ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

কুড়িগ্রামে দুর্যোগ মোকাবেলায় লাইট হাউজের কার্যক্রম 

প্রকাশিত: ১৪:১০, ২৬ জুন ২০২৫

কুড়িগ্রামে দুর্যোগ মোকাবেলায় লাইট হাউজের কার্যক্রম 

ছবি: জনকণ্ঠ

কুড়িগ্রামে দুর্যোগ মোকাবেলায় লাইট হাউজ একটি স্বেচ্ছাসেবী ও উন্নয়নমূলক বেসরকারি সংস্থার কার্যক্রম শুরু করেছে। লাইট হাউজ একটি স্বেচ্ছাসেবী ও উন্নয়নমূলক বেসরকারি সংস্থা। ১৯৯২ সালে অনুমোদন পাওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের গ্রামীণ-শহরে দরিদ্র,প্রান্তিক ও উচ্চ ঝুঁকির জনগোষ্ঠী, হিজড়া, আদিবাসী,কৃষক এবং অন্যান্য  পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে। ভূমিহীন, গৃহহীন, সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী, তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী, জলবায়ু পরিবর্তন,দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা,লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা, পথশিশু, স্কুল থেকে ঝরে পড়া শিশু এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও প্রাপ্ত বয়স্কদের উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। 


বর্তমানে লাইট হাউজ কুড়িগ্রাম জেলার ৫টি উপজেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এরমধ্যে কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট, উলিপুর, চিলমারী এবং রাজিবপুর । এসব উপজেলার মধ্যে দুর্যোগ প্রবণ ৩৫টি ইউনিয়নে স্থানীয় পর্যায় ৭০জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকদেরকে প্রশিক্ষণ, ওয়ার্কশপ,সচেতনকরন সভা, দুর্যোগ প্রবন এলাকার দারিদ্রপীরিত এবং ঝুঁকিপ্রবণ নারী,কিশোরী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে দুর্যোগকালীন সময়ে জেন্ডার সহিংসতা হ্রাসে সচেতনতামূলক জ্ঞান প্রদান করা হয়। দুর্যোগ প্রবন কুড়িগ্রামের দারিদ্রপীড়িত এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত নারী, কিশোরী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিরাপত্তাহীনতা মোকাবেলা করার জন্য মোবাইল অ্যাপ, পোস্টার,লিফলেট, ফ্লায়াস,অনলাইন প্লাটফর্মসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সচেতন করে তোলা হচ্ছে। দুর্যোগকালীন সময় বিষয়বস্তু নির্বাচন করা,নির্বাচিত বিষয়ের উপর বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে গবেষণা করা,লেখার কাঠামো, ছবি ও গ্রাফিক্স আকর্ষণীয় করার উপর স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণে তুলে ধরা হয়। 


দুর্যোগ প্রবণ এলাকার দারিদ্রপীরিত এবং ঝুঁকিপ্রবণ নারী, কিশোরী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে দুর্যোগকালীন সময়ে জেন্ডার সহিংসতা হ্রাসে সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান চালানোর অংশ হিসেবে ৯০জন স্থানীয় সাংবাদিকদের জেন্ডার সংবেদনশীল ও দুর্যোগ সম্পর্কিত বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। যুব ও কিশোরী স্বেচ্ছাসেবীদের সিটিজেন জার্নালিজম এর উপর ওরিয়েন্টেশন প্রদান। দূর্যোগ ব্যবস্থাপনার পলিসি বাস্তবায়নবিষয়ক টেলিভিশন সংলাপের আয়োজন করা। দুর্যোগকালীন সময়ের নারী,কিশোর-কিশোরী এবং প্রতিবন্ধীদের সামগ্রিক পরিস্থিতির উপর প্রতিবেদনের জন্য নির্বাচিত সাংবাদিকদের ফেলোশিপ প্রদান করা। লাইট হাউজ কর্তৃক আয়োজিত রাজধানীসহ কুড়িগ্রামে দূযোর্গকালীল সময়ে জেন্ডার সংবেদনশীল রির্পোটিং বিষয়ক জাতীয় পর্যায়ের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা বাস্তবায়ন করেছে। প্রশিক্ষণে দুর্যোগকালীন সময়ে সাংবাদিকগণ দুর্যোগের উপর সঠিক তথ্যচিত্র তুলে ধরা এবং দুর্যোগকালীন সময়ে জেন্ডার সংবেদনশীল ও সহিংসতা বিষয়ক রির্পোটিং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়।


