
নারীর রাজনৈতিক সচেতনতা নিয়ে আলাপ আলোচনা হয়েছে বহুবার। এমন কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংরক্ষিত আসন নয় বরং সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিয়ে মাঠে-ময়দানের রাজনীতিও সামনে এসেছে। সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত হওয়া মানেই বিশেষ সংগঠনের বিবেচনা অনুযায়ী সংসদীয় আসনে বসা। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পরও নানাভাবে প্রশ্ন উঠেছে, গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রীদের অংশ নেওয়া কেমন যেন উঠেছে গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রীদের অংশ নেওয়া কেমন যেন পেছনে চলে যাচ্ছে। অথচ ১৬ বছরের দীর্ঘ অপশাসনের পর যে শিক্ষার্থী আন্দোলন সেখানে ছাত্রীদের অংশগ্রহণ নজরকাড়া ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ছাত্রীদের সচেতন দায়বদ্ধতায় কেন যে প্রশ্ন উঠেছে সেটাও এক অজানা বিস্ময়। পুনরায় ছাত্রীদের এক পতাকায় সমবেত হয়ে আওয়াজ তুলতে হয়েছে তাদের যথাযথ অবদানকে কেন স্বীকৃতি জানাতে কার্পণ্য করা হচ্ছে? সামনে অপেক্ষা করছে একটি অবাধ, গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচন। সঙ্গতকারণে রাজনীতির অংশ নেওয়া নারীরা আবারও সংসদ নির্বাচনে তাদের আসন বণ্টনে সমতাকে গুরুত্ব দেওয়ার ওপর জোর দাবি জানাচ্ছেন দেশে নারী-পুরুষ সমসংখ্যক। শুধু তাই নয় জরিপে আসে ৫১% নারী আর ৪৯% পুরুষ। রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ যেমন জরুরি পাশাপাশি তাদের স্বাধীন মনোবৃত্তি, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা অধিকার সবই সমানভাবে থাকাও বাঞ্ছনীয়। আগেও এমন জরুরি প্রত্যয় নিয়ে সভা-সমাবেশ, আলোচনার প্রতিবাদ এসেছে। যেখানে রাজনীতি আর নির্বাচন কারও অধীন কিংবা আজ্ঞাবহ হবে না। সমতার ভিত্তিতে জাতীয় সংসদ আসনে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয় সংশ্লিষ্ট জনগণের প্রতিনিধিত্ব করা সময়ের দাবি। পুরানো ও স্বৈরাচারী সরকার বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে মান্ধাতা আমলের হরেক কুসংস্কার আর বিপরীত স্রোতকে ও পরিহার করা নারীকে সমঅধিকার ও মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হতে সুযোগ দেওয়া।
এর আগে নারী বিষয়ক সংস্কর কমিশন বিভিন্ন দাবি দাওয়ার মাধ্যমে প্রতিকার-প্রতিরোধ চেয়েছে। বদলে যাওয়া নতুন বাংলাদেশে নারীর তার ন্যায্য আসনে প্রত্যক্ষ নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়াও আধুনিক বৈষম্যহীন বাংলাদেশের জন্য অন্যতম দায়বদ্ধতা।
সম্প্রতি ১২ জুলাই আবারও নারী সমাজ একত্রিত হয়ে অধিকার ও স্বাধীন মনোবৃত্তির আলোকে সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়াও পরিস্থিতির অনিবার্যতা। নতুন সময়ের আধুনিক বাংলাদেশে নারীকে তার প্রাপ্য অধিকার ও ন্যায্যতার দাবিতে সমান ভাবে অংশ নিতে দেওয়া কাক্সিক্ষতই শুধু নয় দেশের সার্বিক বৈষম্য দূরীকরণেরও বিশেষ ভূমিকা অর্জনে সহযোগিতা দেওয়া অত্যন্ত বিধিসম্মত এবং সমতার আলোকিত জগৎ তৈরি করা। এর ব্যত্যয় ফেলে আসা মান্ধাতা আমলের অপসংস্কার কাঠামোর শিকড়ে গেঁথে যাওয়া অমূলক নয়। সেখানে সংরক্ষিত আসন হলে এক- তৃতীয়াংশ করারও কঠোর প্রত্যয় আসে নারীদের পক্ষ থেকে। তা অবশ্যই প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে। ১২ জুলাই ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক কাতারে দাঁড়িয়ে এমন সমতার জন্য লড়াইয়ের আহ্বান জানান নারীরা।
বর্তমানে জাতীয় সংসদের মোট আসন ৩৫০টি। সেখানে ৫০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলাপ আলোচনায় নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ১০০ করার বিষয়ে দাবি ওঠে। তাতে নীতিগত ভাবে রাজনৈতিক দলের সম্মতি রয়েছে বলে জানা যায়। তবে বিএনপিসহ কয়েকটি দল সরাসরি নির্বাচনের বিপক্ষে আছে বলে বিভিন্নভাবে উঠে আসছে।
১২ জুলাইয়ের নারীদের মিলিত সভায় সভাপতিত্ব করেন মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম। তার বক্তব্যে উঠে আসে কাউকে পেছনে ফেলে সত্যিকারের গণতন্ত্র, সার্বিক জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সাবেকি আমলের সরকারের মতো হতে বেশি সময় নেবে না। সামাজিক হরেক বিপন্নতায় সমসংখ্যক নারী স্বাভাবিক নিয়মে পশ্চাদবর্তী হয়। সুযোগের অভাবে কত অভিজ্ঞ, দক্ষ নারী সামনে আসতেও হোঁচট খায় বিধিবদ্ধ সমাজের হরেক প্রতিবন্ধকতায়। আর সেখানেই নারীদের জন্য যথার্থ সুযোগ তৈরি করে দেওয়া প্রত্যেকের দায়বদ্ধতা। অতি অবশ্যই তা সমসংখ্যকের সমতার আলোকে।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট নারী নেত্রী মালেকা বেগম বলেন, আর কারও আজ্ঞাবহ হয়ে নয় বরং সরাসরি সমতার আসন বণ্টনের মাধ্যমে নারীদের অধিকার ও স্বাধীনতার মান্যতা দেওয়া বদলে যাওয়া নতুন ও আধুনিক বাংলাদেশের জন্য বৈষম্যহীন এক সামাজিক ব্যবস্থাপনা নিতান্ত জরুরি।
প্যানেল/মো.