
ছবি: সংগৃহীত
আধুনিক কর্মজীবনের ব্যস্ততা আমাদের দেহের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ—যকৃতের—ওপর এক ধরনের নীরব চাপ সৃষ্টি করছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। দিনের পর দিন ডেস্কে বসে কাজ করা, দুশ্চিন্তা, অনিয়মিত খাদ্যগ্রহণ ও শরীরচর্চার অভাবের কারণে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD)-এর ঝুঁকি বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে।
এই রোগটি শুধু স্থূলকায়দের মধ্যে নয়, স্বাভাবিক ওজনধারীদের মধ্যেও বাড়ছে, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানে ‘লিন এনএএফএলডি (Lean NAFLD)’ নামে পরিচিত। এটি হলো সেই অবস্থা যেখানে একজন ব্যক্তির বডি মাস ইনডেক্স (BMI) স্বাভাবিক বা কম থাকা সত্ত্বেও নন-অ্যালকোহলযুক্ত ফ্যাটি লিভার রোগ (NAFLD) ধরা পড়ে।
‘সুস্থ’ দেখালেও ঝুঁকিতে থাকতে পারেন
রুবি হল ক্লিনিক, ভারতের পুনের সার্জিক্যাল গ্যাস্ট্রোএনটেরোলজিস্ট ও জিআই এন্ডোস্কোপিস্ট ডা. নরেন্দ্র চোপদে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘অফিসকেন্দ্রিক চাকরি ও রিমোট ওয়ার্কের কারণে নিরবচ্ছিন্ন বসে থাকার যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, তা যকৃতের চর্বি জমার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে মেটাবলিক কার্যক্রম কমে যায় এবং যকৃতে চর্বি জমতে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘স্বল্প সময়ের মধ্যে খাওয়া, প্রক্রিয়াজাত খাবার, বাইরের খাবারের উপর নির্ভরতা, অতিরিক্ত মিষ্টি পানীয় ও নিয়মিত খাবার বাদ দেওয়া—সব মিলিয়ে যকৃতের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। কাজের চাপ থেকে আসা মানসিক চাপ হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করছে, ইনসুলিন প্রতিরোধ গড়ে তুলছে এবং যকৃতের কোষে চর্বি জমার মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদে এসবের ফল হতে পারে ইনফ্ল্যামেশন, ফাইব্রোসিস বা সিরোসিস।’
ঘুমের অনিয়ম, ওষুধের অপব্যবহার বাড়াচ্ছে বিপদ
ডা. চোপদে আরও বলেন, অনিয়মিত ঘুম এবং অতিরিক্ত পেইনকিলার ও অ্যান্টাসিড সেবনের অভ্যাস—যা অনেক পেশাজীবীর মধ্যে সাধারণ—যকৃতের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে।
‘সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, যকৃতের বেশিরভাগ রোগ নীরবেই বিকশিত হয়। অনেকেই টের পান না, যতক্ষণ না এটি মারাত্মক অবস্থায় পৌঁছায়’, বলেন তিনি।
তাই তিনি নিয়মিত লিভার ফাংশন টেস্ট ও ফাইব্রোস্ক্যান করার পরামর্শ দেন।
করণীয় কী?
- নতুন কর্মজীবন-ভিত্তিক স্বাস্থ্যহানিকর অভ্যাসের মোকাবিলায় চিকিৎসক ডা. চোপদে পরামর্শ দেন—
- দৈনিক কিছু সময় শরীরচর্চা
- ঘড়ি ধরে ও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খাওয়া
- চাপ কমানোর কৌশল যেমন মেডিটেশন বা বিশ্রাম
- পর্যাপ্ত ঘুম
- বছরে অন্তত একবার চিকিৎসকের পরামর্শ ও যকৃত পরীক্ষা
তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজের ধরন যত পরিবর্তিত হচ্ছে, ততই প্রয়োজন আমাদের স্বাস্থ্যচর্চার পন্থাও পরিবর্তন করা। নীরবে যকৃতের যত্ন নেওয়াটা এখন আর বিলাসিতা নয়, বরং জরুরি স্বাস্থ্যসচেতনতার অংশ।’
নোট: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্য দেওয়ার উদ্দেশ্যে তৈরি। যেকোনো শারীরিক সমস্যায় নিজ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস।
রাকিব