প্রকল্পের স্বেচ্ছাসেবক রাকিবুল ইসলাম রাফি বলেন, লাইট হাউজ সংস্থার মাধ্যমে এবারই প্রথম আমি প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমি নিজে এবং দুর্যোগ প্রবণ এলাকায় আক্রান্ত পরিবারকে কীভাবে সহায়তা এবং অ্যাপস এর মাধ্যমে তথ্য পৌঁছে দেয়া যায় তা শেখানো হয়েছে। ইউনিয়নগুলোতে উঠান বৈঠক এর মাধ্যমে গ্রামের বসবাসরত নারী, কিশোরী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিরাপত্তা, মানসিক স্বাস্থ্য এবং দুর্যোগকালীন সময়ে করণীয় বিষয়ে সচেতন করে তোলা হয়। 
স্বেচ্ছাসেবী রুবাইয়া ইসলাম কুরসি বলেন, আমাদের আরও স্বেচ্ছাসেবক বাড়ানো দরকার। কেননা জেলায় অনেক প্রত্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ এলাকা রয়েছে। সেসব এলাকায় অনেকের ভালো মোবাইলও নেই। তাই এসব এলাকার প্রাইমারি, হাই স্কুল, কলেজ এবং মাদ্রাসার শিক্ষকসহ মসজিদের ঈমামদেরও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করা। এছাড়াও কুড়িগ্রাম আবহাওয়া অফিস থেকে দুর্যোগের আগাম তথ্য সংগ্রহ করে স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে আমরা আরও দুর্যোগকালীন ক্ষতি কমিয়ে আনতে সক্ষম হবো বলে মনে করি। 


লাইট হাউজ কর্তৃক আয়োজিত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কর্মশালায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান,দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের (গবেষণা ও প্রশিক্ষণ) পরিচালক যুগ্ম সচিব নাহিদ সুলতানা মল্লিক, উপসচিব সানজিদা ইয়াসমিন, কমিউনিকেশন ও মিডিয়া স্পেশালিস্ট সৈয়দ আশরাফ উল ইসলাম, কুড়িগ্রাম জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), উওম কুমার রায়, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়গণ, দৈনিক আজকালের খবর সম্পাদক ফারুক আহমেদ তালুকদার এবং লাইট হাউজের নির্বাহী প্রধান হারুন অর রশিদ প্রমুখ।
দুর্যোগব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্ধ করা সম্ভব নয়। প্রকৃতি তার নিজের খেয়ালে চলে। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ করার শক্তি যেমন মানুষের হাতে নেই তেমনি জানা নেই আত্মরক্ষার কৌশলও। তবে দুর্যোগ মোকাবিলা করার প্রস্তুতি ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে অনেক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এ জন্য গণসচেতনতা যেমন দরকার, তেমনি দরকার ঝড়-জলোচ্ছাস ও বন্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার মতো অবকাঠামো নির্মাণ, উঁচু বাঁধ তৈরি। একই সঙ্গে টেকসই দুর্যোগ মোকাবিলা অনেকটাই নির্ভর করছে আমাদের কর্মকাণ্ড ও প্রকৃতি ভিত্তিক সমাধানের ওপর কতটা জোর দিচ্ছি। 


লাইট হাউজের নির্বাহী প্রধান হারুন অর রশিদ বলেন,দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পটি কুড়িগ্রামে সফলতার সাথে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তবে প্রকল্পটি দীর্ঘমেয়াদি হলে এলাকার স্থায়ীভাবে উন্নয়ন করা সম্ভব বলে মনে করছি। তাই প্রকল্পটি চলমান রাখতে দেশি এবং বিদেশি দাতা সংস্থার কাছে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।

সাব্বির

×