
ছবি: সংগৃহীত
এক সময় হৃদরোগকে বলা হতো শুধু মধ্যবয়সী বা প্রবীণদের রোগ। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতা ভিন্ন। এখন ৩০–৩৫ বছর বয়সেই হার্ট অ্যাটাকের মতো প্রাণঘাতী সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তরুণদের মধ্যেও হঠাৎ বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় করে ওঠা এখন আর নতুন কিছু নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবনযাত্রার বিশৃঙ্খলা, মানসিক চাপ, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরিক নিষ্ক্রিয়তাই এই বিপদের মূল কারণ।
তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সচেতনতা, সঠিক অভ্যাস আর ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি মেনে চললেই এই রোগ থেকে অনেকটা মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
কেন অল্প বয়সেই হার্ট অ্যাটাক?
1. অনিয়মিত ঘুম ও অতিরিক্ত মানসিক চাপ
2. ফাস্ট ফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রতি আসক্তি
3. ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস
4. অফিসে দীর্ঘ সময় বসে কাজ
5. শরীরচর্চার অভাব
6. ওজন বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ
দৈনন্দিন জীবনে কেমনভাবে চললে মিলবে মুক্তি?
✅ সকালে দিন শুরু হোক স্বাস্থ্যকরভাবে
ভোরে উঠে হালকা ব্যায়াম, প্রাণভরে শ্বাস নেওয়া ও ধ্যান হৃদয়ের জন্য দারুণ উপকারী। খালি পেটে গরম পানি, লেবু-মধু বা এক কোয়া কাঁচা রসুন খাওয়ার অভ্যাস রাখলে রক্ত চলাচল ভালো থাকে।
✅ খাবার হোক ওষুধের মতো
প্রতিদিনের খাবারে রাখুন ওটস, শাকসবজি, ফলমূল, রসুন, অলিভ অয়েল, বাদাম, মাছ ইত্যাদি। জাঙ্ক ফুড, অতিরিক্ত লবণ-তেল ও চিনি এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। পরিমিত খাওয়া ও সময়মতো খাওয়া হৃদয়ের জন্য খুব জরুরি।
✅ শরীর রাখুন সচল
প্রতিদিন অন্তত ৭–৮ হাজার পদক্ষেপ হাঁটা, লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার, বসে কাজের মাঝে বিরতি—এসব ছোট ছোট অভ্যাসই বড় সুরক্ষা দিতে পারে।
✅ মানসিক শান্তি হৃদয়ের সুরক্ষা
স্ট্রেস হৃদরোগের অন্যতম কারণ। প্রতিদিন ১০–১৫ মিনিট মেডিটেশন, বই পড়া, প্রার্থনা বা প্রকৃতির মাঝে হাঁটাচলা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
✅ ঘুম হতে হবে নিরবচ্ছিন্ন
৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম প্রতিদিনের জন্য বাধ্যতামূলক। ঘুমের অভাবে হৃৎস্পন্দন ও রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে।
✅ নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
প্রতি ৬ মাসে একবার রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও ব্লাড সুগার পরীক্ষা করানো উচিত। শরীরের যেকোনো অস্বাভাবিক সংকেত অবহেলা নয়, তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি।
🩺 চিকিৎসকের পরামর্শ
হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মাহফুজা শারমিন বলেন, “বর্তমানে অল্প বয়সে হার্ট অ্যাটাকের হার বেড়েছে কয়েকগুণ। আমরা প্রতিদিনই এমন তরুণ রোগী পাচ্ছি যারা লাইফস্টাইলের অনিয়মের কারণে আক্রান্ত হচ্ছেন। নিয়মিত হাঁটা, স্বাস্থ্যকর খাবার ও স্ট্রেস কমানোই এই রোগ প্রতিরোধের প্রধান উপায়।”
তিনি আরও বলেন, “চিকিৎসা নিতে গেলে অনেকে শুধু ওষুধেই নির্ভর করেন। কিন্তু হার্টের রোগে সেরা চিকিৎসা হলো জীবনযাপন বদলানো।”
৩৪ বছর বয়সী কর্পোরেট কর্মী রাহাত হোসেন জানান, “চাকরির চাপে রাতে ঘুম হতো না, প্রতিদিন বাইরের খাবার খেতাম। একদিন হঠাৎ বুক ধড়ফড় করতে লাগল, ঘাম হচ্ছিল। হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারি, মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক হয়েছে!”
তারপর কীভাবে জীবন বদলেছেন?
“ডাক্তার বললেন, এখনই লাইফস্টাইল না বদলালে সামনে আরও খারাপ হবে। এখন নিয়মিত হাঁটি, ফাস্ট ফুড বাদ দিয়েছি, ধ্যান করি। এখন অনেকটাই ভালো লাগছে।”
🛑 ছোট অভ্যাস, বড় সুরক্ষা
1. দিনে অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করুন
2. ধূমপান ও মদ্যপান থেকে দূরে থাকুন
3. রাত ১১টার মধ্যে ঘুমাতে যান
4. প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন ৩০ মিনিট হাঁটুন
হার্ট অ্যাটাক এখন আর বয়সের হিসাব মানে না। তবে সময় থাকতেই জীবনযাপন ঠিক করলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাসই হয়ে উঠতে পারে বড় সুরক্ষা। তাই আজ থেকেই স্বাস্থ্যকর পথেই হাঁটা শুরু করুন। কারণ হৃদয় থাকলে তবেই তো জীবন এগোয়!
Mily