ছবিঃ সংগৃহীত
আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ লিভার, যা প্রতিদিন ৫০০-রও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে—বিশেষত দেহকে বিষমুক্ত করা, পুষ্টি প্রক্রিয়াকরণ, ও হজমে সহায়তা করা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, আমরা এই অঙ্গের যত্নে প্রায়শই অবহেলা করি—যতক্ষণ না সমস্যা গুরুতর রূপ নেয়।
লিভার যখন ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে, তখন অনেক সময় প্রাথমিক লক্ষণগুলো এতটাই সূক্ষ্ম হয় যে আমরা সাধারণ ক্লান্তি, হজমের সমস্যা, বা ত্বকের সমস্যা ভেবে এড়িয়ে যাই। কিন্তু এই লক্ষণগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা নিলে বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব।
চলুন জেনে নিই লিভার রোগের এমনই ৭টি উপেক্ষিত প্রাথমিক লক্ষণ:
১. দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি ও দুর্বলতা
যদি আপনি নিয়মিত ঘুমের পরও সর্বদা ক্লান্ত বোধ করেন, তাহলে তা লিভারজনিত সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। লিভার ঠিকভাবে কাজ না করলে শরীরে পর্যাপ্ত শক্তি উৎপন্ন হয় না। এই ক্লান্তিকে যদি আমরা শুধু স্ট্রেস বা ওভারওয়ার্ক বলে এড়িয়ে যাই, তাহলে ভুল করছি।
২. পেটব্যথা বা ফুলে যাওয়া
ডান দিকের ওপরের পেটের দিকে অস্বস্তি, চাপ বা ব্যথা লিভারের প্রদাহ বা স্ফীত হওয়ার লক্ষণ হতে পারে। কখনও আবার পেটে পানি জমে (যাকে বলা হয় অ্যাসাইটিস), পেট ফুলে উঠতে পারে। এটি হজমের সমস্যা বা গ্যাস ভেবে বসে থাকলে সমস্যা বাড়তে পারে।
৩. চোখ বা চামড়ায় হলদে ভাব (জন্ডিস)
যদি আপনার চোখ বা চামড়ায় হালকা হলুদ ভাব দেখা যায়, তবে এটি জন্ডিসের লক্ষণ হতে পারে। এটি তখন হয় যখন লিভার ঠিকভাবে বিলিরুবিন প্রসেস করতে পারে না। এমন কিছু দেখলে আলো বা রোদ মনে করে এড়িয়ে যাবেন না—ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৪. চুলকানি ত্বক
বিশেষ করে হাত-পা বা পুরো শরীরে যদি অকারণে চুলকায় এবং কোনো ক্রিম বা ওষুধে আরাম না পান, তাহলে এটি লিভারের সমস্যার কারণ হতে পারে। কারণ, লিভার সঠিকভাবে কাজ না করলে শরীরে পিত্ত লবণ জমে গিয়ে ত্বকে চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে।
৫. প্রস্রাবে রঙের পরিবর্তন
যদি আপনি লক্ষ্য করেন আপনার প্রস্রাব গাঢ় হলুদ বা বাদামি হয়ে যাচ্ছে, তবে সেটি শুধুই পানিশূন্যতার কারণে নয়—বরং অতিরিক্ত বিলিরুবিন নিঃসরণের ফল হতে পারে। এটি অন্য উপসর্গের সাথে হলে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে যান।
৬. হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া
খাবারে অরুচি, হজমে সমস্যা ও পুষ্টির ঘাটতির কারণে লিভার রোগে হঠাৎ করে ওজন কমে যেতে পারে। কেউ কেউ এটিকে ভালো পরিবর্তন মনে করলেও, যদি এই ওজন কমানো পরিকল্পনার বাইরে ঘটে, তবে তা উদ্বেগজনক।
৭. মল/স্টুলের রঙ বদলে যাওয়া
স্বাভাবিক মলের রঙ বাদামী হলেও, যদি সেটি হঠাৎ করে ফ্যাকাসে, ধুসর বা কাদা রঙের হয়ে যায়, তাহলে তা হতে পারে লিভারের বাইল উৎপাদন হ্রাসের লক্ষণ। আবার খুব গাঢ় বা কালচে মল অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের ইঙ্গিত হতে পারে।
লিভারকে যত্নে রাখাটা জীবনকে সুস্থ ও দীর্ঘ করতে সহায়ক। উপরের লক্ষণগুলোর যেকোনো একটি বা একাধিক দেখা গেলে, সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে লিভার রোগের চিকিৎসা অনেক সহজ হয়।
মারিয়া
