ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

সকালে খালি পেটে প্রতিদিন দুটি ডিম খেলে কি হবে?

প্রকাশিত: ০৭:৫৮, ২৬ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৭:৫৮, ২৬ জুন ২০২৫

সকালে খালি পেটে প্রতিদিন দুটি ডিম খেলে কি হবে?

ছবি: সংগৃহীত

সকালে খালি পেটে প্রতিদিন দুটি ডিম খাওয়া বেশিরভাগ সুস্থ মানুষের জন্য খুবই উপকারী এবং নিরাপদ। ডিম হলো একটি পুষ্টির powerhouse, যা আপনার দিনের শুরুটা দারুণভাবে করতে সাহায্য করে।

প্রতিদিন সকালে দুটি ডিম খাওয়ার সম্ভাব্য উপকারিতা:

  • উচ্চমানের প্রোটিনের উৎস: ডিমে অত্যাবশ্যক অ্যামাইনো অ্যাসিড সমৃদ্ধ উচ্চমানের প্রোটিন থাকে, যা শরীরের পেশি গঠন, মেরামত এবং সামগ্রিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সকালে প্রোটিন খেলে তা সারাদিন আপনাকে শক্তি যোগায় এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে, ফলে অতিরিক্ত খাবার বা অস্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস খাওয়ার প্রবণতা কমে।

  • ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: প্রোটিন সমৃদ্ধ হওয়ায় ডিম ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। এতে আপনি কম ক্যালোরি গ্রহণ করেন এবং দীর্ঘক্ষণ তৃপ্ত থাকেন, যা ওজন কমাতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

  • দৃষ্টিশক্তির উন্নতি: ডিমে থাকা ভিটামিন এ, লুটেইন এবং জেক্সানথিন চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। এই উপাদানগুলো বয়সজনিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশন (AMD) এবং ছানি পড়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে, যা দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে।

  • মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য: ডিমে থাকা কোলাইন মস্তিষ্কের কার্যকারিতা, স্মৃতিশক্তি এবং স্নায়ুতন্ত্রের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় এবং শিশুদের বিকাশেও কোলাইনের ভূমিকা অপরিসীম।

  • হাড়ের স্বাস্থ্য: ডিম ভিটামিন ডি-এর একটি ভালো উৎস, যা ক্যালসিয়াম শোষণ এবং হাড়ের সুস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি।

  • ভিটামিন ও খনিজের ভান্ডার: ডিমে ভিটামিন বি২, বি১২, বি৫, ই, সেলেনিয়াম, আয়রন, ফসফরাস এবং ফোলেটের মতো আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও খনিজ থাকে, যা শরীরের বিভিন্ন কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য।

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: ডিমে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, যা আপনাকে বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখে।

কিছু সতর্কতা:

যদিও দুটি ডিম খাওয়া বেশিরভাগ মানুষের জন্য উপকারী, কিছু ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা প্রয়োজন:

  • কোলেস্টেরল: ডিমের কুসুমে কোলেস্টেরল থাকে। তবে, সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, খাদ্যের কোলেস্টেরল রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে তেমন ভূমিকা রাখে না, বিশেষ করে সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে। তবে, যদি আপনার উচ্চ কোলেস্টেরল বা হৃদরোগের ইতিহাস থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডিমের পরিমাণ নির্ধারণ করা উচিত। এমন ক্ষেত্রে অনেকে শুধু ডিমের সাদা অংশ খেতে পছন্দ করেন।

  • কাঁচা বা আধা সেদ্ধ ডিম: কাঁচা বা আধা সেদ্ধ ডিম খাওয়া এড়িয়ে চলুন, কারণ এতে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে, যা ফুড পয়জনিং ঘটাতে পারে। ডিম সবসময় ভালোভাবে সেদ্ধ বা রান্না করে খাওয়া উচিত।

  • হজমের সমস্যা/এলার্জি: কিছু মানুষের ডিমের প্রতি সংবেদনশীলতা বা এলার্জি থাকতে পারে, সেক্ষেত্রে ডিম খেলে গ্যাস, পেট ফাঁপা বা অন্যান্য হজমজনিত সমস্যা হতে পারে। এমনটা হলে ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

  • কিডনি রোগ: ক্রনিক কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে প্রোটিনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত রাখা জরুরি, তাই তাদের ডিম খাওয়ার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

 

সাধারণত, প্রতিদিন সকালে দুটি সেদ্ধ ডিম খাওয়া সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য একটি চমৎকার অভ্যাস। এটি আপনাকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে এবং সারাদিনের জন্য শক্তি ও কর্মক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তবে, আপনার যদি কোনো নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকে, তাহলে ডিমের পরিমাণ বা খাওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে একজন পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে ভালো।

সাব্বির

×