
ছবি- দৈনিক জনকণ্ঠ
সময়ের তালে পাল্টে গেছে মানুষের জীবনযাত্রা, এসেছে নানা রকম পরিবর্তন। এই পরিবর্তনের ধারায় পিছনে পড়ে গেছে এক সময়কারের সবার প্রিয় টাইপ মেশিন। তথ্যপ্রযুক্তির কাছে হার মানিয়ে দিয়েছে এই মেশিনকে। আর তাই অন্যান্য জেলার মতো কুষ্টিয়ার টাইপিস্টরাও এখন বেকার সময় পার করছেন। কেউ আবার টাইপ মেশিন ছেড়ে কম্পিউটারে প্রশিক্ষণ বা নিজে নিজে চেষ্টা করে শুরু করেছেন নতুন করে।
১৮৬৬ সালে ক্রিস্টোফার শোলস্ নামে এক যন্ত্র প্রকৌশলী আবিষ্কার করেন শব্দ বোনার এই যন্ত্র। যা পরবর্তীতে বিরাট ভূমিকা রাখে মানুষের জীবন ব্যবস্থায় অনেক বড় অবদান রেখে গেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায় কুষ্টিয়া জেলা সদরে অবস্থিত জেলা প্রশাসকের দক্ষিণের দিকে পুলিশের মালখানা ঘরের বারান্দায় টেবিল ও চেয়ার নিয়ে হাতে গোনা দুই থেকে তিনজন টাইপরাইটাদের এখানো দেখা যায়। ছন্দময় শব্দে টাইপ মেশিনে ঝড় তুলে বুনে যাচ্ছেন বাংলা ও ইংরেজি শব্দের মালা। তবে বর্তমান কম্পিউটারের যুগে টাইপ মেশিনে মামলা বা মোকর্দ্দমার আরজী আর লেখা হয় না। তাই এক প্রকার বেকার হয়ে গেছেন টাইপরাইটাররা। এদিকে, জীবনের তাগিদে টাইপরাইটারদের অনেকে আবার স্বউদ্যেগে কম্পিইটার শিখে পরিবর্তন করেছেন কাজের ধরন।
টাইপ মেশিন অপারেটর জামাল বলেন পড়াশোনার পাশাপাশে তার পিতার কাছ থেকে আস্তে আস্তে হাত যান্ত্রি টাইপ মেশিন ব্যবহার করতে শিখেছেন। সে সময় বেসরকারী সংস্থাতে স্বল্প বেতনে চাকুরী করতেন। কিন্তু বেতন কম পাওয়ায় ৩৫ বছর আগে কুষ্টিয়া আদালত চত্বরে বাবার সাথে টাইপ মেশিন নিয়ে বসে পড়েন। ঐ সময় টাইপিং কাজের জন্য সিরিয়াল দেওয়া লাগতো। ফলে ভালো আয় করেছিলেন। করে দিয়েছেন ছেলে ও মেয়েদের ভবিষ্যত, গড়ে তুলেছেন শিক্ষিত। তবে আধুনিক যুগে এখন তেমন একটা কাজ নেই বলে চলে।
আরেকজন টাইপ মেশিন অপারেটর আখতার বলেন অনেক দিন ধরে টাইপিংয়ের কাজ ছেড়ে দিয়েছি। কারণ টাইপিং মেশিন নষ্ট হয়ে গেলে এখন তেমন একটা মিস্ত্রী খুঁজে পাওয়া যায় না। হয়তো বা অনেক মিস্ত্রী দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন কেউ বা আবার এ পেশা পরিবর্তন করে দিয়েছেন। তবে আধুনিক যুগে কম্পিউটার প্রশিক্ষন নিয়েছি এখন কম্পিউটারে কাজ করছি।
এ বিষয়ে একজন মহুরী বলেন আগে এই টাইপ মেশিনের অনেক কদর ছিল। কাজ করার জন্য অনেক সিরিয়াল দেওয়া লাগত। অনেক সময়ে সময়মত কাজ পেতাম না এ নিয়ে তাদের সাথে অনেক কথাকাটাটি হয়েছে। সেসব দিনের কথা এখন মনে পড়ে। তবে কাজ ভুল হলে আবারও নতুন করে করা লাগত। ছিল না কোন সংশোধনের ব্যবস্থা।
আব্দুর রউফ এ্যাডভোকেট বলেন বিশেষ করে কোর্টে মামলার প্রস্তুতির জন্য টাইপির কাজ গুরুত্ব দেওয়া হত। অসুবিধা বলতে টাইপ মেশিনে একবার কাজ হলে সেটি সংশোধনের কোন ব্যবস্থা ছিল না পুনরায় আবারও টাইপ করা করতে হতো। এতে সময় লাগত অনেক সময় ধরে। অনেক সময় অক্ষর গুলো ভালো বোঝা যেত না। বর্তমান যুগে কম্পিউটার এসে টাইপিকে আরও গতিশীল করেছে। লেখার ফন্ট অনেক ভালো স্পষ্ট বোঝায় যায়। ভুল হলে তা মুহুর্তের মধ্যে সংশোধন করে পুনরায় প্রিন্ট করা যায়। তবে কালের বিবর্তনে এই ধরনের টাইপি মেশিন আজ হারিয়ে যাওয়ার পথে। পুরোনো এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন এই আইনজীবী এবং এগুলো জোগাড় করে সংরক্ষণ করার আহবান ও টাইপ মেশিনের অপারেটরদের কোন ভাতা দেওয়া যায় কি না এ বিষয়ে সরকারের কাছে দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন তিনি।
নোভা