
স্কুল থেকে ফিরেই দরজা বন্ধ করে ঘরের কোণে বসে থাকে কিশোরটি। বন্ধুদের সঙ্গে মাঠে যাওয়ার আগ্রহ নেই, পরিবারের সঙ্গে কথা বলারও সময় নেই—পুরো মন পড়ে থাকে ফোনের পর্দায়। চোখে আছে কৃত্রিম আলো, কিন্তু ভেতরে জমে থাকা অন্ধকার কেউ দেখতে পায় না। এমন দৃশ্য আজকাল অনেক ঘরেই দেখা যায়। মোবাইল ফোন যেন কিশোরদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। তবে এই নীরব নির্ভরতা এখন পরিণত হচ্ছে ভয়ংকর মানসিক সংকটে—যার প্রভাব পড়ছে কিশোরদের আত্মবিশ্বাস, আচরণ ও মানসিক স্বাস্থ্যেও।
গবেষণায় যা উঠে এসেছে
যুক্তরাষ্ট্রের CDC জানায়, ১৩–১৭ বছর বয়সীদের মধ্যে বিষণ্নতার হার ৪৫% বেড়েছে গত ৫ বছরে
বাংলাদেশে ইডিসিআর (IEDCR)-এর তথ্যে দেখা গেছে, স্ক্রিন টাইম ৪ ঘণ্টার বেশি হলেই বিষণ্নতা ও একাকিত্বের ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়
কিশোরদের ঘুম কমে, সামাজিক দক্ষতা হ্রাস পায়, এবং আত্মবিশ্বাসেও নেমে আসে বিপর্যয়
কোন কোন ঝুঁকি তৈরি হয়?
১. ডিজিটাল ডিপ্রেশন
বারবার সোশ্যাল মিডিয়া চেক করা, রিল-ভিউয়ের তুলনা করে আত্মমূল্যায়ন কমে যাওয়া—এগুলো থেকে জন্ম নেয় এক গভীর ‘অনেক পিছিয়ে পড়েছি’ বোধ।
২. সোশ্যাল আইসোলেশন (সামাজিক বিচ্ছিন্নতা)
প্রকৃত বন্ধু নয়, ভার্চুয়াল বন্ধুদের সঙ্গেই সময় কাটে বেশি। বাস্তব জীবনের মানুষদের সঙ্গে সম্পর্ক দুর্বল হয়ে যায়।
৩. ঘুমের ব্যাঘাত
রাতভর স্ক্রল, চ্যাট বা গেম—ফলে ঘুম আসে দেরিতে বা হয়ই না। এর প্রভাব পড়ে মেজাজ, স্মৃতি ও পড়াশোনায়।
৪. মুড ডিজঅর্ডার
বারবার মনমরা, রেগে যাওয়া, মেজাজের ওঠানামা—এসবই মোবাইল আসক্তির লক্ষণ।
কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনবেন?
1. স্ক্রিন টাইম সীমিত করুন: দিনে সর্বোচ্চ ২ ঘণ্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখুন
2. বিকল্প আনন্দের ব্যবস্থা করুন: বই পড়া, খেলাধুলা, সঙ্গীতচর্চা বা শারীরিক খেলায় উৎসাহ দিন
3. পরিবারিক সময় বাড়ান: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট মোবাইলহীন পরিবারিক আড্ডা
4. রাত ৯টার পর ফোন নিষিদ্ধ করুন: ঘুমের আগে ব্লু লাইট থেকে দূরে রাখা জরুরি
5. রোল মডেল হোন: মা-বাবা নিজেরাও যদি ফোন আসক্ত হন, সন্তানদের শেখানো যাবে না
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ডা. রাশিদা সুলতানা বলেন, “কিশোর বয়সেই যদি আত্মবিশ্বাস ভেঙে যায়, তা সারাজীবন ভোগায়। মোবাইল নিয়ন্ত্রণ না করলেই ভবিষ্যতে মানসিক রোগীর সংখ্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।”
মোবাইল ফোন প্রযুক্তির আশীর্বাদ হলেও এর সঠিক ব্যবহার না হলে তা অভিশাপে রূপ নিতে পারে। কিশোরদের রক্ষা করতে পরিবার ও সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে—তবেই নির্মাণ সম্ভব একটি সুস্থ, প্রাণবন্ত ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।
Mily