ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৪ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২

সবসময় সরি বলে যে ৭টি ভুল আপনি করছেন!

প্রকাশিত: ১৪:২৮, ৪ মে ২০২৫

সবসময় সরি বলে যে ৭টি ভুল আপনি করছেন!

সরি বলা অনেক সময়েই উদারতা, সহানুভূতি আর নিজের ভুল স্বীকার করার চিহ্ন হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু যদি আপনি প্রায় সব কিছুতেই আগে দুঃখপ্রকাশ করে বসেন,এমনকি তখনও যখন আসলে আপনি কোনো ভুল করেননি তাহলে তা আপনার আত্মমর্যাদার ক্ষতি করতে পারে।মনোবিজ্ঞানীদের মতে, অতিরিক্তভাবে ক্ষমা চাওয়ার পেছনে থাকে কিছু সাধারণ ভুল আচরণ, যা আপনি হয়তো অজান্তেই করে চলেছেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কোন কোন ভুলে আপনি বারবার 'সরি' বলছেন, আর কীভাবে এই অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসা যায়।

১. মানুষকে খুশি রাখতে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলছেন
আপনি যদি সত্যিই কোনো ভুল করে থাকেন, তবে ক্ষমা চাওয়া নিঃসন্দেহে একটি দায়িত্বশীল কাজ। কিন্তু যদি ক্ষমা চাওয়ার কারণ হয় 'যেন কেউ কষ্ট না পায়', তাহলে আপনি নিজেকে সন্তুষ্ট করার চেয়ে অন্যকে খুশি রাখার ফাঁদে পড়ে গেছেন।
এই অভ্যাসে আপনি নিজের মতামত ও প্রয়োজনকে উপেক্ষা করে যাচ্ছেন। প্রতিটি সম্পর্কে প্রকৃত শান্তি আসে পারস্পরিক সম্মান আর সৎ আলোচনার মাধ্যমে, নিছক ‘সব ঠিক আছে’ ভান করে নয়।

'সরি' বলার আগে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন “আমি কি আসলেই ভুল করেছি?”, “এই ক্ষমা কি সত্যিই সম্পর্ক ঠিক করবে, নাকি শুধু অস্বস্তিকর মুহূর্ত এড়াতে বলছি?”

২. আপনি বিরোধ এড়াতে দুঃখপ্রকাশ করেন
তর্ক বা দ্বন্দ্ব কারোই ভালো লাগে না। কিন্তু সব কিছুতেই ক্ষমা চেয়ে নিজেকে ছোট করে দিলে আপনি সমস্যা সমাধানের সুযোগ হারিয়ে ফেলছেন।দুঃখপ্রকাশ কোনো ঝামেলা ঢেকে রাখলেও তা দূর করে না। বরং ভেতরে জমে থাকা অসন্তুষ্টি একসময় বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।
বিরোধ মানেই খারাপ কিছু নয়। বরং মতবিরোধে সম্পর্ক আরও গভীর হতে পারে। বলুন, “আমরা হয়তো ভিন্নভাবে দেখছি, একটু কথা বলা যাক?”

৩. আপনি নিজের আত্মবিশ্বাস হারাচ্ছেন
নিয়মিত 'সরি' বললে, অন্যরা আপনাকে আত্মবিশ্বাসহীন ভাবতে পারে। ধরুন, আপনি মিটিংয়ে বলেন, “সরি, আমি শুধু একটা বিষয় বলতে চাচ্ছিলাম” এতে আপনার বক্তব্য শক্তি হারায়।বলুন, “আমার একটা প্রস্তাব আছে যা সাহায্য করতে পারে।” এতে আত্মবিশ্বাস ফুটে ওঠে, সম্মান বাড়ে।

৪. আপনি অযথা নিজের উপর দোষ নিচ্ছেন
অনেক সময় অন্য কেউ আপনার পায়ে পা দিলেও আপনি বলছেন, “সরি!”  অথচ আপনি কিছুই করেননি।
এই অভ্যাস আপনাকে এমন একটি মানসিক জায়গায় নিয়ে যায়, যেখানে মনে হয় সব ভুল আপনার, এমনকি না থাকলেও। এতে অকারণে অপরাধবোধ বাড়ে এবং অন্যরা সহজেই আপনাকে দোষারোপ করতে শেখে।

“সবাই ঠিক আছেন তো?” বা “দেখি, কীভাবে পরিষ্কার করা যায়।”এমন নিরপেক্ষ কথা বলুন।

৫. আপনি নিজের আবেগকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না
কখনো কি কারও কথায় কষ্ট পেয়ে, উল্টো নিজেকে দোষ দিয়ে বলেছেন, “সরি, আমি বাড়াবাড়ি করেছি”?
এভাবে আপনি আপনার আসল অনুভূতিকে চেপে ফেলছেন। একসময় এসব জমা আবেগ মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা বিষণ্নতার রূপ নিতে পারে।বলুন, “আমি হতাশ লাগছে” বা “আপনার কথায় কষ্ট পেয়েছি।” এতে নিজেকে দোষ না দিয়েই অনুভূতির প্রকাশ হয়।

৬. আপনি নিজের উদ্বেগ আরও বাড়াচ্ছেন
‘সরি’ অনেক সময় তাৎক্ষণিক মানসিক স্বস্তি এনে দেয়। মনে হয়, কেউ রেগে যাবে না। কিন্তু এটা হয় কেবল অস্থায়ী আর পরের বার আবার সেই উদ্বেগ ফিরে আসে।
এভাবে আপনি সমস্যার সমাধান না করে শুধু চাপা দিচ্ছেন, যার ফলে উদ্বেগ আরও বাড়ে। নিজের অস্বস্তিকে মেনে নিন, প্রয়োজনে নিজের সীমানা নির্ধারণ করুন ক্ষমা চেয়ে নয়, দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করে।

৭. আপনি সমাজ নির্ধারিত ফাঁদে পড়ছেন
গবেষণায় দেখা গেছে, নারীরা পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি ক্ষমা চান। কারণ তাঁরা ছোট ছোট ব্যাপারকেও বড় ভুল ভাবেন।এই প্রবণতা থেকে অনেকেই 'ভদ্রতা' মানেই 'সরি' বলাকে ধরে নিয়েছেন। অথচ সব ভদ্রতার মানেই নিজেকে ছোট করে ক্ষমা চাওয়া নয়।

মনে রাখুন, আপনি নারী হোন বা পুরুষ ভালো ব্যবহারের মানে সবসময় দোষ স্বীকার নয়। বরং সম্মানজনকভাবে নিজের মতামত প্রকাশ করাও ভদ্রতা।অতিরিক্ত ক্ষমা চাওয়া অভ্যাস অনেক সময় মনে হয় বিনয়ী হওয়ার নমুনা। কিন্তু তা ধীরে ধীরে আপনার আত্মসম্মান, অনুভূতি আর সম্পর্কের গভীরতা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

 

সবচেয়ে বড় কথা হলো আপনি যখন বুঝতে পারবেন, আপনি অহেতুক ‘সরি’ বলছেন, তখনই পরিবর্তনের শুরু হবে। মনে রাখবেন, সত্যিকারের সহানুভূতি ও আত্মমর্যাদার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা যায় নিজের দোষ না থাকলে ‘সরি’ না বলেও।

 

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/mrxfpku3

আফরোজা

×