
ছবি: সংগৃহীত
ডায়াবেটিস এখন আর শুধু বয়স্কদের রোগ নয়—তরুণ, প্রাপ্তবয়স্ক এমনকি স্কুলপড়ুয়া অনেকের শরীরেও নীরবে ঢুকে পড়ছে এই মরণব্যাধি। অনেকেই একে নিয়ন্ত্রণে রাখতে শুধু ওষুধের দিকে ঝুঁকছেন, অথচ গবেষণা বলছে—ট্যাবলেট বা ইনসুলিনের চেয়েও কার্যকর হতে পারে প্রতিদিনের কিছু সহজ অভ্যাস বদল।
পরিসংখ্যানের ভয়াবহ চিত্র❗
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের হিসেব অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে প্রায় ১ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তাদের বড় একটি অংশ প্রতিদিন ওষুধ খাচ্ছেন, কিন্তু নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন না সুগার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বলছে—টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে ৮০ শতাংশ-এর ক্ষেত্রেই সঠিক খাদ্য, ব্যায়াম ও ঘুম নিশ্চিত করা গেলে ওষুধ ছাড়াই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
কোন কোন অভ্যাস বদল জরুরি?
১. খাদ্যাভ্যাসে সচেতনতা
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে খাবার। সাদা ভাত, ময়দা, চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার কমিয়ে দিতে হবে। খাবারের তালিকায় রাখতে হবে করলা, মেথি, ওটস, লাল চাল, ডাল, বাদাম, শাকসবজি ও আঁশযুক্ত ফলমূল (যেমন পেয়ারা, আমলকী)। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় মেনে ৩–৫ বেলা পরিমিত খাবার খাওয়া জরুরি। খালি পেটে থাকা যাবে না।
২. নিয়মিত ব্যায়াম ও হাঁটা
প্রতিদিন অন্তত ৩০–৪৫ মিনিট দ্রুত হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করলে শরীর ইনসুলিনের প্রতি বেশি সাড়া দেয়। হাঁটাহাঁটি শরীরের ওজন কমায়, রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে এবং শর্করা সঠিকভাবে কাজে লাগে। মেটাবলিজম (বিপাকক্রিয়া) সচল থাকলে ওষুধের চাহিদা কমে যায়।
৩. ওজন নিয়ন্ত্রণ
বিশেষ করে পেটের চর্বি ডায়াবেটিসের বড় শত্রু। বেশি ওজন মানেই ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বেড়ে যাওয়া। প্রিডায়াবেটিক রোগীদের শুধু ৫–৭ কেজি ওজন কমিয়েই সুগার স্বাভাবিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে।
৪. ঘুম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ
ঘুমের অভাবে কর্টিসল হরমোন বেড়ে গিয়ে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায়। তাই প্রতিদিন ৭–৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে মানসিক চাপ কমানো জরুরি। মেডিটেশন, বই পড়া, প্রার্থনা, কিংবা প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকা মানসিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
বিশেষজ্ঞের মত
এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট ডা. তানজিলা হক বলেন, “টাইপ-২ ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য না হলেও নিয়ন্ত্রণযোগ্য। অভ্যাস ঠিক থাকলে অনেক সময় ওষুধ ছাড়াও সুগার স্বাভাবিক থাকে। রোগীরা যদি শুরু থেকেই খাদ্য ও জীবনধারার প্রতি যত্নশীল হন, তাহলে তারা ইনসুলিন বা ওষুধ ছাড়াই দীর্ঘদিন সুস্থ থাকতে পারেন।”
💊 তবে ওষুধ কবে জরুরি?
যাদের FBS (রোজার সুগার) ১০ mmol/L-এর বেশি, বা জটিলতা যেমন চোখ, কিডনি বা স্নায়ুর সমস্যা শুরু হয়েছে—তাদের ক্ষেত্রে ওষুধ অপরিহার্য। তবে সেই ওষুধের সঙ্গেও অভ্যাস পরিবর্তন জরুরি, নইলে ওষুধের মাত্রা বাড়তেই থাকবে।
ডায়াবেটিস মানেই আজীবন ওষুধ—এই ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি। অভ্যাসই হতে পারে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরোধব্যবস্থা। তাই জীবনধারায় পরিবর্তন আনুন—খাদ্য, ঘুম, ব্যায়াম ও মন নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়েই জয় করুন ডায়াবেটিসের ভয়।
Mily