
ছবি: সংগৃহীত।
আজকের কর্পোরেট কিংবা সামাজিক নেতৃত্বের বাস্তবতায় শুধুমাত্র কৌশলগত জ্ঞান কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা যথেষ্ট নয়। একবিংশ শতাব্দীর নেতৃত্বের মূল চালিকাশক্তিগুলোর একটি হলো সহানুভূতি (Empathy)—অন্যের অবস্থান, অনুভব এবং চ্যালেঞ্জগুলো হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করার ক্ষমতা। যারা সত্যিকার অর্থে নেতৃত্ব দিতে চান, তাদের জন্য সহানুভূতি এখন আর কোনো ‘ভালো থাকার গুণ’ নয়, বরং এটি একটি "নন-নেগোশিয়েবল স্কিল", অর্থাৎ যার কোনো বিকল্প নেই।
সহানুভূতি কেন একটি অপরিহার্য নেতৃত্ব দক্ষতা?
নেতৃত্ব মানে কেবল কাজ বণ্টন বা ফলাফল অর্জনের চাপ নয়; নেতৃত্ব মানে হলো একটি দলকে, একটি সম্প্রদায়কে এমনভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, যেখানে সদস্যরা নিজেদের মূল্যবান ও নিরাপদ অনুভব করে। সহানুভূতিশীল নেতারা কর্মীদের প্রতি যত্নবান হন, তাদের মানসিক চাপ বুঝতে পারেন এবং সেই অনুযায়ী সমাধান খুঁজে বের করেন। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব নেতারা সহানুভূতির সাথে নেতৃত্ব দেন, তাদের অধীনস্থরা বেশি প্রোডাক্টিভ, কম বার্নআউট হন এবং দীর্ঘমেয়াদে প্রতিষ্ঠানের প্রতি বেশি অনুগত থাকেন।
কীভাবে একজন নেতা হিসেবে সহানুভূতি চর্চা করবেন?
১. সক্রিয়ভাবে শোনা (Active Listening)
অনেক নেতা কথা বলেন বেশি, শোনেন কম। সহানুভূতির প্রথম ধাপ হলো মনোযোগ দিয়ে শোনা—কারো সমস্যার গল্প শোনার সময় শুধু কথার অর্থ নয়, তার ভেতরের অনুভূতিগুলো বোঝার চেষ্টা করুন।
২. নন-ভারবাল সংকেতগুলো বুঝুন
শুধু মুখের কথা নয়, দেহভঙ্গি, চোখের ভাষা, চুপ করে থাকা বা হঠাৎ আচরণ বদলে যাওয়ার পেছনের কারণ অনুধাবন করার চেষ্টা করুন। এতে আপনি জানতে পারবেন, সামনে থাকা মানুষটি আসলে কেমন বোধ করছেন।
৩. সহজ করে অনুভব করা ও প্রকাশ করা
যদি কেউ মানসিক চাপে থাকে, তাকে শুধু বলবেন না যে “সব ঠিক হয়ে যাবে”। বরং বলুন, “আমি বুঝতে পারছি, এটা তোমার জন্য কঠিন সময়। আমি আছি পাশে।” এই অনুভবটাই মানুষকে মানসিকভাবে সাহসী করে তোলে।
৪. নিজেকে অন্যের জায়গায় কল্পনা করুন
এটি হলো ‘রোল রিভার্সাল’ বা অবস্থান পরিবর্তনের অনুশীলন। আপনি যদি সেই কর্মীর জায়গায় থাকতেন—এই প্রশ্নটা নিজেকে করুন। এতে আপনি আরও মানবিক ও সংবেদনশীল সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
৫. প্রতিনিয়ত ফিডব্যাক ও প্রশংসা দিন
সহানুভূতিশীল নেতারা শুধু ভুল ধরেন না, সঠিক কাজগুলোর প্রশংসাও করেন। তারা কর্মীদের উৎসাহ দেন, যা একটি ইতিবাচক কর্মপরিবেশ তৈরি করে।
সহানুভূতি এখন আর ‘সফট স্কিল’ নয়—এটি নেতৃত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা উচিত। প্রযুক্তি যতই আধুনিক হোক, শেষ পর্যন্ত মানুষ পরিচালনা করে মানুষকেই। আর সেই নেতৃত্বে মানুষের আবেগ, অনুভব ও সংকটে পাশে দাঁড়ানো ছাড়া টেকসই সাফল্য সম্ভব নয়। একজন সহানুভূতিশীল নেতা কেবল ভালো কর্মী গড়ে তোলেন না, তিনি গড়ে তোলেন একটি সজীব, মানবিক ও উদ্ভাবনী দল।
আপনি কি আপনার নেতৃত্বে সহানুভূতির জায়গা তৈরি করছেন?
নুসরাত