
ছবি: প্রতীকী
বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ার ঝলমলে দুনিয়ায় আমরা অনেকেই নিজেদের জীবনের সাফল্য বা ব্যর্থতা অন্যদের সাথে তুলনা করতে গিয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে পড়ি। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, রিলস কিংবা টিকটকের সাজানো-গোছানো জীবনের ঝলক দেখে মনে হয়, অন্যেরা অনেক বেশি সুখী। কিন্তু বাস্তবতা কি সত্যিই তাই?
সম্প্রতি একটি গল্প সামাজিক মাধ্যমে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, যেখানে একটি সাধারণ কাকের চোখ দিয়ে এই চিরন্তন সত্যটি তুলে ধরা হয়েছে— নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করা আসলে আত্মিক অশান্তির অন্যতম বড় উৎস।
গল্পটি এমন: এক কাক উড়ে গিয়ে একটি গাছের ডালে বসে রাজহাঁসকে দেখতে পায়। রাজহাঁসের ঝকঝকে সাদা পালকে মুগ্ধ হয়ে কাকটি ভাবে, যদি সে এমন সাদা পালকের অধিকারী হতো, তাহলে হয়তো সবার ভালোবাসা ও প্রশংসা পেত। কিন্তু যখন কাকটি রাজহাঁসের কাছে যায়, তখন সে জানতে পারে রাজহাঁস আদৌ সুখী নয়। সে জানায়, তার সৌন্দর্য মানুষের নজরে এলেও, মানুষ তাকে পোষ মানিয়ে রাখে এবং বয়স হলে মাংসের জন্য জবাই করে ফেলে।
এরপর কাকটি টিয়া পাখির খোঁজে যায়, কারণ রাজহাঁস মনে করে টিয়া সবচেয়ে সুখী। কিন্তু টিয়া জানায়, তার রঙিন পালকের জন্য সে বন্দি জীবন কাটায়। তারপর কাকটি ময়ূরের কাছে যায়, যে কিনা সৌন্দর্যের প্রতীক। অথচ ময়ূর জানায়, তার পালক মানুষের লালসার শিকার হয়— জোর করে ছিঁড়ে নেওয়া হয় তার পালক।
ময়ূর বলেই ফেলে— “আমি যদি কাক হতে পারতাম, তাহলে কতোই না ভালো হতো! তোমাদের প্রতি মানুষের কোনো আগ্রহ নেই, তোমরা কতটা স্বাধীনভাবে জীবন কাটাও!”
এই কথাগুলো কাকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। সে বুঝতে পারে, সে যাকে তুচ্ছ ভেবেছিল, সেই কাক হওয়াই আসলে আশীর্বাদ। সে ফিরে গিয়ে বৃদ্ধ কাকের কাছে বলে— “আমি এখন আর অন্য পাখি হতে চাই না। আমি কৃতজ্ঞ যে আমি একটি কাক।”
এই গল্পটি আমাদের শেখায়, সুখ আসলে বাহ্যিক কিছু নয়, বরং মানসিক সন্তুষ্টির উপর নির্ভর করে। অন্যের সাফল্য দেখে নিজের জীবনকে মূল্যায়ন করলে আমরা শুধু হতাশাই লাভ করি। সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেককে ভিন্ন ভিন্নভাবে সৃষ্টি করেছেন, এবং প্রতিটি সৃষ্টির মাঝেই বিশেষ কিছু গুণ বা সৌন্দর্য রয়েছে।
তাই, জীবন নিয়ে হতাশ না হয়ে যা আছে তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাই সুখী জীবনের মূল চাবিকাঠি। মনে রাখুন— নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা না করে নিজের বিশেষত্ব খুঁজে বের করাটাই হলো প্রকৃত সার্থকতা।
ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=gmGHBfTPKjs
এম.কে.