ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

অপরাজিতা

জুলাই আন্দোলনে শহীদ

অপরাজিতা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:২৩, ১৭ জুলাই ২০২৫

জুলাই আন্দোলনে শহীদ

নাইমা সুলতানা

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি বরণীয় স্মরণীয় সন্দেহ নেই। তবে কত ক্ষত-বিক্ষত দাবানলে মর্মান্তিক শহীদ কন্যাদের স্মৃতি চারণ আর এক দুঃসহ বাতাবরণ। এমন সরকার পতনের অভ্যুত্থান যেন স্বৈরাচার শাসনের অবসানে স্বস্তিকর এক যাত্রা। কিন্তু বিপরীত প্রদাহও ছিল সহিংস আঁচড়ের নির্মম যাতনা।
 
‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে
কত প্রাণ হলো বলিদান
লেখা আছে অশ্রুজলে।’ 

অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন ১০ নারী যোদ্ধা সম্মুখ সমরে। তাই স্মৃতির পাতা ভারি হয়ে আসে তেমন মর্মান্তিক, শোচনীয় মৃত্যুর করুণ আর্তনাদে। পরিবার হারায় তাদের স্নেহাস্পদ কন্যা সন্তানদের। আর জাতি হাসিয়েছে দুঃসাহসিক বৈপ্লবিক চেতনায় সমৃদ্ধ নারী যোদ্ধাদের। যুগে যুগে জাতির 
ঝঞ্চাবিক্ষুব্ধ পদযাত্রায় রক্তের বন্যা বইয়ে যাওয়া ইতিহাসের এক অবর্ণনীয় বিক্ষুব্ধ পিচ্ছিল অধ্যায়। যা স্মরণে বরণে উচ্চারিত হলেও হারানোর বেদনা যে নিত্য এক সংক্ষুব্ধ বিপন্ন রাস্তা। 
২০২৪ সালের সরকার পতনের রক্ত ঝরা আন্দোলনে ছাত্রীদের সামনে চলে আসা ছিল সে সময়ের সমতার উপস্থিত নজির। নারী বলে রক্তস্নাত বৈপ্লবিক পদযাত্রায় মোটেও দমে থাকেনি অগণিত ছাত্রী। সমস্ত বিপদশঙ্কুল পথকে পাড়ি দেওয়া জুলাই শহীদ কন্যারা আজও রক্তাক্ত দলিলের নিঃশর্ত দাবিদার। কিন্তু পরবর্তী সরকার পতনের পালাক্রমে তাদের নিঃস্বার্থ অভিগমন কেমন যেন পিছু হটতে থাকে। যা আজও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আর এক বিপরীত স্রোত। সময়ের গতি প্রবাহে প্রশ্ন উঠতে থাকে- জুলাই কন্যাদের স্বীকৃতি দিতে কেন এত কার্পণ্য? বছর অতিক্রান্তের যথার্থ সময়েও তেমন প্রশ্ন এখনো কেন সংশ্লিষ্টদের ভারাক্রান্ত করছে? জুলাই প্রথম শহীদ কন্যা নাঈমা সুলতানার জন্মমাসও এই রক্তাক্ত জুলাইয়ের। তাই পরিবারের জন্য কতখানি মর্মস্পর্শী দগ্ধতার বিষয় তা ভাবাই যায় না। নাঈমার জন্মদিন ২৬ জুলাই। আর রক্তাক্ত বৈপ্লবিক যাত্রাপথে শহীদ হন ২০২৪ এর ১৯ জুলাই। তবে জুলাই অভ্যুত্থানে ১০ নারী শহীদের নাম লিপিবদ্ধ আছে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত গেজেটে। শহীদ ১০ নারীর মধ্যে ৭ জনই পুলিশের গুলির আঘাতে মারা গেছেন ঢাকায়। ২ জন নারায়ণগঞ্জে এবং একজন সাভারে। ১০ শহীদ নারীর পরিবারের হাহাকার হয়তো বা কোনো দিনই থামবে না। জন্ম-মৃত্যু আল্লাহর বিধান। কিন্তু রক্তাক্ত পদযাত্রায় কোনো আন্দোলন-অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া ভিন্নতর এক অসহনীয় দুর্ভোগ। যা পরিবারের জন্য এক নিতান্ত যন্ত্রণার কঠিন বলয়। সমসংখ্যক নারী জাতির ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ চরম দুঃসময়ে পথে নেমে আসতে কখনো পেছন ফিরে তাকায়নি। সেই রক্ত ঝরা একুশ ফেব্রুয়ারি থেকে ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান আর ’৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রামের কঠিন যাত্রাপথে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে শহীদ নারীদের নিঃশর্ত, নিঃস্বার্থ অবদানে। ১৬ বছরের একনায়কতন্ত্র অবসানেও স্বৈরাচারের দুঃসহ যাতনায় বিক্ষুব্ধ দেশপ্রেমিক নারী সমাজও সরাসরি লড়াইয়ের ময়দানে ছুটে যাওয়া জাতীয় জীবনের গৌরব ও অহঙ্কার। সন্তান হারানোর বেদনায় এক বছর পূর্তি সংশ্লিষ্ট পরিবারদের জন্য বেদনাসিক্ত এক নির্মম স্মরণীয় প্রতিবেশ। সাড়া জাগানো এই অভ্যুত্থান দীর্ঘ শাসনের কঠিন বেড়াজাল ভাঙতে কত কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে, কত জীবন্ত সতেজ আগামীর প্রজন্ম রক্তাক্ত যাত্রায় শহীদ হয়েছেন তা যেন এক অমানিশার ঘোর অন্ধকার। সেখানে আলোর বন্যা বইয়ে দিতে যারা মূল্যবান প্রাণকে শুধু বাজি রাখা নয় তার চেয়ে বেশি উৎসর্গ করে দেওয়া জাতির জীবনে অপরিশোধ্য এক পরম অর্জন। সেখানে সমসংখ্যক নারী যোদ্ধারাও যার যা আছে তাই নিয়ে সম্মুখ যুদ্ধবিধ্বস্ত বাতাবরণকে আলিঙ্গন করতে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। 
 

প্যানেল/মো.

×