ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

চোখ দেখে জেনে নিন ৫ টি মারাত্মক রোগের লক্ষণ

প্রকাশিত: ০৭:৪৩, ২৬ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৭:৪৪, ২৬ জুন ২০২৫

চোখ দেখে জেনে নিন ৫ টি মারাত্মক রোগের লক্ষণ

ছবিঃ সংগৃহীত

চোখ আমাদের দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর একটি। শুধু দৃষ্টিশক্তির জন্যই নয়, শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের প্রতিফলন হিসেবেও চোখ গুরুত্বপূর্ণ। চোখের কিছু পরিবর্তন শুধু চোখের সমস্যা নয়, বরং পুষ্টিহীনতা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, এমনকি রক্তস্বল্পতারও ইঙ্গিত দিতে পারে। তাই সময়মতো চোখ পরীক্ষা করানো এবং এসব লক্ষণের প্রতি সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি। নিচে এমন ৫টি রোগ তুলে ধরা হলো যা চোখে প্রকাশ পেতে পারে এবং কীভাবে আপনি তা পরীক্ষা করবেন।

১. ডায়াবেটিস ও ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি
ডায়াবেটিসের ফলে শরীরে ইনসুলিনের ঘাটতি হয়, যা চোখের রেটিনার ক্ষুদ্র রক্তনালিগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এই অবস্থাকে বলা হয় ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি। দীর্ঘমেয়াদে এটি দৃষ্টিশক্তি নষ্ট পর্যন্ত করতে পারে।

লক্ষণ:

ঝাপসা বা পরিবর্তনশীল দৃষ্টি

চোখে কালো ছোপ বা ফাঁকা অংশ দেখা

রঙ চিনতে সমস্যা

ডায়াবেটিক রোগীদের নিয়মিত চোখের পরীক্ষা করানো উচিত। ডাক্তাররা অফথালমোস্কোপ ও OCT (Optical Coherence Tomography) বা রেটিনাল ইমেজিংয়ের মাধ্যমে রেটিনার ক্ষতি চিহ্নিত করেন।

২. উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন)
উচ্চ রক্তচাপের কারণে চোখের রেটিনার রক্তনালিগুলোর গঠন পরিবর্তিত হয়ে হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথি তৈরি হতে পারে। এটি চোখের পাশাপাশি হৃৎপিণ্ড ও কিডনির ক্ষতির পূর্বাভাসও দিতে পারে।

লক্ষণ:

ঝাপসা দৃষ্টি

চোখে ব্যথা বা মাথাব্যথা

চোখ লাল হওয়া বা ফুলে যাওয়া

চোখের রক্তনালির সংকোচন, ফোলা বা রক্তক্ষরণ দেখা গেলে তা উচ্চ রক্তচাপের ইঙ্গিত হতে পারে। অনেক সময় এসব লক্ষণ শরীরে অন্য কোনো উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগেই চোখে ধরা পড়ে।

৩. গ্লুকোমা
গ্লুকোমা হলো এমন একটি চোখের রোগ যা চোখের ভেতরে চাপ বেড়ে অপটিক নার্ভ-কে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এটি ধীরে ধীরে পাশের দৃষ্টি শক্তি কমিয়ে দেয় এবং শেষ পর্যন্ত অন্ধত্বও ঘটাতে পারে।

লক্ষণ:

পাশের দৃষ্টি শক্তি হ্রাস

আলো দেখলে চারপাশে রঙিন বলয় দেখা

চোখে ব্যথা বা লালভাব

টোনোমেট্রি নামক পরীক্ষার মাধ্যমে চোখের ভেতরের চাপ মাপা হয়। পাশাপাশি ভিজুয়াল ফিল্ড টেস্ট ও অপটিক নার্ভের ছবি নেওয়ার মাধ্যমে গ্লুকোমা শনাক্ত করা যায়। গ্লুকোমা প্রাথমিক অবস্থায় সাধারণত কোনো উপসর্গ দেয় না, তাই নিয়মিত স্ক্রিনিং প্রয়োজন।

৪. এজ-রিলেটেড ম্যাকুলার ডিজেনারেশন (AMD)
এই রোগে রেটিনার কেন্দ্রস্থল ম্যাকুলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা সূক্ষ্ম দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করে। বয়স ৪৫ বছরের পর থেকে এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে।

লক্ষণ:

সোজা লাইন বাঁকা বা বিকৃত দেখা

মাঝখানে অন্ধকার বা ঝাপসা অংশ

ছোট ছোট জিনিস দেখতে কষ্ট

অ্যামসলার গ্রিড টেস্টের মাধ্যমে এএমডি ধরা যায়। এতে লাইনগুলো বাঁকা বা হারিয়ে গেলে এটি এএমডির লক্ষণ হতে পারে। OCT ইমেজিংয়ের মাধ্যমে ম্যাকুলার অবস্থা বিশদভাবে দেখা যায়।

৫. রক্তস্বল্পতা (অ্যানিমিয়া) ও অন্যান্য রক্তের রোগ
চোখের অভ্যন্তরে কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে অ্যানিমিয়া বা রক্তের অন্যান্য সমস্যাও শনাক্ত করা যেতে পারে। চোখের পাতার ভেতরটা ফ্যাকাশে দেখানো অথবা রেটিনায় রক্তক্ষরণ অ্যানিমিয়ার ইঙ্গিত হতে পারে।

লক্ষণ:

চোখের ভিতরের অংশ ফ্যাকাশে বা হলদে

চোখ লাল বা ফোলা

রেটিনার রক্তনালিতে অস্বাভাবিকতা

চোখের পাতার অভ্যন্তর (কনজাংকটিভা) ফ্যাকাশে কিনা বা রেটিনায় রক্ত জমাট বাঁধা আছে কি না, তা দেখে ডাক্তার রক্তস্বল্পতার প্রাথমিক ধারণা পান। পরবর্তী ধাপে রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত করা হয়।

চোখ আমাদের শরীরের ভেতরের অনেক রোগের আভাস দিতে পারে। তাই শুধুমাত্র দৃষ্টিশক্তির জন্য নয়, সামগ্রিক স্বাস্থ্যের নজরদারির জন্যও চোখের নিয়মিত পরীক্ষা খুব জরুরি।

সূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া 

নোভা

×