। এটি শুধু ব্যথা কমায় না, বরং মাসিকের খিঁচুনিও উপশম করে। যাঁরা ‘রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম’ বা পেশির টান সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের জন্য এটি বেশ উপকারী।
৩. মানসিক চাপ কমিয়ে প্রশান্তি আনে:
ধীরে ধীরে জমতে থাকা স্ট্রেস ঘুমের ব্যাঘাত এবং বিপাকক্রিয়ার (metabolism) সমস্যা তৈরি করে। রাতে পায়ে ম্যাগনেসিয়াম তেল ব্যবহার মানসিক চাপ কমানোর এক প্রাকৃতিক উপায়।
এটি ‘সেরোটোনিন’ হরমোনের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে, যা মেজাজ ভালো রাখে এবং স্নায়ুকে আরাম দেয়। পায়ে ম্যাসাজের সময় তৈরি হয় একধরনের প্রশান্তির অনুভূতি, যা শরীরকে ঘুমের জন্য প্রস্তুত করে। একইসঙ্গে এটি কর্টিসল হরমোন কমিয়ে উদ্বেগ দূর করে।
৪. হজমে সহায়তা ও কোষ্ঠকাঠিন্য উপশম:
ম্যাগনেসিয়াম অন্ত্রের পেশিকে শিথিল করে এবং মল নরম করতে সাহায্য করে। ফলে এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রাকৃতিক ও কোমল সমাধান হিসেবে কাজ করে।
পায়ে ম্যাগনেসিয়াম তেল ব্যবহার শরীরের ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে, যা হজম প্রক্রিয়ার উন্নতিতে সহায়তা করে। নিয়মিত ব্যবহারে পেট ফোলা ও অনিয়মিত মলত্যাগের সমস্যা দূর হয়, এবং ওরাল ল্যাক্সেটিভ-এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়।
৫. পায়ের ত্বক পুষ্টি পায় ও রক্ষা করে:
ম্যাগনেসিয়াম তেল পায়ের ত্বকের জন্যও উপকারী। এটি ত্বককে আর্দ্র রাখে, ফাটা ও শুষ্কতা দূর করে এবং ত্বকের সুরক্ষামূলক আবরণকে শক্তিশালী করে।
এতে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণাগুণ পায়ের ত্বকের জ্বালা ও ছোটখাটো সমস্যা দ্রুত সারাতে সাহায্য করে। যাঁরা খালি পায়ে হাঁটেন বা শুষ্ক পায়ের সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের জন্য এটি কার্যকর।
কীভাবে ব্যবহার করবেন ম্যাগনেসিয়াম অয়েল?
প্রথমে উষ্ণ পানি ও হালকা সাবান দিয়ে পা পরিষ্কার করুন। এরপর হালকা ভেজা অবস্থায় প্রতি পায়ে ৫-১০ বার স্প্রে করুন। বিশেষভাবে পায়ের গোড়ালি, আঙুলের বল ও আর্চ এলাকায় স্প্রে করুন। এরপর ২-৩ মিনিট মালিশ করুন যেন এটি ভালোভাবে শোষিত হয়। চাইলে রাতে রেখে দিতে পারেন, অথবা যাঁদের অস্বস্তি বা চুলকানি হয়, তাঁরা ২০-৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে পারেন।
মিরাজ খান